ভোপাল, ২৭ সেপ্টেম্বর– উজ্জয়নে অমানবিকতার চরম উদাহরণ দেখল গোটা দেশ। ১২ বছরের কিশোরী, অর্ধনগ্ন, রক্তাক্ত অবস্থায় দৌড়ে বেড়াচ্ছে রাস্তায়। অভিযোগ, ধর্ষণ করা হয়েছে তাকে । সাহায্যের করুণ আর্তি নিয়ে দরজায় দরজায় কড়া নেড়ে বেড়াচ্ছে সে । কিন্তু তাকে দেখে সাহায্য করা তো দূর, উল্টে দরজা বন্ধ করে দিচ্ছে লোকজন। এমনকী, দূর দূর করে তাড়িয়েও দিচ্ছে কেউ কেউ। সেই ভয়াবহ ঘটনার ভিডিওই সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়েছে।
ঘটনাটি ঘটছে মধ্যপ্রদেশের রাজধানী উজ্জয়িনী থেকে ১৫ কিলোমিটার দূরে বদনগর রোডে। রাস্তায় লাগানো সিসিটিভি ক্যামেরায় ধরা পড়েছে সেই নির্মম দৃশ্য। রাস্তায় বাড়ি বাড়ি ঘুরেও ন্যূনতম সাহায্য না পেয়ে কোনওমতে এক টুকরো কাপড়ে শরীর ঢেকে একটি আশ্রমে গিয়ে পৌঁছায়। সেখানকার পুরোহিত তাকে দেখেই বুঝতে পারেন, ভয়ঙ্কর কিছু হয়েছে নাবালিকার সঙ্গে। কিশোরীকে নিয়ে দেরি না করে একটি হাসপাতালে যান তিনি। সেখানেই শারীরিক পরীক্ষায় নিশ্চিত হওয়া গেছে, ধর্ষণের শিকার হয়েছে ওই কিশোরী।
তার আঘাত অত্যন্ত গুরুতর হওয়ায় তাকে ইন্দোরের একটি হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। খবর দেওয়া হয় থানায়। শরীর থেকে অনেক রক্ত বেরিয়ে যাওয়ায় কিশোরীকে রক্ত দেওয়ার দরকার ছিল। সেই কাজে এগিয়ে আসেন পুলিশকর্মীরা। চিকিৎসার পর নিগৃহীতা কিশোরীর শারীরিক অবস্থা স্থিতিশীল বলে জানা গেছে।
পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, কিশোরীকে যখন তার নাম, ঠিকানা জিজ্ঞাসা করা হয়, তখন সে ঠিক করে সেসব প্রশ্নের উত্তর দিতে পারেনি। এই ঘটিনায় অজ্ঞাতপরিচয় দুষ্কৃতীদের বিরুদ্ধে ভারতীয় দণ্ডবিধি এবং পকসো আইনের ধারা অনুযায়ী মামলা রুজু করেছে পুলিশ। অভিযুক্তদের খোঁজার জন্য উজ্জয়িনীর পুলিশ প্রধানের নেতৃত্বে একটি সিট গঠন করা হয়েছে। রাজ্যের বিভিন্ন থানায় পুলিশকে ঘটনার বিষয়ে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে। সিসিটিভি ফুটেজ খতিয়ে দেখে ঘটনার তদন্ত শুরু করছে পুলিশ। ঠিক কোন জায়গায় ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছিল, তা এখনও পর্যন্ত জানা যায়নি।
তদন্তকারীরা জানিয়েছেন, নিগৃহীতা নাবালিকা ঠিক করে তার ঠিকানাও বলে উঠতে পারেনি। তবে তার কথা থেকে পুলিশের অনুমান, কিশোরীর বাড়ি উত্তরপ্রদেশের প্রয়াগরাজে।
উল্লেখ্য, মধ্যপ্রদেশ এবং মহারাষ্ট্রে ২০১৯ থেকে ২০২১ সালের মধ্যে সবচেয়ে বেশি সংখ্যক মহিলা ও নাবালিকাদের নিখোঁজ হওয়ার ঘটনা ঘটেছে। ন্যাশনাল ক্রাইম রেকর্ড ব্যুরোর তথ্য অনুযায়ী, ২০২১ সালে সারা দেশে সবচেয়ে বেশি সংখ্যক ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে মধ্যপ্রদেশেই। তার মধ্যে অন্তত ৫০% অপরাধ সংঘটিত হয়েছে নাবালক-নাবালিকাদের বিরুদ্ধেই। সংখ্যার হিসাবে প্রতিদিন ১৮ জন করে নাবালক-নাবালিকা ধর্ষিত হয়েছে।