ভোপাল, ১০ নভেম্বর– ২০১৮-এর ডিসেম্বর থেকে ২০২০-র মার্চ, এই ১৫ মাস মসনদে ছিলেন কমল নাথের কংগ্রেস সরকার৷ রাজনীতির স্বাভাবিক নিয়মেই রাজ্যজুডে় এখন প্রবল প্রতিষ্ঠান বিরোধিতার ঝড় বইছে৷ ভোট যত কাছে আসছে, শিবরাজ সরকারের পতনের পদধ্বনি ততই স্পষ্ট হচ্ছে৷ ভোট পূর্ববর্তী জনমত সমীক্ষাতেও তেমনটাই ইঙ্গিত৷
বিজেপি বিরোধী ইন্ডিয়া জোটের দুই অন্যতম শরিক, ঘোর বিজেপি বিরোধী অখিলেশপ্রতাপ সিংয়ের সমাজবাদী পার্টি ও অরবিন্দ কেজরিওয়ালের আম আদমি পার্টির কাজকর্ম ‘ইন্ডিয়া’-র আগামী সময়ের বিপদবার্তার সঙ্কেত দিচ্ছে৷ ঘরের ভিতরকার কোন্দল আর বাইরের প্রতিষ্ঠান বিরোধী হাওয়ায় গেরুয়া শিবির যখন জেরবার, তখন ২৩০ আসন বিশিষ্ট মধ্যপ্রদেশ বিধানসভায় অখিলেশের সমাজবাদী পার্টি ২২৮ আসনে প্রার্থী দিয়ে বসে আছে৷
কেজরিওয়ালের আম আদমি পার্টি প্রার্থী দিয়েছে ৭০ আসনে৷ এবং আছে কুমারী মায়াবতীর বিএসপিও৷ তারা প্রার্থী দিয়েছে আপের দ্বিগুণ, ১৪৪ আসনে৷ তাও আবার তিন দলই প্রার্থী দিয়েছে বিশেষ করে কংগ্রেসের শক্ত ঘাঁটি বলে পরিচিত গোয়ালিয়র ও চম্বলে৷ সঙ্গে মেহগাঁও, টিমনি, মুরেনা, ভিতখার জেলায় প্রায় প্রত্যেক আসনে৷ এছাড়াও উত্তরপ্রদেশ লাগোয়া ভিন্ড জেলা, যেখানে বিএসপি ও এসপির প্রভাব রয়েছে, সেখানে প্রার্থীদের জেতাতে প্রতিদিনই ঘাম ঝরাচ্ছেন অখিলেশ ও মায়াবতী৷ এই রাজ্যে খাতা খুলতে মরিয়া কেজরিওয়ালও৷ পাঞ্জাবের মুখ্যমন্ত্রী ভগমন্ত সিং মানকে কার্যত বগলদাবা করে দৌডে় বেড়াচ্ছেন দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী৷
মধ্যপ্রদেশের উত্তর অংশ মূলত কৃষিনির্ভর৷ এবার সেখানে কার্যত খরা পরিস্থিতি তৈরি হওয়ায় ভোট প্রচারে কংগ্রেস ও বিজেপিকে একযোগে কাঠগড়ায় তুলেছে এসপি ও বিএসপি, দু’পক্ষই৷ স্বাভাবিকভাবেই বিষয়টি ভালভাবে নেয়নি কংগ্রেস৷ ভোট প্রচারের সময় খুল্লামখুল্লা ‘ভোট কাটুয়া’ বলে কটাক্ষ করে অখিলেশ ও মায়াবতীকে এক হাত নিচ্ছেন কংগ্রেসের মুখ্যমন্ত্রী পদপ্রার্থী কমলনাথ৷ তাঁর অভিযোগ, রাজ্যে ওঠা প্রবল সরকার বিরোধী হাওয়াকে ব্যার্থ করে গেরুয়া শিবিরকে ফের ক্ষমতায় ফেরার রসদ জোগান দিচ্ছেন অখিলেশ যাদব, মায়াবতী, কেজরিওয়ালরা৷
তবে নিজেদের পক্ষে পালটা যুক্তিও যথেষ্ট জোরালো অখিলেশদের৷ ২০১৮ সালে বিধানসভা ভোটে ১১৩টি আসন জেতা কংগ্রেসকে সমর্থন জানিয়েছিল মায়াবতীর বিএসপি দলের দু’জন ও অখিলেশের এসপি-র এক বিধায়ক৷ সেই সমর্থনের জোরে সরকার গডে় মুখ্যমন্ত্রী হন কমলনাথ৷ কিন্ত্ত সিন্ধিয়া রাজপুরুষ রাহুল গান্ধীর অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ জ্যোতিরাদিত্য সিন্ধিয়ার বিদ্রোহে সেই সরকার ১৫ মাসের বেশি স্থায়ী হয়নি৷ সেসময় সিন্ধিয়ার ঘনিষ্ঠ বিধায়করা দলত্যাগ করে গেরুয়া শিবিরে নাম লেখানোয় কমল নাথ সরকারের পতন হয়৷এবারও ভোট ঘোষণার আগেই কংগ্রেসের দিকে জোটের হাত বাডি়য়ে দিয়েছিলেন অখিলেশ৷ হাইকম্যান্ড সেই জোট প্রস্তাবে উৎসাহী হলেও কমল নাথের চাপে শেষপর্যন্ত পিছিয়ে যায়৷ তাঁর বাড়ানো হাত প্রত্যাখ্যান করে জোট না হওয়ার কথা রাহুল গান্ধি ঘোষণা করার পরই প্রার্থী দেওয়ার সিদ্ধান্ত জানিয়ে দেন অখিলেশ৷