২০১৯ সালের ৭ ফেব্রুয়ারি লোকসভা নির্বাচনের ঠিক আগে সংসদের বাজেট অধিবেশনে রাষ্ট্রপতির বক্তব্য নিয়ে বিতর্ক চলছিল। সংবাদ সংস্থা পিটিআইয়ের প্রতিবেদন অনুসারে, সেই সময় বক্তব্য রাখতে উঠে বিরোধীদের উদ্দেশে মোদি বলেছিলেন, “ প্রস্তুত থাকুন, কারণ আপনারা আবার ২০২৩ সালে অনাস্থা প্রস্তাব আনার সুযোগ পাবেন।” এই ভিডিও দেখিয়ে বিজেপির তরফে মোদি র ‘নির্ভুল ভবিষ্যৎবাণী’র প্রশংসা করা হচ্ছে। তবে রাজনীতিকদের একাংশ মনে করছেন, চার বছর আগে সংসদে ওই বক্তব্য রেখে মোদি বিরোধীদের উদ্দেশে এই বার্তাই দিতে চেয়েছিলেন যে, ২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনে ক্ষমতায় আসার ব্যাপারে তিনি নিশ্চিত। বিরোধীরা ২০২৪ সালের লোকসভা নির্বাচনের আগে আবার অনাস্থা প্রস্তাব আনতে পারে বলেও ইঙ্গিত দিয়ে রেখেছিলেন তিনি।
বিরোধীরা অনাস্থা প্রস্তাব আনলেও মোদি সরকারের কোনও সঙ্কট তৈরি হবে না। কারণ খাতায় কলমে ৩৩২ জন সাংসদের সমর্থন রয়েছে শাসক পক্ষের দিকে। অর্থাৎ একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে লোকসভায় এই মুহূর্তে ক্ষমতায় রয়েছে মোদি সরকার। বিরোধী দলগুলির অবশ্য বক্তব্য, মণিপুর নিয়ে সরকারের ‘নীরবতা’ ভাঙাতেই তারা সংসদে অনাস্থা প্রস্তাব এনেছেন। এই প্রসঙ্গে ‘ইন্ডিয়া’র অন্যতম শরিক শিবসেনার তরফে বলা হয়েছে, মণিপুর নিয়ে বক্তব্য রাখার জন্য প্রধানমন্ত্রী মোদি যাতে সংসদে আসেন, সেই কারণেই অনাস্থা প্রস্তাব আনা হয়েছে। বিরোধীদের আনা অনাস্থা প্রস্তাব সম্পর্কে সংসদ বিষয়ক মন্ত্রী প্রহ্লাদ জোশী বলেন, “প্রধানমন্ত্রী মোদি এবং বিজেপির উপর মানুষের আস্থা রয়েছে। বিরোধীরা আগেও অনাস্থা প্রস্তাব এনেছেন। কিন্তু মানুষ ওদের উচিত শিক্ষা দিয়েছে।”
লোকসভার অধ্যক্ষ ও বিড়লা অনাস্থা প্রস্তাব নিয়ে বলেন, ‘ সব দলের নেতাদের সঙ্গে এই বিষয়ে আলোচনা করব , তারপর আপনাদের জানাব, কোন সময়ে এই অনাস্থা প্রস্তাব আলোচনার জন্য সংসদে তোলা হবে।
উল্লেখ্য, মেইতেই এ কুকি জনজাতির মধ্যে গত ৩ মার্চ থেকে শুরু করে গত দুই মাসেরও বেশি সময় ধরে উত্তপ্ত মণিপুর। সম্প্রতি মণিপুরে দুই মহিলাকে বিবস্ত্র করে ঘোরানো এবং গণধর্ষণের ঘটনার কথা প্রকাশ্যে এসেছে। ৭৮ দিন পর মণিপুর নিয়ে মুখ খোলেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেছেন, ‘‘এই ঘটনা যে কোনও সভ্য সমাজের লজ্জা।’’ তবে তাতে ক্ষোভ দমানো যায়নি। মণিপুরের ঘটনায় সংসদে প্রধানমন্ত্রীর বিবৃতির দাবিতে সরব বিরোধীরা। ২০ জুলাই সংসদের বাদল অধিবেশনের শুরুর দিন থেকেই এই ইস্যুতে উত্তাল হয়েছে লোকসভা ও রাজ্যসভা। বিরোধীদের প্রতিবাদের জেরে বারবার মুলতুবি হয়েছে অধিবেশন। প্রধানমন্ত্রীর বিবৃতি দাবি করা হয়েছে। কিন্তু সংসদীয় মন্ত্রীর তরফে এ নিয়ে কোন উলেখ করা হয়নি। এরপর ইন্ডিয়া জোটের তরফে অনাস্থা আনার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।