• facebook
  • twitter
Saturday, 23 November, 2024

প্রয়াত নাট্যকার গিরিশ কারনাড

বাধ্যৰ্কজনিত অসুখে দীর্ঘদিন ভােগার পর আজ শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করলেন প্রখ্যাত নাট্যকার, অভিনেতা ও পরিচালক গিরিশ কারনাড। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৮১ বছর।

গিরিশ কারনাড (Photo: IANS)

বাধ্যৰ্কজনিত অসুখে দীর্ঘদিন ভােগার পর আজ শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করলেন প্রখ্যাত নাট্যকার, অভিনেতা ও পরিচালক গিরিশ কারনাড। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৮১ বছর।

সােমবার সকালে বেঙ্গালুরুতে নিজের বাসভবনে মৃত্যু হয় অভিনয় মঞ্চের বিখ্যাত নক্ষত্রের। তাঁর মৃত্যুতে রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী সহ বিভিন্ন বিশিষ্ট ব্যক্তিরা শােক প্রকাশ করেছেন।

কিছুকাল যাবৎ বার্ধক্যজনিত রােগে ভুগছিলেন গিরিশ কারনাড। শরীরের একাধিক অঙ্গপ্রত্যঙ্গ কাজ করা বন্ধ করে দিয়েছিল।

১৯৩৮ সালে ১৯ মে মহারাষ্ট্রের মাথেরানে জন্ম হয় এই কন্নড় নাট্যকারের। ষাটের দশকে প্রথম নাট্যকার হিসাবে তাঁর আত্মপ্রকাশ। কন্নড় ভাষায় একাধিক নাটক তিনি লিখেছিলেন। তাঁর বেশ কয়েকটি নাটক দেশের বিভিন্ন ভাষায় অনুবাদ করা হয়েছিল। ইংরেজি ভাষাতেও তাঁর লেখা নাটক অনুবাদ করা হয়েছে।

দেশের সর্বোচ্চ সম্মান পদ্মশ্রী (১৯৭৪), পদ্মভূষণ (১৯৯২) এবং জ্ঞানপীঠ পুরস্কারে তিনি সম্মানিত হয়েছেন। চারটি ফিল্মফেয়ার পুরস্কারও রয়েছে তাঁর ঝুলিতে। সেই সঙ্গে পুরস্কৃত হয়েছেন সঙ্গীত অ্যাকাদেমি, কালীদাস সম্মানে।

প্রখ্যাত নাট্যকার গিরিশ কারনাডের বিখ্যাত নাটকগুলির মধ্যে রয়েছে ‘নাগমন্ডলা’, ‘যযাতি’, ‘তুঘলক’। তিনি ছােট পর্দাতেও অভিনয় করেছেন। তাঁকে দেখা গেছে ‘মালগুডি ডেজ’ এবং ‘ইন্দ্রধনুষ’ টিভি সিরিয়ালে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকায়।

পুণের ফিল্ম ইনস্টিটিউট ‘এফটিআইআই’-এর ডিরেক্টর পদে ছিলেন। পরে সঙ্গীত নাট্য অ্যাকাডেমি চেয়ারম্যান হন। তাঁর মৃত্যুতে শােকের ছায়া নেমে এসেছে নাট্য এবং ছবির জগতে। মঞ্চ থেকে অভিনয় জীবন শুরু করেন গিরিশ কারনাড। চার দশক ধরে দক্ষতার সঙ্গে অভিনয় করেছেন। পুরাণ ও ইতিহাসের সঙ্গে আধুনিক ভাবনার মেলবন্ধের নমুনা মেলে প্রখ্যাত এই নাট্যকারের সৃষ্টিতে।

মঞ্চতেই প্রয়াত গিরিশ কাডনাডে প্রতিভা থেমে থাকেনি। সেলুলয়েডে তিনি দক্ষতার সঙ্গে অভিনয় করেছেন। দক্ষ এই অভিনেতা দক্ষিণী ছবির সঙ্গে হিন্দি ছবিতেও তাঁর অভিনয় দক্ষতা দেখিয়ে গেছেন। তিনি মারাঠি, তেলুগু, তামিল ও হিন্দিতেও অভিনয় করেছেন।

গিরিশ কারনাড মঞ্চ থেকে রুপলি পর্দায় পা রাখেন ১৯৭০ সালে কন্নড় ভাষায় ‘সমসকারা’ ছবি দিয়ে। একের পর এক ছবিতে নিজের দক্ষতা দেখিয়েছেন এই অভিনেতা।

তাঁর অভিনীত উল্লেখযােগ্য ছবির মধ্যে রয়েছে মন্থন (১৯৭৬), পুকার (২০০০), ইকবাল (২০০৫), ডাের (২০০৬), এক থা টাইগার (২০১২) সহ একাধিক হিন্দি ছবিতে। তাঁর অভিনয় দর্শকরা চিরকাল মনে রাখবেন। দক্ষিণে কন্নর ছাড়াও তামিল ও তেলেগু ছবিতে তাঁকে অভিনয় করতে দেখা যায়।

