কলকাতা, ১ অগাস্ট – দক্ষিণ কলকাতার বেডে শুয়ে যখন শারীরিক অসুস্থতার সঙ্গে লড়াই চালাচ্ছেন রাজ্যের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য, তখন নিজের শারীরিক প্রতিবন্ধকতাকে উপেক্ষা করে হালিশহর থেকে তিন চাকার হাত- সাইকেল চালিয়ে সেখানে পৌঁছে যান রবি দাস। প্রিয় নেতার অসুস্থতার খবর পেয়ে আর স্থির থাকতে পারেননি তিনি । শনিবার সুদূর হালিশহর থেকে ৭২ কিলোমিটার দূরের হাসপাতালে রওনা হন প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের একনিষ্ঠ ভক্ত রবি দাস। রওনা হওয়ার আগে তিনচাকার হাতসাইকেলে বেঁধে নেন লাল পতাকা। গন্তব্য আলিপুরের উডল্যান্ডস হাসপাতাল।
উত্তর ২৪ পরগনার হালিশহর থেকে ট্রাইসাইকেলে করে পেরিয়েছেন মাইলের পর মাইল পথ। তিন চাকার ওই হাত সাইকেল মুড়ে নিয়েছিলেন লাল পতাকায়। নিজের পরনে লাল গেঞ্জি, মাথায় লাল টুপি। এমন দৃশ্যই দেখা যায় মহানগরীর রাস্তায়। মনের টান আর মনের জোরে গত শনিবার হালিশহর থেকে রওনা হন। সোমবার রাতে তিনি পৌঁছন আলিপুরের সেই বেসরকারি হাসপাতালে, যেখানে ভর্তি রয়েছেন বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য। হাসপাতালে পৌঁছনোর পর তিনি বললেন, ‘বুদ্ধবাবু যতদিন না সুস্থ হয়ে উঠছেন, ততদিন হাসপাতাল চত্বরেই থাকব আমি।’৩ দিনের যাত্রাপথে পথে অনেক বিপত্তি ঘটে। সাইকেল খারাপ হয়ে যায়, চাকার হাওয়া শেষ হয়ে যায় , ছিনতাই হয়ে যায় সঙ্গে থাকা টাকাপয়সা। কিন্তু সব বাধা পেরিয়ে কলকাতার উডল্যান্ডস হাসপাতালে পৌঁছে যান রবি দাস। জানিয়েছেন, এর আগে সিঙ্গুর কিংবা ব্রিগেডেও ওঁর সঙ্গে দেখা করতে গেছেন তিনি। হাসপাতালের অন্দরে যখন মেডিকেল টিমের হাতে আচ্ছন্ন অবস্থায় চিকিৎসারত তাঁর প্রিয় নেতা বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য, তখন বাইরে রবি দাসের চোখেও ঘুমের লেশমাত্র নেই। জানিয়ে দিয়েছেন বুদ্ধবাবু যতদিন না সুস্থ হয়ে উঠছেন, ততদিন হাসপাতাল চত্বরেই থাকবেন তিনি।
বামেদের ব্রিগেড সমাবেশেও হালিশহর থেকে কলকাতায় এভাবেই এসেছেন। ব্রিগেডের দু’দিন আগেই ময়দানে পৌঁছে যান । একমাস আগে উত্তর ২৪ পরগনা জেলা সিপিএমের সমাবেশেও একইভাবে পৌঁছে যান হালিশহর ২৪ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা রবি দাস। আর এবার হালিশহর থেকে কলকাতায় আসার যাত্রাপথে তাঁকে অনেক ঝক্কি-ঝামেলা সামলাতে হয়, কষ্ট স্বীকার করতে হয়। তবু হার মানেননি। প্রিয় নেতাকে দেখতে পৌঁছেছেন আলিপুরের বেসরকারি হাসপাতালে। কমরেড রবি দাস জানান , ‘ টাকা পয়সা ছিনতাই করে পালিয়েছে, সাইকেলের হাওয়া খুলে দিয়েছে, এমনকী সাইকেলের একটা অংশ ভেঙেও দেয়।’ তবে সেসবই তুচ্ছ করেছেন রবি। রাতের কলকাতায় হাসপাতালের বাইরের আলো-আঁধারিতে তাঁর হাত-সাইকেলে বসে তিনি বলে ওঠেন, ‘এই লড়াই তোমায় জিততেই হবে কমরেড’। ভোরের আলো ফুটতে সংবাদ মাধ্যমের ভিড় , চিকিৎসকরা জানালেন, চিকিৎসায় সাড়া দিচ্ছেন বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য। হাসপাতালের বাইরের এককোণে তখন হাত সাইকেলে রবির চোখে একরাশ ঘুম, নিশ্চিন্ত ঘুম।