• facebook
  • twitter
Friday, 22 November, 2024

নির্বাচন কমিশনকে নজিরবিহীন আক্রমণ রাজ্যপালের 

কলকাতা, ৬ জুলাই – পঞ্চায়েত ভোটকে কেন্দ্র করে হিংসা এবং সন্ত্রাসের ঘটনায় রাজ্য নির্বাচন কমিশনের সমালোচনায় মুখর হলেন রাজ্যপাল সি ভি আনন্দ বোস। রাজভবনে ‘পিস কনফারেন্স’ -এ রাজ্য নির্বাচন কমিশনের কঠোর সমালোচনা করে রাজ্যপাল বলেন, রাজ্যের বিভিন্ন জায়গায় যেভাবে সন্ত্রাস ছড়িয়ে পড়ছে তার জন্য দায়ী রাজ্য নির্বাচন কমিশন। রাজ্যে একের পর এক মৃত্যুর ঘটনার জন্যও নির্বাচন

কলকাতা, ৬ জুলাই – পঞ্চায়েত ভোটকে কেন্দ্র করে হিংসা এবং সন্ত্রাসের ঘটনায় রাজ্য নির্বাচন কমিশনের সমালোচনায় মুখর হলেন রাজ্যপাল সি ভি আনন্দ বোস। রাজভবনে ‘পিস কনফারেন্স’ -এ রাজ্য নির্বাচন কমিশনের কঠোর সমালোচনা করে রাজ্যপাল বলেন, রাজ্যের বিভিন্ন জায়গায় যেভাবে সন্ত্রাস ছড়িয়ে পড়ছে তার জন্য দায়ী রাজ্য নির্বাচন কমিশন। রাজ্যে একের পর এক মৃত্যুর ঘটনার জন্যও নির্বাচন কমিশনকেই দায়ী করেছেন সি ভি আনন্দ বোস।
বৃহস্পতিবার সকালে বাংলার উদ্দেশে ভাষণ দেন রাজ্যপাল। এদিন তিনি প্রশ্ন তোলেন, ‘পঞ্চায়েত ভোটে যদি গণতন্ত্রের হত্যা হয়, তা হলে খুনি কে? রাজ্য নির্বাচন কমিশন, তোমার জানা উচিত, খুনি কে? তুমি কি দয়া করে হাত তুলবে?’ ভাঙড়, ক্যানিং, বাসন্তী সহ রাজ্যের বিভিন্ন অংশে বেলাগাম সন্ত্রাস চলেছে বলে অভিযোগ করেন রাজ্যপাল। নির্বাচন কমিশনার রাজীব সিনহাকে কার্যত হুঁশিয়ারি দিয়ে রাজ্যপাল বলেন, ‘রাজ্যে একের পর এক খুনের ঘটনা ঘটেছে। এই ঘটনার জন্য নির্বাচন কমিশনকে দায় নিতে হবে। নির্বাচন কমিশনার আপনাকে বলছি, এখনও সময় রয়েছে। মানুষের কাছে যান, তাঁদের সঙ্গে কথা বলুন। আপনারা এক দফায় ভোট ঘোষণা করেছেন। কেউ আপনাদের পথে বাধা হয়ে দাঁড়ায়নি। এমনকী কলকাতা হাইকোর্টও নয়। দয়া করে মানুষের দাবি শুনুন।’ তাঁর কথায়, ‘আমি ভেবেছিলাম, বাংলার গ্রামে গঞ্জে গিয়ে দেখব, চিত্ত হেথায় ভয় শূন্য, উচ্চ হেথায় শির। কিন্তু এসে যা দেখলাম তা সম্পূর্ণ বিপরীত। মানুষের মনে ভয়, মাথা হেঁট হয়ে আছে। গ্রামে গিয়ে বিধবার কান্না শুনেছি, পুত্রহারা মায়ের কান্না দেখেছি। কী করে এসব বন্ধ হবে, যখন রক্তাসুরের হাতেই ক্ষমতা। তবে মনে রাখতে হবে, রক্তাসুর থাকলে মহাকালীও থাকবে। পঞ্চায়েত ভোটে রাজ্য গণতন্ত্রকে হত্যা করেছে। রাজ্য নির্বাচন কমিশনার নিজের দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ। এই রক্তপাতের রাজনীতি বন্ধ হওয়া উচিত।’ 
রাজ্যপাল বলেন, এখনও সময় আছে, মানুষের জীবন রক্ষায় কেন্দ্রীয় বাহিনীকে ব্যবহার করুন, ভোট কর্মীদের নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করুন। প্রয়োজন অনুযায়ী বাহিনী মোতায়েন করুন। ভুয়ো ব্যালট ছাপানোর বিরুদ্ধে পদক্ষেপ করুন। আপানার একটা ফোন মানুষের জীবন বাঁচাতে পারে।’অশ্বত্থামা নয়, দ্রোণাচার্যের দায়িত্ব পালন করা উচিত কমিশনের। 
রাজ্যপাল তাঁর বক্তৃতায় রাজীব সিনহার উদ্দেশে সরাসরি বলেছেন, “আমি আপনাকে নিয়োগ করেছি, আর আপনি আমাকে হতাশ করেছেন। আপনি কর্তব্য পালনে ব্যর্থ হয়েছেন। রাস্তায় যে শবদেহ পড়ে আছে তার জন্য আপনিই দায়ী।” রাজ্য নির্বাচন কমিশনের উদ্দেশে ৮ দফা পরামর্শ দিয়েছেন রাজ্যপাল। ভোটে আধাসামরিক বাহিনীর যথাযথ মোতায়েন, রুট মার্চ, স্ট্রং রুম পাহারা দেওয়া, ইত্যাদির সুপারিশ রয়েছে সেই পরামর্শের তালিকায়।
রাজ্যপাল এ হেন্ ভাষণের তীব্র প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে তৃণমূল। রাজ্যপাল বিজেপি মুখপাত্রের ভূমিকা পালন করছেন বলে প্রতিক্রিয়া তৃণমূলের । সেই নিয়ে আনন্দ বোস বলেন, ‘শুধু বিজেপি নয়, কংগ্রেস, তৃণমূল সহ সব রাজনৈতিক দলের লোকেরাই আমার সঙ্গে দেখা করেছেন। আমি তাঁদের সবার সঙ্গে কথা বলেছি। রাজনীতি করা আমার কাজ নয়। কিন্তু শেষ রক্তবিন্দু থাকা অবধি সন্ত্রাস রুখতে  আমার দায়িত্ব পালন করে যাব।’
রাজ্যে পঞ্চায়েত নির্বাচন ঘোষণা হওয়ার পর থেকেই রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তে সন্ত্রাস ও খুনের ঘটনা ঘটেছে। সন্ত্রাস বন্ধ করতে উদ্যোগী হয়ে রাজভবনে পিস রুম খোলেন রাজ্যপাল। পাশাপাশি উত্তর থেকে দক্ষিণ, রাজ্যের যেখানেই হিংসার খবর মিলেছে ছুটে গেছেন আনন্দ বোস । তবে বৃহস্পতিবারের মতো কড়া প্রতিক্রিয়া এর আগে কোনও রাজ্যপালের সময় শোনা যায়নি।