এক সময়, জম্মু ও কাশ্মীরে সেনার বিরুদ্ধে ‘পেলেট গান’, অর্থাৎ ছররা গুলির বন্দুক ব্যবহারের ব্যাপক অভিযোগ ছিল। জম্মু ও কাশ্মীরে যে কোনও বিক্ষোভ সামাল দিতে ছররা গুলি ব্যবহার করত সেনা। জম্মু-কাশ্মীরের সেই ছবি বদলে গিয়েছে। এবার, অভিযোগ উঠতে শুরু করল হিংসা-বিধ্বস্ত মণিপুরে।
সেই ছররা গুলির আঘাতে, বহু যুবকের চোখ নষ্ট হয়েছে। শরীরের অন্যান্য অঙ্গ-প্রত্যঙ্গে গুরুতর আঘাত লেগেছে। ইম্ফলে পশ্চিম জেলা-সহ, ইম্ফল উপত্যকার বহু জায়গায় বিক্ষোভকারীদের উপর ছররা গুলি চালানোর অভিযোগ উঠেছে সিআরপিএফ বাহিনীর আওতাধীন ব়্যাপিড অ্যাকশন ফোর্স বা ব়্যাফের বিরুদ্ধে।
এক সর্বভারতীয় সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদন অনুযায়ী, ইম্ফল থেকে নিখোঁজ হওয়া দুই ছাত্রের মৃতদেহের ছবি অনলাইনে প্রকাশিত হওয়ার পরই ওই বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়েছিল ইম্ফল উপত্যকায়। ওই দিনই মণিপুরে বিক্ষোভকারীদের নিয়ন্ত্রণে প্রথম পেলেট বন্দুক ব্যবহার করা হয়েছিল বলে দাবি করেছেন মেইতেই সম্প্রদায়ের ছাত্রদের একাংশ। গুরুতর আহত হয়েছিলেন অনেকে। তাঁদেরই একজন ২১ বছরের উত্তম সাইবাম। মণিপুরের ইম্ফলের রাজ মেডিসিটি হাসপাতালের আইসিইউতে ভর্তি আছেন তিনি। ডাক্তাররা জানিয়েছেন, তাঁর দেহ থেকে ৬১টি ছররা গুলি বের করা হয়েছে। তবে, তারপরও বেশ কিছু গুলি তার শরীরেই আটকে আছে। তিনি একা নন, ইম্ফলে শয়ে শয়ে ছাত্র নিরাপত্তা বাহিনীর সঙ্গে সংঘর্ষে ছররা গুলির আঘাতে আহত হয়েছেন বলে অভিযোগ করেছেন। সাইবামের দাবি, ইম্ফল পশ্চিম জেলার সিংজামেইয়ে তাঁর এবং অন্যান্য বিক্ষোভকারীদের উপর ইচ্ছাকৃতভাবেই ছররা গুলি চালিয়েছে ব়্যাফ। মেইতেই ছাত্রদের অভিযোগ, সিআরপিএফ-এর পক্ষ থেকে জায়গায় জায়গায় তল্লাশি চালানো হচ্ছে। যাকেই সন্দেহ হচ্ছে, তারা সরাসরি গুলি চালাচ্ছে। সোইবাম জানিয়েছেন, ৮ জুলাই বিক্ষোভের দিন নিরাপত্তা বাহিনী গুলি চালাতে শুরু করার পর, তিনি এবং আরও দুই ছাত্র একটি বাড়িতে লুকিয়ে ছিলেন। ওই বাড়ির দরজার বাইরে থেকে তাঁদের লক্ষ্য করে গুলি ছুড়েছিল সিআরপিএফ বাহিনী। এমনকি, তিনি গুরুতর আহত হওয়ার পর, তাঁকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রেও বাধা দিয়েছিল সিআরপিএফ, এমনই দাবি করেছেন উত্তম। পরে মণিপুর পুলিশ তাঁদের উদ্ধার করেছিল।
সাধারণ বন্দুকের মতো দেখতে এই পেলেট গানের গুলি আর পাঁচটা আগ্নেয়াস্ত্রের মতো নয়। এই বন্দুকে ব্যবহার হয় ধারালো লোহা বা ফাইবারের বল। বন্দুক চালালেই তীব্র বেগে নিশানার দিকে ছুটে যায় অজস্র ‘পেলেটস’৷ ৫০ থেকে ৬০ মিটারের দূরত্ব পেরিয়ে তীব্র বেগে ছুটে যাওয়া এই ‘পেলেটস’ কারও শরীরে প্রবেশ করলে তা অত্যন্ত কষ্টকর হয়ে ওঠে। কাশ্মীর উপত্যকায় এই পেলেটস গানের প্রয়োগ শুরু হয় ২০১০ সালে । আধাসেনার দাবি, শেষ অস্ত্র হিসাবেই ব্যবহার করা হয় এই হাতিয়ার। এবার এই অস্ত্র ব্যবহার করে বিতর্কে জড়াল মণিপুর পুলিশ।