বৃষ্টি বিঘ্নিত ম্যাচ হলেও ডার্ক-লুইস মেথডের ফাঁদে ৬ উইকেটে ২১২ রান করে ৮৯ রানে ভারতের কাছে হার মানল পাকিস্তান দল। অবশ্য খেলা ৫০ ওভার হলেও পাকিস্তানকে হার মানতেই হতাে ভারতের কাছে, শুরুতেই রানের গতি ও উইকেট পড়ে যাওয়ার মধ্য দিয়ে।
এই জয়ে মধ্যরাতেও আসমুদ্র হিমাচল ভারতবর্ষ আনন্দে উত্তাল। এ যেন বালাকোটে সার্জিকাল স্ট্রাইক। কলকাতা পুলিশও আনন্দের অভিব্যক্তিতে টুইটারে বিরাট ও সরফরাজের ছবি দিয়ে লিখেছে, সরফরাজ জানতে চায় তােমরা কীভাবে জয় সম্ভব করাে? উত্তরে বিরাট একেবারে অভিনন্দনের মতাে জানায়, ‘আই অ্যাম নট সাপােসড টু টেল ইউ’। আসলে যেকোনও খেলার ক্ষেত্রেও ভারত-পাক লড়াইটা যেন সীমান্তের যুদ্ধের মতােই।
বৃষ্টির ভ্রুকুটি কাটিয়ে সকাল সকাল রােদের ঝিলিক দেখা গিয়েছিল রবিবার। সমর্থকদের মুখে হাসি আর ধরছিল না। আর হবে নাই বা কেন, ভারত-পাক মহারণ বলে কথা। হাইভােল্টেজ ম্যাচ মাঠে বসে দেখার মজাটাই আলাদা। বিশেষ করে, গত ম্যাচে নিউজিল্যান্ডের বিরুদ্ধে ভারতের ম্যাচ বাতিল হয়ে যাওয়ায় ভারতীয় সমর্থকরা পুরােপুরি হতাশ হয়ে পড়েছিলেন। তাই তাে বরুণদেবের কাছে প্রার্থনা করেছিলেন হাইভােল্টেজটা এই ম্যাচ যেন পুরাে অনুষ্ঠিত হয়।
পাকিস্তান অধিনায়ক সরফরাজ আহমেদ টসে জিতে প্রথমে ভারতীয় দলকে ব্যাট করার জন্য আহ্বান জানান। সিদ্ধান্তটা নেওয়ার কারণ তাঁর বােলারদের প্রতি ভরসা। টসে হেরে প্রথম ব্যাট করার সুযােগটা পেয়ে বেশ ভালােভাবে কাজে লাগায় ভারতের নতুন ওপেনিং জুটি লােকেশ রাহুল ও রােহিত শর্মা।
পাক পেসারদের সামলে বেশ কাজের কাজটা করে যাচ্ছিলেন দুই ওপেনার। পাক অধিনায়কের পরিকল্পনায় পুরােপুরি জল ঢেলে দেন রােহিত-রাহুল। প্রথম দশ ওভারের মধ্যেই পাক অধিনায়ক স্পিনারদের ডেকে নেন। কিন্তু কাজের কাজটা কিছুই হয়নি।
প্রথম উইকেটে লােকেশ রাহুল ও রােহিত রেকর্ড গড়ে ১৩৬ রান যােগ করে দেন। পাশাপাশি রাহুল অর্ধশতাধিক রান করে। প্রথম উইকেটে শঙ্কি রান ওঠার পর ভারতকে কোনও সময়ের জন্য চাপে ফেলতে দেয়নি রােহিত শর্মা। চলতি বিশ্বকাপের আসরে নিজের দ্বিতীয় শতরান ও পাকিস্তারে বিরুদ্ধে বিশ্বকাপের আসরে দ্বিতীয় ব্যাটসম্যান হিসাবে শতরান করে ফেলেন রােহিত শর্মা। এবং সঙ্গী ছিলেন পাকিস্তানের বিরুদ্ধে বিশ্বকাপের আসরে প্রথম শতরানকারী ব্যাটসম্যান তথা ভারতীয় অধিনায়ক বিরাট কোহলি।
যে সময় রােহিত শতরানটা পেয়েছিলেন, তখন সকলে খেলা দেখে মনে করছিলেন রােহিত হয়তাে বিশ্বকাপের আসরে নিজের চতুর্থ দ্বিশতরানটা করে ফেলবেন। কিন্তু, একটা বাজে শটে রােহিতকে ১৪০ রানে আউট হতে হয়। ভালাে জায়গায় পৌঁছে যাওয়ার পর বিরাট কোহলি তাঁর প্রয়ােজনীয় সাতান্ন রান তুলে নিয়ে দ্রুততম ব্যাটসম্যান হিসাবে একদিনের ক্রিকেটে এগারাে হাজার রানের মাইলস্টোন টপকে গিয়ে শচীনকে পিছনে ফেলে দেন।
সবই ঠিকঠাক চলছিল, কিন্তু শেষদিকে পর পর কিছু উইকেট পতন ও বৃষ্টির জন্য ভারত সাড়ে তিনশাের গন্ডি টপকাতে পারল না। পাশাপাশি দ্বিতীয় ভারতীয় ক্রিকেটার ধােনি সবথেকে বেশি একদিনের ম্যাচ খেলার দিনে আমিরের করা বলে এক রান করেই আউট হয়ে যান। শেষপর্যন্ত ভারত পাঁচ উইকেট হারিয়ে ৩৩৬ রান তােলে।
সবথেকে মজার ব্যাপারটা হল, আমিরের করা বল বিরাটের ব্যাটে লেগে উইকেটরক্ষকের হাতে জমা পড়ার পর আম্পায়র আউট ঘােষণা করেন। কিন্তু ব্যাটসম্যান হিসাবে বিরাট কেন রিভিউ নিলেন না সেটাই বােঝা গেল না। যখন আমিরের করা বাউন্সার বল মাথার উপর দিয়ে যাচ্ছিল তখন ব্যাট চালিয়েছিলেন বিরাট এবং একটা আওয়াজ হয়েছিল কিন্তু সেটা পরে রিপ্লেতে দেখা গিয়েছে ব্যাটেবলের মধ্যে কোনও সংযােগ হয়নি। এই নিয়ে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিরাট কোহলিকে খোঁচা দিয়েছেন।
তবে, আরাে একটা কথা বলে রাখা ভালাে বিরাটও অবশ্য বুঝতে পারেননি। তাই তাে তিনি ড্রেসিংরুমে গিয়ে নিজের ব্যাটটা বার বার চালাচ্ছিলেন, দেখছিলেন কোথা থেকে আওয়াজটা এসেছে।