গঞ্জাম, ২৪ নভেম্বর – ঘরের মধ্যে স্ত্রী ও কন্যাসন্তানের গায়ে বিষাক্ত সাপ ছেড়ে দিলেন এক ব্যক্তি। বিষাক্ত সেই গোখরো সাপের ছোবলে মৃত্যু হল মহিলা ও তাঁর ২ বছরের শিশু কন্যার। মহিলার স্বামী গণেশ পানকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। মর্মান্তিক এই ঘটনা ঘটেছে ওড়িশার গঞ্জাম জেলার আধেইবার গ্রামে। অভিযুক্ত প্রথমে একটানা অস্বীকার করে এলেও পরে পুলিশের জেরার মুখে স্বীকার করে নেয় যে, স্ত্রী ও সন্তান যখন ঘুমিয়ে ছিল সেই সময় সে বিষাক্ত সাপ ছেড়ে দেয়। সেই সাপের কামড়ে দুজনেই মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন। গত ৭ অক্টোবর ঘর থেকে তাঁর স্ত্রী বাসন্তী এবং কন্যা দেবস্মিতার দেহ উদ্ধার হয়। ঘর থেকে গোখরো সাপটিও উদ্ধার হয়। এই ঘটনার পর শ্বশুরবাড়ি এবং গ্রামবাসীদের কাছে গণেশ দাবি করেন যে, গোখরোর ছোবলেই মৃত্যু হয়েছে তাঁর স্ত্রী এবং সন্তানের। অস্বাভাবিক মৃত্যুর মামলা দায়ের হয়।
জানা গেছে, গত ৭ অক্টোবর ঘটনাটি ঘটে ওড়িশার গঞ্জাম জেলার কবি সূর্যনগর থানা এলাকার একটি গ্রামে। অভিযুক্ত গণেশের বয়স ২৫ বছর। গঞ্জামের পুলিশ সুপার জগমোহন মীনা জানিয়েছেন, ২০২০ সালে বিয়ে হয় গণেশ ও বাসন্তীর। পরে তাদের একটি কন্যা সন্তান হয়। বিয়ের যৌতুক নিয়ে প্রায় দম্পতির মধ্যে কলহ লেগেই থাকত। গত বছর থেকে তাদের অশান্তি চরমে ওঠে । সেই অশান্তি থেকে মুক্তি পেতে স্ত্রীকে খুন করার ষড়যন্ত্র করেছিলেন ওই ব্যক্তি। এ নিয়ে পুলিশের কাছে বাসন্তী একটি অভিযোগও দায়ের করেছিলেন বলে জানিয়েছেন তিনি। গঞ্জামের পুলিশ সুপার আরও জানিয়েছেন যে গত তিন মাস আগে দম্পতির মধ্যে সম্পর্কের উন্নতি হয়। এই সময় ধৃত গণেশ স্ত্রী ও কন্যাকে খুন করার পরিকল্পনা নেয় বলে তাঁর অনুমান। জগমোহন মীনা জানিয়েছেন, গণেশ জানতে পেরেছিল সাপে কামড়ে মৃত্যু হলে সরকারের পক্ষ থেকে ৪ লাখ টাকা করে ক্ষতিপূরণ পাওয়া যায়। এই টাকার লোভে খুনের ছক কষে। এর মধ্যে বিভিন্ন সময় গণেশ বাসন্তীকে থানায় দায়ের করা অভিযোগ তুলে নেওয়ার জন্য চাপ দিতে শুরু করে। এমনকি বাসন্তী এবং কন্যাকে খুনের হুমকিও দেয়।
গণেশ এমন ভাবে খুনের পরিকল্পনা করেন যে, সেটি যেন স্বাভাবিক মৃত্যু মনে হয়। আর তার জন্য বেছে নিয়েছিলেন একটি গোখরোকে। স্থানীয় এক সাপ সংগ্রহকারীর সঙ্গে যোগাযোগ করেছিল সে। শিব মন্দিরের পুজোর জন্য বিষাক্ত সাপের প্রয়োজন আছে বলে ধৃত সাপ সংগ্রহকারীকে জানিয়েছিল। গত ৬ অক্টোবর বসন্ত একটি কোবরা জাতীর বিষাক্ত সাপ প্লাস্টিকে মুড়িয়ে গণেশকে দেয়। অভিযুক্ত প্লাস্টিক মোড়ানো সাপটি নিয়ে এসে ঘরের এক স্থানে লুকিয়ে রেখেছিল। ঘটনার দিন দুপুরে ঘরে শুয়ে ছিল গণেশের স্ত্রী বাসন্তী এবং তার ২ বছরে শিশু সন্তান। অন্য ঘরে ঘুমিয়েছিল গণেশ। এই সময় যে ঘরে স্ত্রী ও কন্যা ঘুমিয়েছিল, সেই ঘরে সাপটি ছেড়ে দেয় এবং ঘরের দরজা বন্ধ করে দেয়।
বিষাক্ত সাপের কামড়ে চিৎকার করে ওঠে বাসন্তী ও তার সন্তান। চিৎকার শুনে ছুটে আসেন বাসন্তীর বাবা ও প্রতিবেশীরা। সঙ্গে সঙ্গে তাদের নিয়ে যাওয়া হয় স্থানীয় একটি হাসপাতালে। সেখানে তাদের মৃত্যু হয়। সাপের কামড়েই মৃত্যু হয়েছে বলে ময়নাতদন্তের রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়েছিল।
কিন্তু কন্যা এবং নাতনির মৃত্যুতে সন্দেহ প্রকাশ করেন বাসন্তীর বাপের বাড়ির লোকজন। বাসন্তীর বাবা জামাইয়ের বিরুদ্ধে কন্যা এবং নাতনিকে খুনের অভিযোগ দায়ের করেন ঘটনার পাঁচদিন পর। বাসন্তীর বাবার অভিযোগের ভিত্তিতে তদন্তে নামে পুলিশ। গঞ্জামের পুলিশ সুপার জগমোহন মীণা জানিয়েছেন, গণেশকে আটক করে জেরা শুরু হয়। বার বারই তিনি দাবি করেছিলেন, সাপের ছোবলে মৃত্যু হয়েছে স্ত্রী-সন্তানের। এই ঘটনায় তাঁর কোনও হাত নেই। কিন্তু বার বার জেরার মুখে পড়ে শেষমেশ নিজের পরিকল্পনার কথা পুলিশকে জানান গণেশ।
এরপর, বাসন্তীর বাবার অভিযোগের ভিত্তিতে এবং উপযুক্ত প্রমাণ সংগ্রহ করে ২৩ নভেম্বর গণেশকে গ্রেফতার করে পুলিশ। সাপ দিয়ে মারার পরিকল্পনা জেরায় গণেশ স্বীকার করেছে বলেও দাবি করেছেন তদন্তকারীরা।