ফের জুনিয়র ডাক্তার নিগ্রহ। এবার রাজধানীতে। সােমবার সকালে দেশজোড়া ধর্মঘটের মধ্যেই দিল্লির অল ইন্ডিয়া ইনস্টিটিউট অব মেডিকেল সায়েন্সেস (এইমস)-এর এক জুনিয়র ডাক্তারকে শারীরিকভাবে হেনস্থা করার অভিযােগ উঠল।
দেশজোড়া ধর্মঘটে শামিল না হওয়ারই সিদ্ধান্ত নিয়েছিল দিল্লির অল ইন্ডিয়া ইনস্টিটিউট অব মেডিকেল সায়েন্সেস (এইমস)। জরুরি পরিষেবা চালু রেখে সকাল থেকেই হাসপাতালে চিকিৎসকদের ভিড় ছিল। কিন্তু ডাক্তার নিগ্রহের জেরে নতুন করে আন্দোলনে শামিল হল এইমস। সকাল থেকেই অ্যাপেক্স ট্রমা সেন্টারে রােগী দেখছিলেন জয়প্রকাশ নারায়ণ। আচমকাই হাসপাতালে শােরগােল ওঠে, বেছে বেছে রােগীদের জরুরি বিভাগে ঢােকানাে হচ্ছে। পক্ষপাতিত্ব করছেন জুনিয়র ডাক্তাররা। এই অভিযােগে হাসপাতালে বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করেন রােগীর পরিজনরা। আক্রান্ত হন জয়প্রকাশ।
রেসিডেন্ট ডক্টর অ্যাসােসিয়েশন (আরডিএ)-এর প্রধান ডা. অমরেন্দ্র সিং মালহির কথায়, ‘মদ্যপ অবস্থায় হাসপাতালে এসেছিলেন রােগীর আত্মীয়রা। ডাক্তারদের হুমকি দেওয়া হয়, তাদের রােগীদের না দেখলে খুন করা হবে’।
গত বৃহস্পতিবার দিল্লির অল ইন্ডিয়া ইনস্টিটিউট অফ মেডিকেল সায়েন্সেস-এর চিকিৎসকদের তরফে দাবি করা হয়েছিল, পশ্চিমবঙ্গে জুনিয়র ডাক্তারদের উপরে যে আক্রমণ চলেছে, তা দুর্ভাগ্যজনক ঘটনা। এটা রাজ্যে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির চরম অবনতি।
এনআরএসের ডাক্তারদের সমর্থনে হেলমেট পরে এবং মাথায় ব্যান্ডেজ বেঁধে প্রতীকী প্রতিবাদ শুরু করেছিলেন তারা। রেসিডেন্ট ডক্টরস অ্যাসােসিয়েশনের তরফে রাজধানী জুড়ে চিকিৎসা পরিষেবা বন্ধের ডাক দিয়েছিলেন তারা। তার পরের দিনও দেখা গিয়েছিল একই ছবি। কার্যত আউটডাের ও জরুরি বিভাগ বন্ধ রেখে যন্তরমন্তর অবধি মিছিলও বার করেছিলেন ডাক্তাররা। এইমস ও সফদরজঙ্গ হাসপাতাল মিলিয়ে রেসিডেন্ট ডক্টরস অ্যাসােসিয়েশনের প্রায় সাড়ে তিন হাজার সিনিয়র ও জুনিয়র ডাক্তার আন্দোলনে শামিল হয়েছিলেন।
এইমস জানিয়েছে, প্রতিবাদ চললেও মুমূর্যু রােগীদের কথা ভেবে আজ, সােমবার জরুরি পরিষেবা চালু রাখারই সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন ডাক্তাররা। খােলা ছিল আউটডােরও। কিন্তু তার মধ্যেও এক জুনিয়র ডাক্তারকে অন্যায়ভাবে হেনস্থা করা হল।
প্রতিবাদে এদিন সকাল ৮টা থেকে ৯টা এক ঘণ্টা প্রতীকী মিছিল করেছেন এইমসের সিনিয়র ও জুনিয়র ডাক্তাররা। সেই মিছিলে শামিল হয়েছিলেন, সফদরজ হাসপাতাল, লেডি হার্ডিঞ্জ মেডিকেল কলেজ, আরএমএল হাসপাতাল, সরকারি সাহায্যপ্রাপ্ত জিটিবি, ডা. বাবা সাহেব আম্বেদকর, সঞ্জয় গান্ধি মেমােরিয়াল, দীনদয়াল উপাধ্যায় হাসপাতালের ডাক্তাররা।
দিল্লি মেডিকেল অ্যাসােসিয়েশন (ডিএমএ) ও ফেডারেশন অব রেসিডেন্ট ডক্টরস অ্যাসােসিয়েশন-এর তরফে জানানাে হয়েছে আন্দোলন চালিয়ে যাবেন ডাক্তাররা। আগামীকাল সকাল ৬টার পরেও কর্মবিরতি চলতে পারে।
দিল্লির এইমসে সমস্ত পরিষেবা বন্ধের ঘােষণা ছিল আগে থেকেই। সেইমতাে সােমবার সকাল থেকে এনআরএস-এ জুনিয়র ডাক্তারদের আন্দোলনকে সমর্থন করতে শামিল হল দেশের প্রায় সব রাজ্যের মেডিকেল কলেজগুলি। এদিন সারা দেশের হাসপাতালগুলিতে ধর্মঘটের ডাক দেয় ইন্ডিয়ান মেডিকেল অ্যাসােসিয়েশন (আইএমএ)।
চিকিৎসকদের সর্বোচ্চ সংগঠনের তরফে জানানাে হয়েছে, জরুরি ও রুটিন পরিষেবা চালু থাকবে। তবে আউটডোর এবং অন্যান্য পরিষেবা বন্ধ থাকবে। ফলে এদিন সারা দেশেই চিকিৎসা পরিষেবায় ব্যাপক প্রভাব পড়তে চলেছে। রােগী ও তাঁদের পরিবারের সদস্যরা চরম ভােগান্তির শিকার হচ্ছেন। সরকারি সহ বেসরকারি হাসপাতালে বন্ধ রয়েছে বহির্বিভাগ পরিষেবা। এদিন সকাল ছটা থেকে বহির্বিভাগ (ওপিডি) সহ অত্যাবশ্যক নয়, এমন সমস্ত চিকিৎসা পরিষেবা বন্ধ থাকবে।