• facebook
  • twitter
Friday, 22 November, 2024

প্রয়াত হয়েছেন নোবেলজয়ী প্রাক্তন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী হেনরি কিসিঞ্জার

ওয়াশিংটন, ৩০ নভেম্বর – প্রয়াত হয়েছেন নোবেলজয়ী হেনরি কিসিঞ্জার। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ১০০ বছর। বিতর্কিত এই প্রাক্তন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী হেনরি কিসিঞ্জার এ বছরই মে মাসে শতবর্ষ পূর্ণ করেছিলেন। তাঁর সংস্থা কিসিঞ্জার এসোসিয়েটসের বিবৃতিতে জানানো হয় , কানেক্টিকাটে তাঁর বাড়িতেই শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন নোবেল শান্তি পুরস্কার বিজয়ী কিসিঞ্জার। মার্কিন বিদেশ নীতিতেও তাঁর অবদান অনেক । তিনিই একমাত্র মার্কিন

ওয়াশিংটন, ৩০ নভেম্বর – প্রয়াত হয়েছেন নোবেলজয়ী হেনরি কিসিঞ্জার। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ১০০ বছর। বিতর্কিত এই প্রাক্তন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী হেনরি কিসিঞ্জার এ বছরই মে মাসে শতবর্ষ পূর্ণ করেছিলেন। তাঁর সংস্থা কিসিঞ্জার এসোসিয়েটসের বিবৃতিতে জানানো হয় , কানেক্টিকাটে তাঁর বাড়িতেই শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন নোবেল শান্তি পুরস্কার বিজয়ী কিসিঞ্জার। মার্কিন বিদেশ নীতিতেও তাঁর অবদান অনেক । তিনিই একমাত্র মার্কিন কূটনীতিক, যিনি দুই প্রেসিডেন্টের অধীনে কাজ করেছেন। 

হেনরি কিসিঞ্জারই একমাত্র কূটনীতিবিদ যিনি প্রেসিডেন্ট রিচার্ড নিক্সন ও প্রেসিডেন্ট জেরাল্ড ফোর্ডের সময়কালে মার্কিন বিদেশনীতির রূপকার ছিলেন। একইসঙ্গে তিনিই একমাত্র ব্যক্তি, যিনি একই সময়কালে হোয়াইট হাউসের স্টেট সেক্রেটারি ও ন্যাশনাল সিকিউরিটি অ্যাডভাইসর ছিলেন। যদিও মার্কিন প্রেসিডেন্ট রিচার্ড নিক্সনের প্রশাসনে প্রথমে জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা এবং পরে বিদেশমন্ত্রী হিসাবে তাঁর নেতিবাচক ভূমিকা একটা সময় গোটা বিশ্বে নিন্দিত হয়েছে। আবার একজন দক্ষ কূটনীতিক হিসাবে প্রশংসাও পেয়েছেন। একদিকে, ভিয়েতনাম যুদ্ধের অবসানে প্যারিস শান্তি চুক্তি বাস্তবায়নে ইতিবাচক ভূমিকা নেন, অন্যদিকে, কাম্বোডিয়ায় বোমা ফেলা, চিলিতে নির্বাচিত সরকারের পতনে তাঁর ভূমিকা গোপন থাকেনি।

অন্যদিকে, ভারতীয় উপমহাদেশের বহু মানুষের চোখেই তিনি একজন খলনায়ক। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের দিনগুলিকে মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রী কিসিঞ্জার খোলাখুলি ভারতের বিরোধিতা এবং পাকিস্তানের পক্ষ নিয়েছিলেন। বাংলাদেশকে নতুন রাষ্ট্র হিসাবে স্বীকৃতি, পাকিস্তানের জেলে বন্দি শেখ মুজিবুর রহমানের মুক্তি এবং পাকিস্তানকে গণহত্যা থেকে বিরত করার দাবি নিয়ে বিশ্বের নানা দেশের পাশাপাশি সে সময় একাধিকবার আমেরিকা সফরে যান ভারতের প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধি । একাধিক চিঠিও লেখেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট নিক্সনকে। কূটনৈতিক সূত্রে পরে জানা যায়, একটি বৈঠকে ইন্দিরার সঙ্গে তুমুল বিবাদ হয় মার্কিন প্রেসিডেন্টের। নিক্সনের মুখের উপর জবাব দিয়ে বৈঠক ছেড়ে বেরিয়ে আসেন ইন্দিরা।

