• facebook
  • twitter
Saturday, 23 November, 2024

আজ নবান্নের বৈঠকে যাবেন না জুনিয়াররা

শুক্রবার মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের জুনিয়র ডাক্তারদের আন্দোলন সর্বাত্মক রূপ নেয়। রাজ্যজুড়ে বিভিন্ন সরকারি হাসপাতালের ডাক্তারদের পদত্যাগ করায় চিকিৎসা ব্যবস্থা একরকম ভেঙে পড়ে।

জুনিয়ার চিকিৎসকদের বিক্ষোভ মিছিল (Photo: Kuntal Chakrabarty/IANS)

শুক্রবার মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের জুনিয়র ডাক্তারদের আন্দোলন সর্বাত্মক রূপ নেয়। রাজ্যজুড়ে বিভিন্ন সরকারি হাসপাতালের ডাক্তারদের পদত্যাগ করায় চিকিৎসা ব্যবস্থা একরকম ভেঙে পড়ে। জট কাটাতে বীজপুরে কর্মীসভা থেকে ফিরে নবান্নে চারজন বিশিষ্ট সিনিয়র ডাক্তারদের নিয়ে বৈঠকে বসেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এদের মধ্যে ছিলেন ডাক্তার সুকুমার মুখােপাধ্যায়, মাখনলাল সাহা, অভিজিৎ চৌধুরী এবং অলকেন্দু ঘােষ। এঁদের সঙ্গে ছিলেন তৃণমূল কংগ্রেসের চিকিৎসক নেতা ডাক্তার নির্মল মাঝিও।

সিনিয়র ডাক্তাররা এদিন জুনিয়রদের আসতে অনুরােধ করলেও তাঁরা মুখমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করতে রাজি হয়নি। এমনকী তাঁদের জন্য গাড়ি পাঠানাে হলেও তারা নিজের দাবিতে অনড় থেকে বলে, মুখ্যমন্ত্রীকেই এনআরএস-এ আসতে হবে। রাত পর্যন্ত কোনও সমাধানসুত্র না বেরনােয় আজ শনিবার ফের সিনিয়র ডাক্তারদের মধ্যস্থতা করার জন্য নবান্নে ডেকে পাঠিয়েছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বর্ষীয়ান ডাক্তাররা মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক করানাের জন্য জুনিয়র ডাক্তারদের রাজি করানাের দায়িত্ব নেন।

এদিকে শুত্রবার জুনিয়র ডাক্তাররা নিজেদের মধ্যে বৈঠক করে সিদ্ধান্ত নেয়। আজ শনিবার মুখ্যমন্ত্রীকে আসতে হবে আলােচনার জন্য, তাঁরা নবান্নে যাবেন না। এদিকে শুক্রবার সন্ধে পর্যন্ত কোনও সমাধানসূত্র না বেরনােয় এনআরএস কাণ্ডে আহত ইন্টার্ন পরিবহ মুখােপাধ্যায়কে দেখতে মল্লিজারের ইনস্টিটিউট অফ নিউরাে সায়েন্সে যান রাজ্যপাল কেশরীনাথ ত্রিপাঠী। এর আগে এনআরএস-এর অবস্থানকারী ডাক্তাররাই প্রথম থেকে আবেদন জানিয়েছিল, যাতে মুখ্যমন্ত্রী পব্বিহকে দেখতে যান। কিন্তু সেই রাস্তায় হাঁটেননি মুখ্যমন্ত্রী। পরিবর্তে রাজ্যপাল সেই কর্তব্য পালন করেন।

এদিকে পরিস্থিতি নিয়ে আলােচনার জন্য মুখ্যমন্ত্রীরও ডাক পড়ে রাজভবনে। তবে আজ মুখ্যমন্ত্রী চেষ্টা চালিয়ে গিয়েছেন, যাতে জুনিয়র ডাক্তারদের সঙ্গে আলােচনায় সরকারি হাসপাতালের এই অচলাবস্থা কেটে যায়। স্বাস্থ্য পরিষেবা স্বাভাবিক হতে পারে।

জুনিয়র ডাক্তারদের আন্দোলনকে সমর্থন করে শুক্রবার রাজ্যজুড়ে ডাক্তারদের গণইস্তফা চলতেই থাকে। স্বাস্থ্যভবন সুত্রে খবর, শুক্রবার সন্ধে পর্যন্ত সুপার ও অধ্যক্ষ মিলিয়ে চারজন এবং বিভিন্ন সরকারি হাসপাতাল থেকে পাঁচশাের অধিক ডাক্তার ইস্তফা দিয়েছেন। একটা প্রাকৃতিক বিপর্যয়ে যেভাবে মৃতদেহের সংখ্যা যেমন লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়তে থাকে, ঠিক সেইভাবে এদিন ইস্তফা দেওয়া ডাক্তারের সংখ্যা বৃদ্ধি পেতে থাকে। এবং এই ইস্তফার জেরে রাজ্যের চিকিৎসা পরিষেবায় কার্যত বিপর্যয় নেমে আসে।