গিরিশ কারনাডের লেখনী ক্ষমতার জোরে তিনি খ্যাতি অর্জন করেছিলেন লেখক, নাট্যকার ও চিন্তাবিদ হিসাবে। তিনি একজন সফল পরিচালকও ছিলেন। অক্সফোর্ডের এই প্রাক্তনী ১৯৯৮ সালে জ্ঞানপীঠ পুরস্কার পান। ধর্মান্ধতা বিরুদ্ধে কলম ধরেছেন কারনাড। অতি বামপন্থী বলে পরিচিত এই শিল্পী-লেখক কট্টর হিন্দুবাদীদের হাতে নিহত লেখক ও সাংবাদিকদের মৃত্যুতে কড়া সমালােচনা করেছেন।

১৯৬১ সালে তাঁর লেখা ‘যযাতি’ নাটকটি বিপুল জনপ্রিয়তা পেয়েছিল। তারপর ‘নাগমন্ডলা’, ‘তুঘলক’-এর মতাে সফল নাটকের নাট্যকার ছিলেন তিনি। ছােট পর্দাতেও তাঁকে অভিনয় করতে দেখা যায়। ‘মালগুডি ডেজ’ বা ‘ইন্দ্রধনুষ’ টিভি সিরিয়ালে তাঁর অভিনয় মনে রাখার মতাে।

পুণের ফিল্ম ইনস্টিটিউড ‘এফটিআইআই’-এর ডিরেক্টর ছিলেন গিরিশ কারনাড। পরে তিনি সঙ্গীত নাট্য অ্যাকাডেমির চেয়ারম্যান হয়েছিলেন। তাঁর মৃত্যুকে শােকের ছায়া নেমে এসেছে মঞ্চ এবং চলচ্চিত্র জগতে। সােমবারই তাঁর শেষকৃত্য সম্পন্ন হবে।

শােকবার্তায় মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় টুইটে বলেছেন, ‘বিশিষ্ট নাট্যব্যক্তিত্ব ও চলচিত্র অভিনেতা গিরিশ কারনাডের মৃত্যুতে আমি গভীর শােক প্রকাশ করছি। আজ ৮১ বছর বয়সে বেঙ্গালুরুতে তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেছেন। কন্নড় ও হিন্দি নাটক ও চলচ্চিত্র জগতে তিনি দীর্ঘ সময় ধরে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন। পরিবার, পরিজন ও অসংখ্য অনুরাগীদের প্রতি আন্তরিক সমবেদনা জানাচ্ছি’।

গিরিশ কারনাডের মৃত্যুতে শােক প্রকাশ করেছেন রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দ। তিনি টুইটে জানিয়েছেন, ‘লেখক, অভিনেতা ও ভারতীয় নাটকের কিংবদন্তির মৃত্যুতে শােকস্তব্ধ। সংস্কৃতি জগতের অভাবনীয় ক্ষতি হল। তাঁর পরিবারের প্রতি আমার সমবেদনা রইল’।

প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মােদি টুইটে জানিয়েছেন, ‘গিরিশ কারনাড চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবেন বিভিন্ন মাধ্যমে তাঁর বহুমুখী প্রতিভার জন্য। আগামী দিনেও তাঁর সৃষ্টি একইভাবে জনপ্রিয় হয়ে থাকবে’।

কর্ণাটকের মুখ্যমন্ত্রী কুমারাস্বামী শােকবার্তায় জানিয়েছেন, ‘সাহিত্যিক, অভিনেতা ও পরিচালক গিরিশ কারানাডের মৃত্যুতে নাট্যজগতের একটি যুগের অবসান হল। তাঁর আচমকা মৃত্যুতে আমি শােকস্তব্ধ’।

গিরিশ কারনাডের সমকালীন অভিনেত্রী শাবানা আজমি টুইটে জানিয়েছে, ‘সংবাদটি শুনে মর্মাহত। তাঁর পরিবারের সঙ্গে কথা বলার মতাে অবস্থা আমার নেই’।

বলিউডের অন্যান্য অভিনেতা, অভিনেত্রীরা এই অভিনেতার মৃত্যুতে গভীর শােকপ্রকাশ করেছেন। অনিল কাপুর টুইটে লিখেছেন, ‘পুকার ছবিতে আমি ওনার সঙ্গে প্রথম অভিনয় করি। তিনি একজন বড় মাপের মানুষ ছিলেন’।

অনুপম খের জানিয়েছেন, ‘বিখ্যাত চিত্রনাট্যকার, অভিনেতা ও সাহিতিকের জীবনাবসানে গভীর শােক জানাই’।