শান্তির জন্য নোবেল পুরস্কার পেলেও, তাঁকে ঘিরে একাধিক বিতর্ক ছিল। ভিয়েতনামে মার্কিন নীতিতে মানবাধিকারকে গুরুত্ব না দেওয়াকে ঘিরে সমালোচিত হয়েছিলেন কিসিংগার। ১৯৬৯ সালে কম্বোডিয়ায় সিক্রেট বম্বিং ও পরবর্তী বছরে মার্কিন অভ্যুত্থানের পিছনে তিনিই ছিলেন।

জার্মানিতে জন্মগ্রহণ করলেও, ১৯৩৮ সালে তাঁর পরিবার আমেরিকায় চলে আসে। ১৯৪৩ সালে তিনি মার্কিন নাগরিকত্ব পান। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় তিনি ইউরোপীয় সেনার সদস্য হয়ে লড়েছিলেন। এরপর হাভার্ড বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতকোত্তর ও ডক্টরেট ডিগ্রি অর্জন করেন। দীর্ঘ ১৭ বছর ধরে তিনি হাভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করেছেন।

২০১৯-এ দিল্লি সফরেও এসেছিলেন সাবেক এই মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি তাঁকে বাসভবনে আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন। কিসিঞ্জারের সঙ্গে অন্তরঙ্গ মুহূর্তের ছবি টুইট করে মোদি লিখেছিলেন, ‘হেনরি কিসিঞ্জারের সঙ্গে দেখা হওয়ায় আনন্দ বোধ করছি। আন্তর্জাতিক রাজনীতি ও কূটনীতিতে তিনি একজন পথিকৃত ’ .

মোদি-কিসিঞ্জার সেই বৈঠক নিয়ে তখন শোরগোল ওঠে । অনেকেই প্রশ্ন তোলেন, প্রাক্তন এই মার্কিন কর্তার ভারত সম্পর্কে অবস্থানের কথা কি বর্তমান প্রধানমন্ত্রীকে তাঁর অফিসাররা মনে করিয়ে দেননি? কিসিঞ্জার সেই সময় ভারতে এসেছিলেন জেপি মর্গ্যান ইন্টারন্যাশনাল কাউন্সিলের বৈঠকে যোগ দিতে।

জানা যায়, ৩৫ বছর আগে হেনরি কিসিংগার চিন সফর করেছিলেন। সে সময় ভারতের সঙ্গে তৎকালীন সোভিয়েত রাশিয়ার সম্পর্ক অত্যন্ত গভীর ছিল। সে সময়ই ইন্দিরা গান্ধী এবং ভারত সম্পর্কে এই ধরণের কটুক্তি করা হয়েছিল বলে লিক হওয়া টেপ থেকে জানা যায়। তবে ড্যামেজ কন্ট্রোলের চেষ্টা করলেও হেনরি কিসিংগারের রাজনৈতিক জীবনের ইতিহাসে এই ঘটনা উল্লেখ করা থাকবে।

ঠান্ডা যুদ্ধের সময় বিশ্ব কার্যত দু’ভাগে বিভক্ত হয়ে যায়। প্রথম বিশ্বের দেশগুলি ছিল আমেরিকাপন্থী। দ্বিতীয় বিশ্ব তৈরি হয় USSR-এর নেতৃত্বে। তৃতীয় বিশ্বের উপর নজর ছিল দুই পক্ষেরই। ভারতীয় উপমহাদেশে সোভিয়েত রাশিয়ার প্রভাব কমাতে তৎপর ছিল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। USSR-এর সঙ্গে ভারতের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক না পসন্দ ছিল আমেরিকার। ফলে ইন্দিরা গান্ধীর সরকার হয়ে ওঠে তাদের চক্ষুশূল। এ মত অবস্থায় ১৯৭১-এর বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানের সমর্থনেই ছিল হেনরি কিসিংগারের দেশ।

কিসিঞ্জারের মৃত্যুর কারণ জানায়নি তাঁর প্রতিষ্ঠান। শতবর্ষে পৌঁছেও যথেষ্ট কর্মক্ষম ছিলেন। কয়েক মাস আগে চিন সফরে যান। আমেরিকায় চিরশত্রু বলে পরিচিত চিন কিসিঞ্জারকে বরাবর বেজিংয়ের বন্ধু মনে করে।