প্রসঙ্গত , মঙ্গলবার সকালে এক্স হ্যান্ডলে তৃণমূল সাংসদ মহুয়া মৈত্র একটি পোস্টে ফোন হ্যাকিংয়ের অভিযোগ করেন। তিনি লেখেন, অ্যাপল তাঁকে একটি সতর্কবার্তা দিয়ে জানিয়েছে, তাঁর আইফোন হ্যাক করার চেষ্টা করা হয়েছে। এক্স হ্যান্ডলে সেই সতর্কবার্তার একটি স্ক্রিনশট শেয়ার করে মহুয়া লেখেন, প্রিয়ঙ্কা চতুর্বেদী-সহ বিরোধী জোট ‘ইন্ডিয়া’র মোট চার জন সদস্য অ্যাপলের এই সতর্কবার্তা পেয়েছেন। পরে আরও একটি পোস্টে কাদের ফোন হ্যাক হয়েছে তাঁদেরও নাম জানান মহুয়া। প্রিয়ঙ্কা ছাড়াও শশী থারুর, রাঘব চড্ডা, অখিলেশ যাদব, সীতারাম ইয়েচুরি এবং পবন খেরাও অ্যাপলের সতর্কবার্তা পেয়েছেন বলে জানান মহুয়া। এর পরে একই রকম একটি পোস্ট করে কংগ্রেস সাংসদ শশী থারুর লেখেন, তিনি অ্যাপল থেকে এমন সতর্কবার্তা পেয়েছেন। শুধু তা-ই নয়, যে অ্যাপল আইডি থেকে তাঁকে ই-মেল পাঠানো হয়েছিল, তার সত্যতা যাচাই করেছেন থারুর। সেই মেলের স্ক্রিনশট পোস্ট করে কেন্দ্রকে কটাক্ষ করে শশী মন্তব্য করেন, ‘‘সরকারের বেকার কর্মচারীদের আমার মতো করদাতার জন্য ব্যস্ত রাখতে পেরে ভাল লাগছে।’’ তবে একই সঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর দফতরের কাছে ওই পোস্টে তিনি জানতে চান, ‘‘এর চেয়ে জরুরি আর কোনও কাজ নেই?’’
তৃণমূল সাংসদ মহুয়া মৈত্রের পর একই অভিযোগ শোনা যায় বিরোধী দলের অন্যান্য নেতাদের মুখে। মঙ্গলবার আরও কয়েকজন বিরোধী নেতা দাবি করেছেন , তাঁরাও অ্যাপলের তরফ থেকে তাঁদের আইফোনে একই ধরণের সতর্কীকরণ বার্তা পেয়েছেন। এই বার্তাতেও বলা হয়েছে, ‘রাষ্ট্র দ্বারা পরিচালিত আক্রমণকারীরা ‘ তাঁদের আইফোনকে নিশানা করছে। তাঁরাও নিজেদের এক্স হ্যান্ডেলে অ্যাপলের বার্তার স্ক্রিনশট পোস্ট করেন অনেকেই।
তৃণমূল সাংসদ মহুয়া মৈত্র ছাড়াও শিবসেনা সাংসদ প্রিয়াঙ্কা চতুর্বেদী, আম আদমি পার্টির রাঘব চাড্ডা, কংগ্রেসের শশী থারুর, কেসি বেণুগোপাল , পবন খেরা এক্স হ্যান্ডেলে অ্যাপলের বার্তা শেয়ার করেন। সিপিআইএম-এর সাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরিও একই ধরণের বার্তা পেয়েছেন বলে দলীয় সূত্রে জানা যায়।
রাহুল গান্ধি বলেন, আদানীদের বাঁচাতে বিভ্রান্তিকর রাজনীতি করছে কেন্দ্র। এই নিয়ে সাংবাদিক সম্মেলনে রাহুল গান্ধি বলেন, ‘ আপনি যত খুশি আমাদের ফোন ট্যাপ করতে পারেন, আমি পাত্তা দিই না। আমরা ভয় পাই না। আপনি যদি আমার ফোন নিতে চান তও আমি দিয়ে দেব।’ রাহুল এদিন আরও বলেন, দেশের শ্রেণীবিন্যাসে প্রথম স্থানে রয়েছেন আদানি, দ্বিতীয় স্থানে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি, এবং তৃতীয় স্থানে অমিত শাহ।’
রাহুল বললেন, ‘‘আদানির হাতে দেশের সমস্ত জাহাজ বন্দর তুলে দিয়েছেন, সমস্ত বিমানবন্দর তুলে দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী মোদি । দেশের খাবারের মূল উৎস যে কৃষিক্ষেত্র, তার আইনও বানিয়ে দেওয়া হয়েছে আদানির সুবিধা করে দিতে। পরিকাঠামো জনিত ব্যবসা তাঁর হাতে। আপনি রাস্তা দিয়ে হাঁটবেন সেই রাস্তা তৈরির সিমেন্টও আদানির হাতে। পুরো দেশটাই আদানির মতো তিন চার জনের হাতে তুলে দিচ্ছেন মোদি।’’
