কলকাতা, ৩০ জুলাই – শারীরিক সংকট না কাটায় পূর্ণাঙ্গ ভেন্টিলেশনেই রয়েছেন প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য। চিকিৎসকদের চিন্তায় রেখেছে তাঁর ফুসফুসের সংক্রমণ। তবে তাঁর হার্টের অবস্থা ভালো হওয়ায় ফুসফুসের জটিল সংক্রমণ সত্ত্বেও লড়াই চালিয়ে যাচ্ছেন। রবিবার এমনটাই জানান তাঁর চিকিৎসকরা। হাসপাতালের তরফ থেকে প্রেস বিবৃতি জারি করে বুদ্ধদেবের শারীরিক অবস্থা সম্পর্কে ওয়াকিবহাল করা হয়। পরে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন মেডিক্যাল বোর্ডের অন্যতম সদস্য কৌশিক চক্রবর্তী। তিনি জানান, শনিবার সন্ধ্যা থেকে বুদ্ধদেবের অ্যান্টিবায়োটিকের ডোজ পরিবর্তন করা হয়। সেই ওষুধের ফল পেতে ২৪ থেকে ৩৬ ঘণ্টা অপেক্ষার দরকার। তারপর প্রয়োজন বুঝে চিকিৎসা হবে।
শনিবার হাসপাতলে ভর্তির পর থেকেই মেডিকাল বোর্ডের কড়া নজরদারিতে রয়েছেন বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য। প্রথমে তাঁকে ননইনভেসিভ ভেন্টিলেশনে রাখা হলেও, রাতের দিকে শারীরিক অবস্থার অবনতি হওয়ায় ইনভেসিভ ভেন্টিলেশন স্থানান্তরিত করা হয়। রবিবার বুদ্ধদেবকে দেখেন হৃদ্রোগ বিশেষজ্ঞ সরোজ মণ্ডল। তাঁর ইকো কার্ডিয়োগ্রামের রিপোর্ট ভাল বলে জানিয়ে চিকিৎসক কৌশিক চক্রবর্তী বলেন, ‘‘বুদ্ধদেববাবুর ‘কার্ডিয়াক ফাংশন’ বেশ ভাল। তাই ফুসফুসের অবস্থা খারাপ থাকলেও উনি লড়ে যাচ্ছেন। সুগারের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখতে ইনসুলিন দেওয়া হচ্ছে। রাইলস টিউবের মাধ্যমে তাঁকে খাবার দেওয়া হচ্ছে। কোনও সমস্যা ছাড়াই খাদ্যনালী দিয়ে খাবার শরীরে ঢুকছে। এটা ভাল লক্ষণ।’’ চিকিৎসক কৌশিক চক্রবতী আরও বলেন, “ইনফেকশন কন্ট্রোল কেমন হয়, অক্সিজেন স্যাচুরেশন বাড়ে কিনা , সেই সব দেখে পরবতী সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। তাঁর সুগার লেভেল ২০০-র নিচে নামানো গেছে ইনসুলিন দিয়ে। তবে এখনো তিনি সংকটে রয়েছেন। তবে তিনি কানে শুনতে পাচ্ছেন, মাথা নাড়ছেন, কখনও কখনও ইশারায় কিছু বোঝানোর চেষ্টা করছেন।” কৌশিক চক্রবর্তী আরও বলেন, ‘সবে আমরা ঘুমের ওষুধ বন্ধ করেছি। রোগী অনেকটাই সাহায্য করছেন। কাল (সোমবার ) আমরা সিটি স্ক্যান করতে পারি। সব ব্লাড টেস্ট করা হয়েছে , ঠিক আছে। ‘
তবে চিকিৎসায় সাড়া দিলেও বেশকিছু উদ্বেগের বিষয়ও রয়েছে। চিকিৎসক কৌশিক চক্রবর্তী জানিয়েছেন, প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রীর শরীরে ক্লেবশিয়েলা নামক একটি ব্যাক্টেরিয়া পাওয়া গেছে । এই ব্যাক্টিরিয়া ‘মাল্টি ড্রাগ রেজিস্ট্যান্স’। অর্থাৎ, শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে দুর্বল করে দেয়। পাশাপাশি কোনও ওষুধের প্রতিক্রিয়াও হতে দেয় না শরীরে। সেই কারণেই বুদ্ধদেববাবুর অ্যান্টিবায়োটিক বদল করা হয়। চিকিৎসক জানাচ্ছেন, আগামী ৪৮ ঘণ্টা খুবই গুরুত্বপূর্ণ হতে চলেছে বুদ্ধবাবুর জন্য।
