দিল্লি, ৭ আগস্ট– কেন্দ্র বনাম দিল্লি আপ সরকার সংঘাত চরমে। সেই সংঘাতের সাম্প্রতিক উদাহরণ দিল্লি অর্ডিন্যান্স । ইতিমধ্যেই অফিসারদের ট্রান্সফার, পোস্টিংয়ের অধিকার দিল্লির হাত কেড়ে নিতে কেন্দ্রীয় সরকার নিজের জারি করা অর্ডিন্যান্সটি গত সপ্তাহে লোকসভায় রাখে। সেটি ধ্বনি ভোটে পাশও হয়ে গিয়েছে। সোমবার সেই বিলটি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ রাজ্যসভায় পেশ করেন । সোম ও মঙ্গলবার বিলের উপর বিতর্ক হবে। মঙ্গলবার হবে ভোটাভুটি।
যদিও এতো সহজে এই বিল আইনে রূপান্তরিত হোক তা হতে দিতে রাজি নয় দিল্লির আপ সরকার। আর তাই সংসদে এই অর্ডিন্যান্স আটকে দিতে দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী তথা আম আদমি পার্টির সুপ্রিমো অরবিন্দ কেজরিওয়াল বিজেপি বিরোধী দলগুলির নেতা ও মুখ্যমন্ত্রীদের সঙ্গে বৈঠক করেন । পশ্চিমবঙ্গ-সহ একাধিক রাজ্য সফর করেন তিনি। কংগ্রেস প্রথমে এই ইস্যুতে গড়িমসি দেখালে বিরোধী জোটের প্রশ্নে হুঁশিয়ারিও দিতে দেখা যায় কেজরিওয়ালের। শেষে বিরোধী ঐক্যের স্বার্থে কংগ্রেস বিলের বিরুদ্ধে ভোট দেওয়ার কথা ঘোষণা করেছে। কেজরিওয়াল ঘোষণা করেছিলেন, রাজ্যসভায় বিজেপিকে হারিয়ে দিতে পারলে সেটা হবে ২০২৪-এর আগে বিরোধীদের সেমি ফাইনাল বিজয়।
তবে কেজরিওয়ালের এই ঘোষণা যে ফাঁকা আওয়াজ তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। কারণ শাসক দল হেলায় বিলটি রাজ্যসভাতেও পাশ করিয়ে নেবে। অন্তত সভার অঙ্ক তাই বলছে।
রাজ্যসভায় বিজেপি-সহ এনডিএ শিবিরের সদস্য সংখ্যা ১০৩জন। বিজেপির আশা এক নির্দল এবং পাঁচ মনোনীত সাংসদের ভোট তারা পাবে। এছাড়া বিজু জনতা দল ও ওয়াইএসআর কংগ্রেসের নয়জন করে মোট ১৮ জন সাংসদ আছেন যাঁরা দলের সিদ্ধান্ত মতো বিলের পক্ষে ভোট দেবেন। এই ব্যাপারে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে ওড়িশা ও অন্ধ্রপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যথাক্রমে নবীন পট্টনায়েক এবং জগনমোহন রেড্ডির টেলিফোনে কথা হয়েছে। সব মিলিয়ে বিলের পক্ষে ভোট পড়তে পারে ১২৮টি। ফলে নির্দল এবং মনোনীতরা ভোটদানে বিরত বা বিরোধী পক্ষকে সমর্থন দিলেও বিলের পক্ষে ১১৯টি ভোট পড়বে।
তারপরও রাজ্যসভায় দিল্লি অর্ডিন্যান্স বিতর্ককে ভিন্ন দৃষ্টিতে দেখছে রাজনৈতিক মহল। আপ শাসিত দিল্লি সরকারের পাশে দাঁড়াতে শুধু কংগ্রেস নয়, বিরোধী শিবিরের অনেক দলেরই আপত্তি ছিল। কিন্তু বিজেপির বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ লড়াইয়ের বার্তা দিতেই অর্ডিন্যান্স বিরোধিতাকে হাতিয়ার করে সংসদে থাকা বেশিরভাগ বিরোধী দল একজোট হয়েছে। বিল নিয়ে বিতর্কে এবং ভোটাভুটিতে ঐক্যবদ্ধ জোটবার্তা তুলে ধরাই বিরোধী ‘ইন্ডিয়া’ শিবিরের কাছে অগ্নিপরীক্ষা। লোকসভা ভোটের আগে ঐক্যবদ্ধভাবে সরকারের বিরুদ্ধে এক সুরে কথা বলার এবারই শেষ সুযোগ। ভোটের আগে শুধু ফেব্রুয়ারি মাসে স্বল্প মেয়াদের অধিবেশন বসবে অন্তবর্তীকালীন বাজেট পাশ করাতে। সেখানে বিল পাশ বা অন্য কোনও ইস্যুতে বিতর্কের তেমন একটা সুযোগ নেই। সরকারপক্ষ সেই সুযোগ দেবে না।