দিল্লি, ২১ আগস্ট– নভেম্বরে ভোটে দেশের পাঁচ রাজ্য রাজস্থান, ছত্তীসগড়, মধ্যপ্রদেশ, তেলেঙ্গানা এবং মিজোরামে। কিন্তু এই পাঁচ রাজ্যের মধ্যে বর্তমানে মোদি সরকারের কাছে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে দাঁড়িয়েছে মধ্যপ্রদেশ। মধ্যপ্রদেশ যে বিজেপির পাখির চোখ তা প্রমান করছে রবিবার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ ভোপালে মধ্যপ্রদেশের বিজেপি সরকারের বিগত কুড়ি বছরের রিপোর্ট কার্ড প্রকাশ করাতেই । শুধু তাই নয় বিজেপি সিদ্ধান্ত নিয়েছে, নির্বাচন কমিশন ভোটের দিন ঘোষণার আগেই প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ওই রাজ্যে ছয়টি জনসভা করবেন। এছাড়া, কেন্দ্রীয় মন্ত্রী, নেতাদের বলা হয়েছে মধ্যপ্রদেশের জন্য সময় বের করে পার্টিকে জানাতে। সবাইকে ঘুরে ফিরে ওই রাজ্যে প্রচারে যেতে হবে।
যদিও অন্যান্য সব দলই পাঁচ রাজ্যের বিধানসভা নির্বাচনকে গুরুত্বপূর্ণ ধরে নিয়ে এগোচ্ছে ব্যাতিক্রম শুধু বিজেপি ।
গুজরাতের পর মধ্যপ্রদেশ দ্বিতীয় রাজ্য যেখানে বিজেপি টানা চারটে টার্ম সরকার চালাচ্ছে। গুজরাত বিজেপি অবশ্য অনেক এগিয়ে। আর কয়েক বছর পরই গুজরাতের বিজেপি সরকার বাংলায় বামফ্রন্ট সরকারের ৩৪ বছর ক্ষমতায় থাকার রেকর্ড টপকে যাবে।
ইতিমধ্যে রাজ্যের ২৩০টি বিধানসভা আসনে পদ্ম শিবির ২৩০জন পর্যবেক্ষক নিয়োগ করেছে। এই পর্যবেক্ষকেরা হলেন গুজরাত, বিহার, ঝাড়খণ্ড এবং মহারাষ্ট্রের বিজেপি বিধায়ক। ২০০৩- থেকে বিজেপির শিবরাজ সিং মধ্যপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রীর কুর্সি দখলে রেখেছেন। ২০১৮-র বিধানসভা ভোটে দল হেরে গেলেও বছর গড়াতেই দল ভাঙিয়ে কংগ্রেস সরকারকে হটিয়ে ক্ষমতায় ফেরে বিজেপি। ফের মুখ্যমন্ত্রী হন শিবরাজ, মধ্যপ্রদেশে ‘মামা’ নামেই যিনি সবচেয়ে জনপ্রিয়। তিনি নিজেই বলেন তাঁকে মামা বলে সম্মোধন করতে।
শিবরাজের কথায়, মামা কথাটি তাঁর দুটি কারণে পছন্দ। এক মায়ের ভাই মামা, সে তো আছেই। তাছাড়া শব্দটিকে দু’বার ‘মা’ কথাটি আছে। শিবরাজের কথায়, মধ্যপ্রদেশে নারী তথা মাতৃশক্তির বিকাশে আমার কাজ গোটা দেশের মডেল। তাই আট থেকে আশি সবাই আমাকে মামা বলে সম্মোধন করে।
শুধু শিবরাজের কথাই নয়, পদ্ম শিবিরও মধ্যপ্রদেশকে ‘মামার রাজ্য’ বলে থাকে। পদ্ম নেতারা এখন এবেলা ওবেলা মামার রাজ্যে ছুটছেন। এমনটাই নির্দেশ মোদি-শাহ-নাড্ডার। আসলে ভোটমুখী পাঁচ রাজ্যের মধ্যে একমাত্র মধ্যপ্রদেশেই বিজেপি ক্ষমতায় আছে।
তবে বিজেপি নেতারা জানেন, দু-দশক ক্ষমতায় থাকা সরকারের বিরুদ্ধে প্রতিষ্ঠান বিরোধিতার সুরও সমানতালে বেড়েছে। তাছাড়া, রাজ্যে কংগ্রেসের বোলবোলা দেখেও পদ্ম শিবির চিন্তিত। বিজেপিকে হিন্দুত্বের পথে ঘায়েল করতে মরিয়া কংগ্রেস।
বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের বক্তব্য হল, বাকি চার রাজ্যে জয় হাসিলের মতোই মধ্যপ্রদেশে ক্ষমতা ধরে রাখতে তাঁরা ঝাঁপাচ্ছেন। তবে লোকসভা ভোটের অঙ্কে মধ্যপ্রদেশে ক্ষমতা ধরে রাখা অনেক বেশি জরুরি। কারণ, ক্ষমতাসীন রাজ্য হাতছাড়া হলে পার্টিকে বেশি বিপাকে পড়তে হয়, কর্নাটকের ভোটে বিপর্যয়ের পর দল তা টের পেয়েছে। দলের নির্বাচনী কৌশল বদলাতে হয়েছে দক্ষিণের ওই একমাত্র রাজ্যটি হাতছাড়া হওয়ায়। মধ্যপ্রদেশে কর্নাটকের পুনরাবৃত্তি হলে লোকসভা ভোটের আগে পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার সময় পাওয়া যাবে না। তাই মধ্যপ্রদেশে সরকার টিকিয়ে রাখাকে পাখির চোখ করেছেন মোদি-শাহরা।