এই পরিস্থিতিকে রাজনৈতিক নেতারা ‘মাল্টি অর্গান ফেলিওর’ বলে আখ্যা দিচ্ছেন। তবে রাজ্য সরকারের মতে, এই গণইস্তফা নিয়মমাফিক হয়নি। ইস্তফা দিতে হলে, প্রত্যেক ডাক্তারকে আলাদা করে তা জমা দিতে হবে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে।

বৃহস্পতিবার শুরুটা হয়েছিল সাগরদত্ত হাসপাতালের আট ডাক্তারের ইস্তফা দিয়ে। তারপর বৃহস্পতিবার রাতেই এনআরএস-এর সুপার এবং অধ্যক্ষ পদত্যাগ করেন। তালিকায় ছিলেন বিভাগীয় প্রধানরাও।

ইতিমধ্যে শুক্রবার জুনিয়র ডাক্তার ও ইন্টার্নদের আন্দোলনকে সমর্থন জানিয়ে রাস্তায় নেমেছেন টলিউডের তারকা, আইনজীবীসহ রাজ্যের বিশিষ্টজনরা। গােটা ঘটনার জন্য রাজ্য সরকার এবং প্রশাসনকে দায়ী করছে চিকিৎসক মহল।

বৃহস্পতিবার দুপুরে মুখ্যমন্ত্রী তথা স্বাস্থ্যমন্ত্রী এসএসকেএম হাসপাতালে গিয়ে হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, চার ঘন্টার মধ্যে চিকিৎসা পরিষেবা শুরু না করলে কড়া ব্যবস্থা নেওয়া হবে। হস্টেল থেকে জুনিয়র ডাক্তারদের বহিষ্কার করা, সুযােগ সুবিধে না দেওয়ার বার্তা দেন মমতা। এমনকী আন্দোলনকারীদের মধ্যে বহিরাগতরা রয়েছেন বলেও মন্তব্য করেন মুখ্যমন্ত্রী।

এক কদম এগিয়ে ইন্ডিয়ান মেডিকেল অ্যাসােসিয়েশন (রাজ্যশাখা)-এর সভাপতি আবার অবস্থান ধর্নায় অংশ নেওয়া ডাক্তার রেজিস্ট্রেশন নিয়েও চূড়ান্ত অবস্থানের ইঙ্গিত দেন। রাজ্য সরকারের এই অনমনীয় মনােভাবের জেরে আন্দোলনে ঘৃতাহুতি পড়ে। শুক্রবার সকাল থেকে রাজ্যের বিভিন্ন হাসপাতালে ডাক্তারদের গণ ইস্তফার ঝড় ওঠে। মুখ্যমন্ত্রীকে এনআরএস-এ আসতে হবে এবং নিঃশর্ত ক্ষমা চাইতে হবে , এমন দাবিও ওঠে। যে এসএসকেএস হাসপাতালে মুখ্যমন্ত্রী চার ঘন্টার মধ্যে পরিস্থিতি স্বাভাবিক করার ফরমান জারি করেছিলেন, সেখানকার ডাক্তাররা শুক্রবার শেষ বিকলে জানান, চব্বিশ ঘন্টার মধ্যে তাদের দাবি মানতে হবে। নইলে এসএসকেএম-এর সব ডাক্তাররা পদত্যাগ করবেন।

সন্ধের মধ্যেই শুধুমাত্র এসএসকেএম থেকে ১৭৫ জন ডাক্তার পদত্যাগ করেন। দুপুর পর্যন্ত আরজিকর মেডিকেল কলেজ থেকে ৯৭ জন ইস্তফা দেন। তাদের দাবি, প্রশাসনের অসহযােগিতার জেরে হাসপাতালে পরিষেবা দেওয়া কার্যত অসম্ভব। শুক্রবার সকালেই এনআরএস থেকে ১০০ জনেরও বেশি ডাক্তার পদত্যাগপত্র পাঠিয়ে দিয়েছেন সংশ্লিষ্ট দফতরে। ন্যাশনাল মেডিকেল কলেজে মেডিসিন বিভাগের ১৬ জন এবং ডারমাটোলজি বিভাগের ২০ জন ডাক্তার ইস্তফা দেন শুক্রবার। পদত্যাগ করেন স্কুল অফ ট্রপিক্যাল মেডিসিনের ডিরেক্টর সহ ৩৩ জন।

শহরের পাশাপাশি জেলার মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালেও এদিন ছিল ইস্তফা দেওয়ার হিড়িক। এদিন সিউড়ি মেডিকেল কলেজ, রামপুরহাট মেডিকেল কলেজ, উত্তরবঙ্গ মেডিকেল কলেজের বড় সংখ্যার ডাক্তার ইস্তফা দিয়েছেন। এই ইস্তফার জন্য রাজ্যে সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসায় যে অচলাবস্থা তৈরি হয়েছে, তার জেরে জীবন বিপন্ন হয়েছে অসুস্থ মানুষজনের।