ভােট পরবর্তী হিংসা এবং এনআরএস কাণ্ডের ঘটনায় উদ্বিগ্ন রাজ্যপাল কেশরীনাথ ত্রিপাঠি। হিংসা দমন করে কিভাবে রাজ্যে শান্তির পরিবেশ ফিরিয়ে আনা যায়, সেব্যাপারে বহস্পতিবার চারটি প্রধান রাজনৈতিক দলের সঙ্গে আলােচনা করলেন তিনি।
বর্তমানে রাজ্যের অশান্ত পরিস্থিতির মােকাবিলা করতে সকলের মতামত নিয়েছেন রাজ্যপাল। বর্তমান পরিস্থিতিতে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বজায় রাখার উপরেই গুরুত্ব আরােপ করেছেন তিনি। বাংলায় শান্তি ফিরিয়ে আনতে দলমত নির্বিশেষে সকলকে প্রয়ােজনীয় উদ্যোগ নিতে আহ্বানও জানিয়েছেন রাজ্যপাল।
এদিকে ভােট পরবর্তী হিংসার সঙ্গে যুক্ত হয়েছে জুনিয়ার চিকিৎসকদের লাগাতার আন্দোলন। আর এই আন্দোলনের জেরে গােটা রাজ্যে স্বাস্থ্য পরিষেবা পুরােপুরি স্তব্ধ। আর এর জেরে ভােগান্তির শিকার হচ্ছেন রােগীদের আত্মীয় পরিজনরা। এমনকি বিনা চিকিৎসায় বেশ কয়েকজনের মৃত্যুর ঘটনাও ঘটেছে। মুখ্যমন্ত্রী হস্তক্ষেপ করা সত্ত্বেও কোনও সমাধানসূত্র পাওয়া যায়নি।
এদিন চারটি প্রধান রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধিদের নিয়ে বৈঠকের আগে রাজ্যপালের সঙ্গে দেখা করেন আন্দোলনকারী জুনিয়ার চিকিৎসকরা। তারা এব্যাপারে রাজ্যপালের হস্তক্ষেপ দাবি করেছেন। চিকিৎসকদের কথায়, তাদেরকে অযথা দোষী সাব্যস্ত করা হচ্ছে। তাদের নিরাপত্তার বিষয়টিতেও কোনওভাবে গুরুত্ব আরােপ করা হচ্ছে না প্রশাসনের তরফে।
রাজ্যপাল আন্দোলনকারীদের অবিলম্বে কর্মবিরতি তুলে নিতে বলেছেন। তিনি জুনিয়ার চিকিৎসকদের আশ্বস্ত করেছেন, তাঁদের দাবি সরকারের কাছে পাঠানাে হয়েছে। রােগীদের স্বার্থে তারা যেন অবিলম্বে কাজে যােগদান করেন রাজ্যপাল এই অনুরােধও জানিয়েছেন চিকিৎসকদের কাছে।
ভােট পরবর্তী হিংসায় রাজ্যে একাধিক প্রাণহানির ঘটনা ঘটেছে। কোনও অবস্থাতেই অশান্তি দমানাে যাচ্ছে না। সেকারণে বৃহস্পতিবার বিকালে কংগ্রেস, সিপিএম, বিজেপি এবং তৃণমূল কংগ্রেসের প্রতিনিধিদের নিয়ে এক আলােচনাসভায় মিলিত হয়েছিলেন রাজ্যপাল। রাজনৈতিক মহলের মতে, রাজ্যপালের সঙ্গে আলােচনা সন্তোষজনক হলেও কোনও সমাধানসূত্র পাওয়া যায়নি।
সূত্রের খবরে জানা গিয়েছে, রাজ্যপাল বৈঠকে আগত দলীয় প্রতিনিধিদের বলেছেন, ভােট পরবর্তী হিংসা রুখতে আগে থাকতেই তৎপর হওয়া উচিত ছিল রাজ্য সরকারের। কিন্তু সেটা না হওয়ায় অশান্তির ঘটনা ঘটেই চলেছে। রাজ্যপালের ডাকা এই বৈঠকে তৃণমূলের মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায়, সিপিএমের মহম্মদ সেলিম, বিজেপির জয়প্রকাশ মজুমদার এবং কংগ্রেসের সােমেন মিত্র উপস্থিত ছিলেন।
