বেঙ্গালুরু, ১৪ নভেম্বর – সরকারি চাকরির পরীক্ষায় পরীক্ষাকেন্দ্রে কারচুপি ঠেকাতে হিজাব নিষিদ্ধ করল কর্নাটক৷ তবে শুধুমাত্র হিজাবই নয়, টুপি বা মাথায় আবরণ দেওয়া অন্য পোশাক পরেও পরীক্ষাকেন্দ্রে প্রবেশ করা যাবে না৷ পরা যাবে না কোনও অলঙ্কারও৷ এককথায় মাথা, মুখ, কান ঢেকে বসা যাবে না পরীক্ষাকেন্দ্রে৷ তবে মহিলারা পরীক্ষাকেন্দ্রে মঙ্গলসূত্র ও পায়ের আংটি পরতে পারেন ৷ কর্নাটকে সরকারি চাকরির পরীক্ষার জন্য এই নির্দেশিকা জারি করা হয়েছে৷ প্রসঙ্গত, ক্লাসরুমে হিজাব পরা নিষিদ্ধ করেছিল কর্নাটক৷ সেই নিয়ে বিক্ষোভ শুরু হয় গোটা দেশ জুড়ে৷ ইতিমধ্যেই জারি হয়েছে এই সংক্রান্ত একটি বিজ্ঞপ্তি৷
চলতি মাসের ১৮ ও ১৯ তারিখ কর্নাটকে চলবে বিভিন্ন পর্ষদ ও পুরসভায় নিয়োগের পরীক্ষা, যা নিয়ন্ত্রণ করবে কর্নাটক একজামিনেশন অথরিটি বা কেইএ৷ তার আগে সংস্থার তরফে সোমবার পরীক্ষা সংক্রান্ত বিজ্ঞপ্তি জারি করা হয়৷ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে চাকরিপ্রার্থীরা মাথা, মুখ ও কান ঢাকা কোনও পোশাক পরতে পারবেন না৷ পাশাপাশি, হলে টুপি ব্যবহারেও নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে৷
কেইএ-র তরফে বলা হয়েছে, চাকরির পরীক্ষায় অনেকেই অসত উপায় অবলম্বন করছেন৷ উন্নত প্রযুক্তির ব্ল-ুটুথ ইয়ারফোন নিয়ে পরীক্ষা দিচ্ছেন তাঁরা৷ এর মাধ্যমে বাইরে থেকে যাবতীয় প্রশ্নের জবাব জানতে পারছেন এই অসাধু চাকরিপ্রার্থীরা৷ অপরাধ গোপন করতে মুখ, কান ও মাথা ঢেকে রাখছেন তাঁরা৷ এই পরিস্থিতিতে নিয়োগ প্রক্রিয়া স্বচ্ছ রাখতে পোশাক বিধি চালু করছে নিয়োগ সংস্থা৷
কেইএ-র এক্সিকিউটিভ ডিরেক্টর এস রম্যা জানান, গত বছর বেশ কিছু চাকরিপ্রার্থী হলে ব্ল-ুটুথ দেওয়া ইয়ারফোন ব্যবহার করেছিলেন৷ তাঁদের কয়েকজনকে ধরাও হয়৷ নিয়োগ প্রক্রিয়া স্বচ্ছ রাখতে আমরা বদ্ধপরিকর৷ তাই পোশাক বিধি চালু করতে বাধ্য হয়েছি৷’
২০২৩-র অক্টোবরে কালবর্গি ও ইয়াদগির পরীক্ষা কেন্দ্রে প্রযুক্তি ব্যবহার করে কারচুপির অভিযোগ ওঠে৷ সেই ঘটনায় সিআইডি তদন্তের নির্দেশ দেয় কর্নাটক সরকার৷ যার জেরে প্রবল অস্বস্তির মুখে পডে়ন কেইএ-র কর্তা-ব্যক্তিরা৷
সরকারি চাকরির পরীক্ষা দেওয়ার সময়ে কোনও পোশাকবিধি ছিল না কর্নাটকে৷ অক্টোবর মাসে আয়োজিত পরীক্ষাগুলোতেও হিজাব পরেই পরীক্ষাকেন্দ্রে ঢুকতে পারতেন পরীক্ষার্থীরা৷ কিন্ত্ত নভেম্বর মাস থেকে হিজাব-সহ অন্যান্য বেশ কিছু পোশাকে নিষেধাজ্ঞা জারি হয়েছে৷ এতদিন পর্যন্ত পরীক্ষাকেন্দ্রে গয়না পরে ঢোকা নিষিদ্ধ ছিল কর্নাটকে৷ তবে হিন্দুত্ববাদী সংগঠনগুলোর প্রতিবাদে মহিলাদের মঙ্গলসূত্র ও পায়ের আংটি পরার অনুমতি দেওয়া হয়েছে৷ এছাড়াও হাই হিল, জিন্স-টিশার্ট পরতে পারবেন না মহিলারা৷ কেবল হাফ শার্ট ও প্যান্ট পরতে হবে পুরুষদের, কিন্ত্ত শার্ট গুঁজে পরতে পারবেন না৷
উল্লেখ্য, এই বিজ্ঞপ্তির জেরে মুসলিম মহিলা চাকরিপ্রার্থীদের মধ্যে বিভ্রান্তির সৃষ্টি হয়েছে ৷ বিজ্ঞপ্তিতে কোথাও হিজাব শব্দটি স্পষ্ট করে উল্লেখ নেই৷ হিজাব এমন একটি পোশাক যা মহিলাদের মাথা ও কান ঢেকে রাখে৷ ফলে এটি পরে পরীক্ষার হলে ঢোকা যাবে কিনা তা নিয়ে উঠেছে প্রশ্ন৷
প্রসঙ্গত, আগে এই ধরনের সরকারি চাকরির পরীক্ষায় হিজাব পরিহিতাদের অনেক আগে হলে যেতে হত৷ সেখানে তাঁদের ভালোভাবে পরীক্ষা করতেন মহিলা নিরাপত্তারক্ষীরা৷ নিশ্চিত হওয়ার পরই হলে প্রবেশের অনুমতি পেতেন তাঁরা৷ এবার পোশাক বিধি থাকায় হিজাবের বিষয়টি স্পষ্ট করুক কেইএ, এমনটাই চাইছেন মহিলা চাকরিপ্রার্থীরা৷