দিল্লি, ৯ অক্টোবর– ২০২৪-এর লোকসভা ভোটের আগে বিরোধী জোট ‘ইন্ডিয়া’র আসন সমঝোতার প্রশ্নে তৃণমূলের পক্ষ থেকে এক নতুন বার্তা দেওয়া হয়েছে কংগ্রেস নেতৃত্বকে। রাজনৈতিক সূত্রে জানা গিয়েছে, তৃণমূল সুপ্রিম মমতা বন্দোপাধ্যায় কংগ্রেস সুপ্রিমোকে জানিয়েছেন, যে সব রাজ্যে আসন রফা সহজ সেখানে তা দ্রুত সেরে ফেলা হোক।
তৃণমূল নেতৃত্বের দাবি, দ্বিতীয় বৃহত্তম বিরোধী দল হিসাবে তারা যে ভার নিয়ে কংগ্রেসের সঙ্গে কথা বলতে পারে, সেটা অনেক ছোট আঞ্চলিক দলই পারে না। এ ক্ষেত্রে এই আসন রফার বিষয়টি নিয়েও তারা কংগ্রেসকে জানিয়েছে, আপ বা আরজেডি, জেডিইউ-র মতামতকে সঙ্গে নিয়েই।
তৃণমূলই শুধু নয়, এই একই বক্তব্য জেডিইউ, আরজেডি এবং আপ-এরও। তাদের সবার হয়েই তৃণমূলের পক্ষ থেকে কংগ্রেসকে জানানো হয়েছে, হাতে আর মাত্র তিন সপ্তাহ রয়েছে। এর মধ্যে অন্তত তিনশো আসনে সহজেই রফা করে নেওয়া সম্ভব। যে সব রাজ্যে কংগ্রেসের একাধিপত্য (মধ্যপ্রদেশ, কর্নাটক, রাজস্থানের মতো রাজ্য) এবং যেখানে ইতিমধ্যেই কংগ্রেসের সঙ্গে আঞ্চলিক দলের জোট রয়েছে (মহারাষ্ট্র, তামিলনাড়ু, বিহারের মতো রাজ্য)— এই দুই ‘শ্রেণি’র রাজ্যে আর দেরি না করে অবিলম্বে আসন সমঝোতা করে নেওয়া হোক। পশ্চিমবঙ্গ, দিল্লি, উত্তরপ্রদেশ, পঞ্জাবের মতো রাজ্যে পরিস্থিতি কিছুটা জটিল কারণ এই রাজ্যগুলিতে ইন্ডিয়া-ভুক্ত দলগুলি একে অন্যের বিরুদ্ধে লড়ছে।
তৃণমূলের এই প্রস্তবের কোনও জবাব এখনও দেয়নি কংগ্রেস। তবে আরও একটি বৈঠকের পরিকল্পনা করা হচ্ছে শীঘ্রই। সেখানে আসন সমঝোতা নিয়ে কথা হবে না যদিও। কংগ্রেস-সহ ইন্ডিয়া শিবিরের একাংশের বক্তব্য, বৈঠকের ধারাবাহিকতা ধরে রাখা প্রয়োজন, রাজনৈতিক প্রাসঙ্গিকতা এবং বার্তা মানুষের কাছে পৌঁছানোর জন্য।
বাংলার প্রবাদ বাক্য ব্যবহার করে তৃণমূল সুপ্রিম বার্তা দিয়েছেন, ‘যে ফল হাত বাড়ালেই পাড়া যায়, সেগুলিকে ‘অবিলম্বে’ পেড়ে ফেলা হোক। তাতে অন্তত জোটের পাকাপোক্ত চেহারাটা গড়ে উঠবে। তার পরে উঁচু গাছের ফলের কথা ভাবা যাবে, কারণ তা পাড়তে বাড়তি সময় লাগবে। অর্থাৎ যে সব রাজ্যে আসন রফা সহজ, সেখানে তা দ্রুত সেরে ফেলা হোক। জটিলগুলি পরে করা যাবে।
গত মাসে দিল্লিতে ইন্ডিয়ার সমন্বয়কারী কমিটির বৈঠকে স্থির হয়েছিল, আসন সমঝোতার কাজ শুরু হয়ে যাবে এবং সে ক্ষেত্রে বিরোধী জোটের কোনও কেন্দ্রীয় ভূমিকা থাকবে না। অর্থাৎ যে রাজ্যে ইন্ডিয়া জোটের যে দল শক্তিশালী, তাদের উদ্যোগী হতে হবে সেখানকার বিজেপি-বিরোধী অন্য দলগুলির সঙ্গে এক টেবিলে বসে আসন রফা করার। গত তিন সপ্তাহে তৃণমূলের পক্ষ থেকে সবচেয়ে বেশি আওয়াজ তোলা হচ্ছে আসন সমঝোতা দ্রুত শেষ করার জন্য। ইন্ডিয়ার মুম্বই বৈঠকের পরই উপস্থিত তৃণমূলের এক শীর্ষ নেতা বলেছিলেন “আমরা প্রথমে চেয়েছিলাম, সেপ্টেম্বরের মধ্যে আসন রফার বিষয়টি চুকিয়ে ফেলে ভোটে ঝাঁপিয়ে পড়তে। তার পরে বিষয়টি ১৫ অক্টোবর হয়ে অক্টোবরের শেষে পৌঁছেছে। কিন্তু এর পরে আর দেরি করা যাবে না।”
স্বাভাবিক ভাবেই প্রশ্ন উঠছে, পশ্চিমবঙ্গে সবচেয়ে শক্তিশালী দল তৃণমূলের ঘাড়েই তো দায়িত্ব বর্তাচ্ছে কংগ্রেস এবং সিপিএমের সঙ্গে আসন রফার সূত্র নিয়ে কথা বলার। এর আগে একাধিক বার সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে কথাবার্তায় তৃণমূল নেতারা জানিয়েছেন, সর্বোচ্চ দু’টির বেশি আসন ছাড়ার কোনও প্রশ্নই উঠছে না বাংলায়। কিন্তু সংবাদমাধ্যমের কাছে বলা এক কথা, আর টেবিলে মুখোমুখি বসে অন্য রাজনৈতিক দলের সঙ্গে এই নিয়ে দরকষাকষি অন্য।
মমতার এই বার্তা প্রসঙ্গে তৃণমূলের এক শীর্ষ নেতার বক্তব্য, “আমরা ইতিমধ্যেই স্পষ্টভাষায় কংগ্রেস নেতৃত্বকে জানিয়েছি, আগে সহজ রাজ্যগুলিতে আসন রফা সেরে নেওয়া হোক দ্রুত। তাতে ইন্ডিয়া একটা দেখনসই চেহারা বা ভিত তো পাবে। একটা ব্লক তৈরি হবে। বিজেপি-বিরোধী ভোটারদের কাছে স্পষ্ট বার্তা যাবে যে, বিরোধী জোট নেহাতই কাগজে-কলমে লড়ছে না। অন্তত তিনশোটি আসনে তো খুব সহজেই রফা হয়ে যাওয়ার কথা।” তৃণমূল নেতৃত্বের বক্তব্য, “কম বেশি তিনশো আসনে রফা ঘোষণা হয়ে গেলে একটু শ্বাস নেওযার পরিসর পাওয়া যাবে। তখন পরস্পর যুযুধান দলগুলি একটু সময় নিয়ে তিন চারটি রাজ্যে সমঝোতা সারবে। তখন ৩০ অক্টোবরের পরেও সামান্য কিছু সময় নিলেও খুব বেশি চোখে পড়বে না।”