হাসপাতাল সূত্রে খবর, প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের রক্তে ক্রিয়েটিনের মাত্রাও বেশি। প্রায় ৬০ গুণ বেশি ক্রিয়েটিন তাঁর শরীরে রয়েছে। রক্তচাপও কমছিল তাঁর। তাই তাঁকে পুরোপুরি ভেন্টিলেশনে দেওয়া হয়। জানা গেছে, বুদ্ধবাবুর ‘টাইপ ২ রেসপিরেটরি ফেলিওর’ হয়েছে। অর্থাৎ, রক্তে কার্বন-ডাই-অক্সাইডের মাত্রা বেশি , অক্সিজেনের মাত্রা কম। রবিবার চিকিৎসক কৌশিক চক্রবর্তী সংবাদমাধ্যমকে বলেন, ‘বুদ্ধবাবুর শরীর এখন কতটা অ্যান্টিবায়োটিক কতটা গ্রহণ করতে পারছে, বা সেই ওষুধ কতটা কাজে দিচ্ছে, নিউমোনিয়ার প্রভাব কমছে কিনা, এখনই বোঝা সম্ভব নয়। সেই কারণেই আমরা ভেন্টিলেশনে রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। এখন ওনাকে যে অ্যান্টিবায়োটিক দেওয়া হয়েছে তাতে কাজ হবে বলে আমরা আশা করছি।’ তাঁর কথায়, আগামী ৪৮ ঘণ্টার পর্যবেক্ষণ খুবই গুরুত্বপূর্ণ হতে চলেছে।
রবিবার সকালে বাবাকে দেখতে হাসপাতালে আসেন ভট্টাচার্য দম্পতির একমাত্র সন্তান সুচেতন। প্রাক্তন সতীর্থের খোঁজ নিতে হাসপাতালে আসেন বামফ্রন্ট চেয়ারম্যান বিমান বসু। মেডিক্যাল বোর্ডের বৈঠকে হাজির ছিলেন সিপিএমের প্রাক্তন রাজ্য সম্পাদক সূর্যকান্ত মিশ্র। তিনি বলেন, ‘‘কাল রাত (শনিবার) থেকে অবস্থার উন্নতি হয়েছে। সেন্স এসেছে। ডাকলে সাড়া দিচ্ছেন। সংক্রমণের যা উপসর্গ ছিল, তা কমেছে।’’ হাসপাতালে এসে বুদ্ধদেবের খোঁজ নিয়েছেন ভাঙড়ের বিধায়ক নওশাদ সিদ্দিকি, সিপিএম নেতা রবীন দেব, সুজন চক্রবর্তী, কংগ্রেসের কৃষ্ণা দেবনাথ, শুভঙ্কর সরকার প্রমুখ।
বুধবার থেকে জ্বর আসে বুদ্ধবাবুর। শুক্রবার থেকে শুরু হয় মারাত্মক শ্বাসকষ্ট।শনিবার দুপুরে শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে তাঁকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সন্ধ্যায় কিছুটা স্থিতিশীল হলেও রাতে ফের সঙ্কটজনক হয় তাঁর শারীরিক অবস্থা। জানা যায়, বুদ্ধদেববাবুর ফুসফুসের সংক্রমণ অনেকটাই বেশি। তখন তাঁকে ইনভেনসিভ ইউনিটে স্থানান্তর করা হয়। এমনিতে দীর্ঘদিন ধরে ক্রনিক অবস্ট্রাকটিভ পালমোনারি ডিজিজে ভুগছেন বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য। এর আগেও কয়েকবার হাসপাতালে ভরতি হয়েছেন তিনি। তবে বরাবরই হাসপাতালে ভরতি হওয়ার ক্ষেত্রে তাঁর অনীহা প্রকাশ পেয়েছে ।