প্রায় একঘন্টা ধরে রাজ্যপাল ভােট পরবর্তী হিংসা ঠেকানাে নিয়ে কি করণীয়, সেব্যাপারে চারটি প্রধান রাজনৈতিক দলের নেতাদের সঙ্গে কথা বলেন। সমস্ত রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধিরা এব্যাপারে তাদের নিজস্ব মতামত পেশ করেন। কিন্তু বৈঠকে উপস্থিত তৃণমূলের মহাসচিব কোনও মন্তব্য করা থেকে বিরত ছিলেন। দলের সঙ্গে আলােচনা করেই তিনি তার বক্তব্য জানাবেন বলে জানা গিয়েছে। আর পার্থবাবুর এই নীরবতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে অন্যান্য রাজনৈতিক দলগুলি।
জানা গিয়েছে, বৈঠকের পরে রাজ্যপালের সঙ্গে আলাদাভাবে কথা বলেন তৃণমূলের মহাসচিব। বৈঠক থেকে বেরিয়ে প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি সােমেন মিত্র বিষয়টি নিয়ে মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলতে রাজ্যপালকে অনুরােধ করেন। তিনি বলেন, রাজ্যপাল তীদেরকে বলেছেন, ভােট পরবর্তী হিংসা ঠেকাতে আগেই প্রশাসনের উদ্যোগী হওয়া উচিত ছিল। তিনি রাজ্যে শান্তি সম্প্রীতি বজায় রাখতে সকলকে অনুরােধ করেছেন। আমরা রাজ্যপালের এই উদ্যোগকে স্বাগত জানাচ্ছি।
সােমেনবাবুর মতে, কেন্দ্রের শাসক দল আর রাজ্যের শাসকদল নিজেদের মধ্যে লড়াই করছে। আর সেজন্য বাংলায় অশান্ত পরিবেশ তৈরি হয়েছে। এখানে কংগ্রেসের কিছু করণীয় নেই। অন্যদিকে সিপিএমের তরফে মহম্মদ সেলিমের বক্তব্য, নির্বাচনপর্ব মিটে যাওয়ার পরে রাজ্যে একের পর এক হিংসার ঘটনা ঘটছে।
২০১১ সালের পর থেকে কোনও সর্বদলীয় বৈঠক হয়নি। তিনি রাজ্যপালের উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়ে বলেছেন, শুধু চারটি প্রধান রাজনৈতিক দলকে ডেকে আলােচনা করলে হবে না। সমস্ত রাজনৈতিক দলকে ডেকে কথা বলতে হবে। সেলিম আরও বলেন, রাজ্যে এখন চিকিৎসকরা পর্যন্ত নিরাপত্তাহীনতায় ভুগতে শুরু করেছেন। রাজনৈতিক সংঘর্ষের ঘটনা যেন ক্রমশ সাম্প্রদায়িক সংর্ঘষের দিকে মােড় না নেয়, সেব্যাপারেও প্রশাসনকে তৎপর হতে পরামর্শ দিয়েছেন তিনি।
বিজেপির জয়প্রকাশ মজুমদার বলেন, সর্বদলীয় বৈঠক ডাকার জন্য তাঁরা রাজ্যপালকে ধন্যবাদ জানাচ্ছেন। তিনি অভিযােগ করেন, দলের অবস্থান স্পষ্ট করতে পারেননি পার্থবাবু। বৈঠকে আসার আগে এব্যাপারে দলের মতামত স্পষ্ট হওয়া উচিত ছিল। দলনেত্রী বৈঠকে আসতে পারতেন।
তাঁর দাবি, রাজ্যের আইনশৃঙ্খলা রক্ষার দায়িত্বে রাজ্য সরকার। কিন্তু তারা এই কাজ করতে ব্যর্থ হয়েছে। হিংসার ঘটনাও পাল্লা দিয়ে বাড়ছে এ রাজ্যে। জয়প্রকাশবাবু আরও বলেন, রাজ্যের শাসক দল হিংসার বাতাবরণ তৈরির চেষ্টা করলেও আগামী বিধানসভা নির্বাচনে রাজ্যে ক্ষমতায় আসবে বিজেপি। এবং ব্যাকডাের দিয়ে নয়, ভােটের মাধ্যমে গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতেই বিজেপি ক্ষমতায় আসবে বলেও মত প্রকাশ করেছেন তিনি।