বিখ্যাত মেট্রো-ম্যান যখন ‘না’ বলেন তখন রাজনীতিকদের অবশ্যই তাতে কর্ণপাত করা উচিত। দিল্লি মেট্রোতে মহিলাদের বিনা ভাড়ায় ভ্রমণের জন্য মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়ালের জনমােহিনী উদ্যোগকে মেট্রো-ম্যান শ্রীধরণ স্পষ্টভাবে প্রত্যাখ্যান করেছেন।
এটা শ্রীধরণের পেশাদারিত্বের পরিচয় এবং একেবারেই অরাজনৈতিক সিদ্ধান্ত। এখন নাগরিকদের কাছে এটা প্রশ্ন যে রাজধানীর একমাত্র সফল পরিবহণ ব্যবস্থা মেটোতে লিঙ্গভিত্তিক সবিধা তাঁরা মেনে নেবেন কিনা। কয়েকটি রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপূর্ণ সমীক্ষায় দেখা যাচ্ছে মহিলাদের জন্য বিনা ব্যয়ের কিছু ঘােষিত হলে তাঁরা খুব খুশি হন। কিন্তু এই বার্তাটা কিছুটা বিরূপতাও ডেকে আনছে। ফলে মুখ্যমন্ত্রীর পরবর্তী ঘোষণায় কিছু হাস্যকর বিকল্পও উঠে আসছে।
দিল্লি মেট্রো সকলের কাছে আদর্শ বলে মনে হয়নি, স্যাটেলাইট শহরগুলির সঙ্গে এই মেট্রোতে জুড়ে দেওয়ার বিষয়টি অনেকেই পছন্দ করেনি। এভাবে মেট্রোর পথ ক্রমাগত বাড়িয়ে যাওয়ার ফলে দূর থেকেই ট্রেন যাত্রীবােঝাই হয়ে আসছে। শহরের মধ্যে প্রবেশ করার পর তাতে স্থানীয়রা আর পা রাখতেই পারছে না। কিন্তু কোনও ক্ষুদ্র দৃষ্টির নেতা আগামী নির্বাচনের দিকে চোখ রেখে যদি কোনও সিদ্ধান্ত নেন এবং তার ফলে যদি সংস্থায় আর্থিক দুর্গতি নেমে আসে তা অনেকেই পছন্দ করবে না।
ড. শ্রীধরণ প্রধানমন্ত্রীকে একটি চিঠি লিখে আপ সরকারের এই উদ্যোগের কড়া সমালােচনা করেছেন। তিনি জানিয়েছেন, দিল্লি প্রথম থেকেই কাউকে কোনও সুবিধা দেওয়ার বিরােধী। এমনকী মেট্রোর কর্মীরা পর্যন্ত টিকিট কেটে যাতায়াত করেন। অটলবিহারী বাজপেয়ী ও প্রিন্স অফ ওয়েলসও সেই পথে হেঁটেছেন। ফলে দিল্লি মেট্রোতে কোনওরকম ক্যান্সার রােগ ধরার ব্যাপারে তিনি সাবধান করে দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, সস্তা জনপ্রিয়তার চেয়ে কোনও সংস্থার সুদৃঢ় আর্থিক স্থিতি অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ। তার মতে, সমাজে ছাত্র, প্রবীণ, প্রতিবন্ধী এরকম অনেক শ্রেণিই এই সুযােগসুবিধা পাওয়ার অধিকারী। এইভাবে মহিলাদের জন্য সুযােগসুবিধার দরজা খুলে দেওয়া হলে দেশের অন্যান্য শহরের মেট্রোতেও তার প্রভাব পড়বে।
শ্রীধরণ সেই সব বিষয়ের ওপর জোর দিয়েছেন যা রাজনীতিকরা সাধারণত এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেন। মেট্রো চালাতে জাপান থেকে এখনও ঋণ আসছে। রাজনৈতিক তৎপরতা শুরু হওয়ার আগে সেই ঋণ তাে শােধ করা দরকার। তবে বিজেপি রাজনীতিকবন্দদ, বিশেষ করে কেন্দ্রীয় নগরােন্নয়নমন্ত্রীর মতাে শ্রীধরণ বিনা ব্যয়ে মধ্যাহ্নভােজনের মতাে প্রকল্পের বিরুদ্ধে কোনও রাজনৈতিক যুক্তি দেখাননি। এখন আমরা এই বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর মতামতের জন্য অপেক্ষা করছি।
তবে এই বিষয়টা নিয়ে বিরােধ বাঁধার একটা আশঙ্কা রয়ে গেছে, যা কেজরিওয়ালের কাছে খুবই উপভােগ্য বিষয়। এর জন্য যারা ক্ষতিগ্রস্ত হবে তাদের নিয়ে তার কোনও মাথাব্যথা নেই। তবে এতে যদি জনগণের স্বার্থ রক্ষিত না হয় তাহলে উপ-রাজ্যপাল ও কেন্দ্রীয় নগরােন্নয়মন্ত্রী কেজরিওয়ালের সঙ্গে বিবাদে যেতে পিছপা হবেন না। দিল্লিই হােক বা পুদুচেরি, আংশিক রাজ্যের মর্যাদা বিষয়ক পরীক্ষা ব্যর্থ প্রমাণিত হয়েছে। দিল্লির মেট্রো এখন ফায়ারিং লাইনে দাঁড়িয়ে আছে, কেউ জানে না তার পরিণাম কী হবে। ছােট ব্যক্তিরা বড় পদ পেয়ে গেলে যে কী হাল হয় তা বােঝাই যাচ্ছে।