মস্কো, ১ ডিসেম্বর– এলজিবিটি মান্যতা দেওয়া তো দূরের কথা আন্দোলনকেই মানতে নারাজ রাশিয়া৷ তাই দেশ থেকে এলজিবিটি আন্দালনকে সমূলে উপনে ফেলতে এলজিবিটি আন্দোলনকারীদের ‘চরমপন্থী’ হিসাবে বিবেচনা করার সুপারিশ করল রুশ সুপ্রিম কোর্ট৷ বৃহস্পতিবার রুশ সুপ্রিম কোর্ট জানিয়েছে, ‘আন্তর্জাতিক এলজিবিটি সামাজিক আন্দোলন’ নিষিদ্ধ করার বিষয়ে রুশ বিচার মন্ত্রকের পক্ষ থেকে আদালতকে অনুরোধ করা হয়েছিল৷ সেই অনুরোধ সুপ্রিম কোর্ট মেনে নিয়েছে৷ গত কয়েক মাসে, রাশিয়ায় যৌন পছন্দ এবং লিঙ্গ পরিচয়ের প্রকাশের উপর প্রশাসনের মুঠি ক্রমে শক্ত হয়েছে৷ ‘অপ্রথাগত’ যৌন সম্পর্ককে নিষিদ্ধ করা হয়েছে৷ আইনি বা চিকিৎসাগতভাবে লিঙ্গ পরিবর্তনও নিষিদ্ধ করা হয়েছে৷
কিন্ত্ত, এখন আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এর পিছনে ভ্লাদিমির পুতিনের অন্য পরিকল্পনা রয়েছে৷ আগামী মার্চ মাসেই তিনি আরও ছয় বছরের মেয়াদে রাশিয়ার রাষ্ট্রপতি পদে থাকার দাবি জানাবেন৷ তার আগে তিনি নিজেকে পশ্চিমা সংস্কৃতির বিরুদ্ধে ঐতিহ্যগত নৈতিক মূল্যবোধের রক্ষক হিসেবে তুলে ধরতে চাইছেন৷ আর সেই লক্ষ্যেই এই সকল পদক্ষেপ৷ গত বছরই তিনি বলেছিলেন, ‘আমার দৃষ্টিতে পশ্চিমীরা অদ্ভুত৷ তারা কয়েক ডজন লিঙ্গ এবং সমকামীদের কুচকাওয়াজের মতো নতুন প্রবণতা গ্রহণ করতেই পারে৷ তবে, সেগুলি অন্য দেশের উপর চাপিয়ে দেওয়ার অধিকার তাদের নেই৷’
রুশ সুপ্রিম কোর্টের এই পদক্ষেপের ফলে, রাশিয়ায় সমকামী এবং ট্রান্সজেন্ডারদের প্রতি সরকারের অত্যাচার আরও বাড়বে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে৷ রাষ্ট্রপুঞ্জের মানবাধিকার পরিষদের প্রধান ভলকার তুর্ক, অবিলম্বে রাশিয়ায় মানবাধিকার কর্মীদের কাজের উপর অনুপযুক্ত বিধিনিষেধ জারি বা এলজিবিটি সম্প্রদায়ের মানুষদের প্রতি বৈষম্যকারী আইনগুলি বাতিল করার ডাক দিয়েছেন৷ তবে, তাতে কতটা কাজ হবে, তা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে৷ কারণ, এই বিষয়ে পুতিন প্রশাসনের পূর্ণ সমর্থন রয়েছে৷ আর রাশিয়ায় পুতিনই শেষ কথা৷ আদালতের সিদ্ধান্ত ঘোষণার আগেই অবশ্য ক্রেমলিনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ বলেছেন, ক্রেমলিনের এই মামলা নিয়ে আগ্রহ নেই৷ তাই এই বিষয়ে তিনি কোনও মন্তব্য করতে চান না৷
তবে, রাশিয়ার বিচার মন্ত্রকই গত ১৭ নভেম্বর এলজিবিটি আন্দোলন নিষিদ্ধ করার অনুরোধ জানিয়েছিল৷ প্রাথমিকভাবে মনে করা হয়েছিল, বহু রুশ পুরুষ যুদ্ধে যোগদান এড়াতে লিঙ্গ পরিবর্তনের পথ বেছে নিচ্ছেন বলেই, পুতিন প্রশাসন এলজিবিটি সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে দমনমূলক ব্যবস্থা নিচ্ছে৷
স্বাভাবিকভাবেই এলজিবিটি কর্মীরা এই সিদ্ধান্তে অসন্ত্তষ্ট৷ তবে, সাধারণ রুশ জনতার মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া রয়েছে৷ কেউ কেউ যেমন বলেছেন, মানুষ যাকে ইচ্ছে তাকে ভালবাসতে পারে৷ কাউকে প্রেম করতে নিষেধ করাটা অত্যন্ত বেদনাদায়ক৷ আবার অনেকেই বলেছেন, সমকামী সম্পর্ক স্বাভাবিক নয়৷ তাদের মতে, রাশিয়ার সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষই সমকামিতার প্রতি নেতিবাচক মনোভাব পোষণ করে৷
রাশিয়ায় ইতিমধ্যেই ১০০টিরও বেশি গোষ্ঠীকে ‘চরমপন্থী’ হিসাবে নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছে৷ এই তালিকায় বিভিন্ন ধর্মীয় গোষ্ঠী এবং বিরোধী রাজনৈতিক সংগঠন রয়েছে৷ এবার সেই তালিকায় এলজিবিটি আন্দোলন কর্মীরাও যুক্ত হবেন বলে মনে করা হচ্ছে৷