দিল্লি, ৫ ডিসেম্বর – ইন্ডিয়া জোটের বৈঠক আপাতত স্থগিত করা হচ্ছে বলে জানিয়ে দিল কংগ্রেস। বুধবার এই জোটের সদস্যদের নিয়ে দিল্লিতে বৈঠক হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু বিরোধী দলের শীর্ষ নেতারা এই বৈঠকে থাকতে পারবেন না জানিয়ে দেওয়ায়, আপাতত বৈঠক স্থগিত করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে সূত্রের খবর। তবে পিছু হটেও পিছু হটল না কংগ্রেস। তবে ‘ইন্ডিয়া’র শরিক দলগুলির সংসদীয় নেতাদের নিয়ে ঘরোয়া একটি বৈঠক করতে চায় কংগ্রেস। কিন্তু তা ‘ইন্ডিয়া’র নামে নয়।
তিন রাজ্যে কংগ্রেসের হার নিয়ে নানা প্রশ্ন উঠছে জোটের শরিকদের মধ্যে। আগামী লোকসভা নির্বাচনে কী উপায়ে বিজেপিকে রুখে দেওয়া যায়, সেই রণকৌশল নিয়ে কংগ্রেসের সঙ্গে শরিক দলগুলির ‘মতপার্থক্য’ প্রকাশ্যে আসে। সম্প্রতি পাঁচ রাজ্যের বিধানসভা নির্বাচনের মধ্যে চার রাজ্যে আসন ভাগাভাগি নিয়ে কংগ্রেসের সঙ্গে ‘ইন্ডিয়া’র শরিক দলগুলির অসন্তোষের পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়। বিজেপি বিরোধী ছোট দল, কংগ্রেস ভেঙে তৈরি হওয়া দল, বিজেপি বিরোধী জোট ‘ইন্ডিয়া’র শরিকদেরও ভোটের ময়দানে কোনও জায়গা দিতে চায়নি কংগ্রেস। রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞদের অনেকেই মনে করছেন, কংগ্রেসের এই মনোভাব শরিক দলগুলির সঙ্গে ‘দূরত্ব’ বাড়াচ্ছে।
যেমন, মধ্যপ্রদেশের ৬টি আসন চেয়েছিলেন ‘ইন্ডিয়া’র শরিক সমাজবাদী পার্টির প্রধান অখিলেশ। কিন্তু সূত্রের খবর, শেষ পর্যন্ত তা দিতে রাজি হননি রাহুল গান্ধিরা । পরে পাল্টা ৭১ আসনে প্রার্থী দেন অখিলেশ। শুধু মধ্যপ্রদেশ নয়, হিন্দি বলয়ের অন্য দুই রাজ্য ছত্তিশগড় এবং রাজস্থানে কংগ্রেসের ভরাডুবির ‘কারণ’ হিসাবেও উঠে এসেছে গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব, সাংগঠনিক দুর্বলতা, এবং ‘একলা চলো’ প্রবণতা।
চব্বিশের লোকসভা নির্বাচনে বিজেপির বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে বিরোধীরা এক ছাতার তলায় আসে। বিরোধী জোটের নাম দেওয়া হয় ‘ইন্ডিয়া’। জোট তৈরি হওয়ার পর কয়েকবার বৈঠকেও বসেন বিরোধীরা। নানা ইস্যুতে বিজেপি বিরোধী সুর চড়াতে শুরু করেছিলেন তাঁরা। কিন্তু ৩ রাজ্যের বিধানসভা ভোটে কংগ্রেসের শোচনীয় পরাজয়ের পর হাত শিবিরের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন জোট শরিকেরা। জোট শরিকদের সঙ্গে আসন ভাগাভাগি নিয়ে লড়াই করে কংগ্রেস যে ‘একলা চলো’-র সিদ্ধান্ত নিয়েছিল এবং সেটা যে সম্পূর্ণ ভুল ছিল, তা রাজস্থান, মধ্য প্রদেশ ও ছত্তীসগঢ়ের ভোটের ফলাফলেই স্পষ্ট। একইভাবে নির্বাচন প্রক্রিয়া চলার সময় কংগ্রেসের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে আপ ও জেডিইউ। একই সুর শোনা যায় তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের গলাতেও। আঞ্চলিক দলের সঙ্গে কংগ্রেস আসন-সমঝোতায় গেলে ফল অন্যরকম হত বলে দাবি মমতার। সবমিলিয়ে, অনেকটাই কোণঠাসা হয়ে গিয়েছে কংগ্রেস। তিন রাজ্যে কংগ্রেসের শোচনীয় হারের পরে কি এবার বিরোধী-জোটে কংগ্রেসের ধার কমছে, এমন প্রশ্ন উঠছে রাজনৈতিক মহলে। তাই পরিস্থিতি বুঝেই কংগ্রেস বৈঠক স্থগিত করে দিল বলে মনে করছে রাজনৈতিক মহল।