রাহুল বলেন, বিরোধীদের নজর ঘোরাতেই এই সতর্কবার্তা। রাহুল সাংবাদিক বৈঠকে পড়ে শোনান অ্যাপলের সতর্কবার্তার বয়ান, তাতে লেখা হয়েছে— ‘‘অ্যাপল মনে করে, আপনারা রাষ্ট্র পরিচালিত হ্যাকারদের দ্বারা আক্রান্ত। যারা আপনার অ্যাপল আইডি দিয়ে নথিভুক্ত আইফোনের সুরক্ষা নষ্ট করার চেষ্টা করছে।’’ ওই বয়ান পড়ার পর রাহুল বলেন, ‘‘এটা তোতার কাজ’’। তিনি এদিন মোদির প্রাণ আদানি তোতায় সমর্পিত, এমন দাবি করে বলেন, ‘‘এই তোতাপাখিকে আমরা এমন ভাবে ঘিরে ধরেছি যে আর সে পালানোর পথ পাচ্ছে না। আর সেই জন্যই বিরোধীদের দৃষ্টি ঘোরানোর চেষ্টা হচ্ছে। যাতে খাঁচায় বন্দি তোতার দিকে তাদের নজর না যায়।’’
রাহুল বললেন, বিরোধী জোট ‘ইন্ডিয়া’র যাঁরা অ্যাপলের তরফে ওই বার্তা পেয়েছেন, তাঁরা প্রত্যেকেই কোনও না কোনও ভাবে আদানি সংক্রান্ত আক্রমণের সঙ্গে যুক্ত। তালিকায় মহুয়া মৈত্রের বলা নামের পাশাপাশি সুপ্রিয়া সুলে, টিএস সিংহ-এর নামও করেন রাহুল।
রাহুল আরও বলেন, ‘‘এই সমস্ত ফোন হ্যাকিংয়ের চেষ্টা, ইডি-সিবিআই দিয়ে ভয় দেখানোর কারণ আসলে আদানি। কারণ মোদির প্রাণভোমরা আদানি। কারণ বিরোধীরা এখন সঠিক জায়গায় তির তাক করছে। দেশের রাজনীতির গোপন সত্য বুঝতে পেরেছে বিরোধীরা। রাজার তোতাকে ছোঁয়া হয়েছে। আর তার জন্যই এই হ্যাকিং, আড়ি পাতা আর ইডি-সিবিআই দিয়ে ভয় দেখানোর চেষ্টা।’’
রাজা এবং তোতাপাখির গল্প শুনিয়ে রাহুল বললেন, বিরোধীরা এত দিন ভুল নিশানায় আক্রমণ করছিলেন। তাঁরা ‘রাজা’ অর্থাৎ নরেন্দ্র মোদিকে আক্রমণ করছিলেন। কিন্তু রাহুলের বক্তব্য, ‘‘রাজা তো রাজা নন। তাঁর হাতে ক্ষমতাই নেই। তাঁর ক্ষমতা রয়েছে আদানির মধ্যে। সেইখানে আক্রমণ করতেই বিপদঘন্টা বেজে উঠেছে। তাই এই সমস্ত করে নজর ঘোরানোর চেষ্টা করা হচ্ছে।’’
বিরোধী দলের নেতারাও এ প্রসঙ্গে কেন্দ্রীয় সরকারকে নিশানা করে কড়া ভাষায় আক্রমণ করেন। মহুয়া মৈত্রের পোস্টের জবাবে প্রিয়াঙ্কা লেখেন, ” শুধু আমি নই, মহুয়া মৈত্রও অ্যাপলের কাছ থেকে এই সতর্ক বার্তা পেয়েছেন। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রক কি তদন্ত করবে ?
আম আদমি পার্টির রাজ্যসভার সাংসদ রাঘব চাড্ডা তাঁর পোস্টে একই অভিযোগ করে লেখেন, অ্যাপলের কাছ থেকে একটি উদ্বেগজনক বিজ্ঞপ্তি পেয়েছেন যা তাঁকে হ্যাকারের আক্রমণ নিয়ে সতর্ক করেছে।
এই বিষয়ে বিজেপি নেতা অমিত মালব্য তাঁর এক্স হ্যান্ডেলে পোস্ট করে লিখেছেন, ‘ সাধারণ সন্দেহভাজনরা ” রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষক ” আক্রমণ নিয়ে ঝড় তুলেছেন এবং শহীদ হওয়ার ভান করছেন, খুবই ভাল, তবে এই হৈচৈ অতীতের মতোই ভুল প্রমাণিত হবে। এই বিষয় নিয়ে অ্যাপলের প্রতিক্রিয়ার জন্য কেন অপেক্ষা করছেন না ? নাকি ক্ষোভ প্রকাশের সুযোগ ছেড়ে দেওয়া যাচ্ছেনা ?
তবে এটি একটি ভুয়ো অ্যালার্ম হতে পারে বলে সতর্কবার্তাতেই অ্যাপলের তরফে উল্লেখ করা হয়েছে।