বিরোধ কংগ্রেস বনাম বাকিদের
দিল্লি, ৩১ অক্টোবর– দিল্লির মসনদ থেকে বিজেপি তাড়াতে ২৮টি ছোট-বড় দল নিয়ে বিরোধীরা গঠন করে ‘ইন্ডিয়া’ জোট৷ বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উদ্যোগে ‘ইন্ডিয়া’-র ছাতার তলায় আসতে দেখা যায়৷ চিরশত্রু সিপিএম থেকে শুরু করে কংগ্রেসকেও৷ কিন্তু জোট বাধলেও বেশ কয়েকটি দল যে কখনওই একে অপরের সঙ্গে সমঝোতায় আসবে না তা পরিষ্কার হয়ে যায় ‘ইন্ডিয়া’-র প্রথম বৈঠকেই৷ দিল্লির শাসকদল আপ প্রধান কেজরিওয়াল দিল্লি রাজ্যপাল বনাম আপ প্রশ্নে কংগ্রেসের থেকে দূরত্ব বজায় রাখতে প্রেস কংফারেন্সে থাকতে অস্বীকার করেন৷ তারপর বিহারের মুখ্যমন্ত্রীর সভাপতিত্বের প্রশ্ন তো ছিলই৷
এরপর বাংলায় আসন সমঝোতা নিয়ে ফাটল দেখা যায় কংগ্রেস-তৃণমূলেও৷ অন্যদিকে সিপিএম কেন্দ্রীয় কমিটির ইন্ডিয়ায় থাকার বার্তা প্রকাশ্যেই মানতে অস্বীকার করে বাংলার সিপিএম৷ সিপিএমের কেন্দ্রীয় কমিটিও সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে আসন সমঝোতায় তৃণমূলের সঙ্গে কোন সমঝোতা নয়৷
ইন্ডিয়া জোটের ভবিষ্যত নিয়ে রাজনীতিবিদদের বেশিরভাগকেই সেই সময় ভবিষ্যতবানী করতে যায়, আসনেই ভাঙবে ইন্ডিয়া৷ আর তাই সত্যি হল৷ আসন সমঝোতার প্রশ্নে ভেঙে খান-খান ‘ইন্ডিয়র’৷ বর্তমানে ৫ রাজ্যের বিধানসভা ভোটের প্রথম দফা শুরুর আর মাত্র আট দিন বাকি৷ ৭ নভেম্বর ছত্তীসগডে় প্রথম দফার ভোট৷ ২৫ নভেম্বরের মধ্যে এই সব ক’টি রাজ্যেই ভোট গ্রহণ শেষ হওয়ার কথা৷ কিন্ত্ত ‘ইন্ডিয়া’ জোটের শরিকদের মধ্যে আসন নিয়ে এখনও বনিবনা হচ্ছে না৷ উল্টে দীর্ঘদিনের সঙ্গী বাম দলগুলির সঙ্গে কংগ্রেসের বিরোধ চরমে উঠেছে৷ একাধিক জোট নেতার মতে, কংগ্রেস ধরেই নিয়েছে, মিজোরাম বাদে বাকি চার রাজ্যে তারা ক্ষমতায় আসছে৷ তাই শরিকদের উপেক্ষা করছে৷ ভোটমুখী রাজ্যের কংগ্রেস নেতৃত্বের ব্যাখ্যা, ইন্ডিয়া জোট তৈরি হয়েছে লোকসভা ভোটের জন্য৷
অন্যদিকে, সমাজবাদী পার্টি, জনতা দল ইউনাইটেড, সিপিএম, সিপিআইয়ের বক্তব্য, বিগত বিধানসভা নির্বাচনগুলিতেও কংগ্রেস অন্য দলের সঙ্গে আসন সমঝোতা করেছে৷ তাদের মধ্যে অন্যতম হল সিপিএম ও সিপিআই৷ রাজস্থানে পাঁচ বছর আগে সিপিএমের তিন বিধায়ক কংগ্রেসের পাশে ছিল৷ রাজ্যে কৃষক আন্দোলনেও দুই দল একসঙ্গে থেকেছে৷ কিন্ত্ত রাজ্য কংগ্রেস এবার চাহিদা মতো আসন দিতে চাইছে না৷ মধ্যপ্রদেশে সমাজবাদী পার্টির সঙ্গে কংগ্রেসের বিরোধকে রীতিমত প্রচারের বিষয় করে তুলেছে বিজেপি৷
পদ্ম শিবির বলছে, ভোট আসতেই কংগ্রেসের জমিদারি মেজাজ প্রকাশ পেয়ে গেছে৷ মধ্যপ্রদেশের কংগ্রেস সভাপতি কমলনাথ কিছুতেই সমাজবাদী পার্টিকে পাঁচটি আসন ছাড়তে নারাজ৷ সামান্য ভোট কেটে দিলেই ওই আসনগুলিতে কংগ্রেসের ভরাডুবি হবে৷সোমবার দিল্লিতে সিপিএমের কেন্দ্রীয় কমিটির বৈঠকে ঠিক হয়েছে, রাজস্থান, মধ্যরপ্রদেশ ও ছত্তীসগডে় তারা কংগ্রেসের বিরুদ্ধে লড়াই করবে৷
রাজস্থানে ১৭টি এবং মধ্যপ্রদেশ ও ছত্তীসগডে় যথাক্রমে তিন ও চারটি আসনে লড়াই করবে৷ তেলেঙ্গানা নিয়ে সিপিএম এখনও সিদ্ধান্ত জানায়নি৷ রাজস্থান ও ছত্তীসগডে় সিপিআই লড়াই করবে যথাক্রমে ১৭ ও ২২টি করে আসনে৷ এদিকে, পাঁচ রাজ্যেই বেশিরভাগ আসনে প্রার্থী দিয়েছে আম আদমি পার্টি৷ আপ চুটিয়ে প্রচার করছে৷ বেশিরভাগ আসনে তাদের লড়াই কংগ্রেসের বিরুদ্ধে৷ আসরে আছে শরদ পাওয়ারের এনসিপি’ও৷ পাওয়ার গত সপ্তাহে দিল্লিতে কংগ্রেস সভাপতি মল্লিকার্জুন খাড়গে এবং রাহুল গান্ধির সঙ্গে বৈঠক করেন৷ সেখানে পাঁচ রাজ্যের বিধানসভা ভোটে কংগ্রেস নেতৃত্বকে আরও নমনীয় হতে অনুরোধ করেন তিনি৷ পাওয়ারের বক্তব্য, তাহলে লোকসভায় আসন সমঝোতা আরও সহজ হয়ে যাবে৷ সোমবার একই কথা বলেছেন সিপিএমের সাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরি৷
ভোটমুখী রাজ্যের কংগ্রেস নেতারা আসন ছাড়তে নারাজ, অভিযোগ করেন সিপিএমের সাধারণ সম্পাদক৷ দিল্লিতে ইয়েচুরির সাংবাদিক বৈঠকের পর কাশ্মীরের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী ওমর আবদুল্লাহ টুইট করে আক্ষেপ করেছেন, বিধানসভার ভোটে ইন্ডিয়া জোটের মধ্যে বোঝাপড়া না হওয়ায়৷