উত্তরাখন্ড, ১৯ জুন– দুর্নীতিগ্রস্ত মানুষ যে ঈশ্বরকেও বাদ দেননা তারই প্রমাণ কেদারনাথ। ভক্তদের দানের তাকে সোনার পাতে মুড়ে দেওয়া হয়েছে কেদারনাথ মন্দিরের গর্ভগৃহের দেওয়াল।এ খবর জানেন অনেকেই। কিন্তু অভিযোগ সোনার নামে পিতল দিয়ে মুড়ে দেওয়া হয়েছে দেওয়াল।
খবর অনুসারে, গত বছর এই সোনায় মোড়ার কাজে সম্প্রতি খরচ হয়েছে ১২৫ কোটি টাকা। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি সংস্কার হওয়া মন্দির নতুন করে ভক্তদের জন্য খুলে দেন।
এ পর্যন্ত সব ঠিকই ছিল কিন্তু গোল বাধে মন্দিরের এক প্রবীণ পুরোহিতের অভিযোগে। তিনি অভিযোগ করেছেন, সোনা নয়, বদ্রীনাথ-কেদারনাথের গর্ভগৃহ অর্থাৎ মন্দিরের ভিতরের দেওয়াল পিতলের পাত দিয়ে মোড়া হয়েছে। সন্তোষ ত্রিবেদী নামে ওই পুরোহিতের বক্তব্য, ‘১২৫ কোটি টাকাই মন্দির কমিটি নয়ছয় করেছে।’
প্রতি বছর কয়েক কোটি মানুষ কেদারনাথ-বদ্রীনাথে পুজো দিতে যান। হিন্দু পীঠস্থানের অন্যতম হল কেদারনাথ-বদ্রীনাথ। প্রাকৃতিক দুর্যোগে ক্ষতি হওয়ায় সংস্কারের জন্য বেশ কিছুদিন মন্দির বন্ধ রাখতে হয়েছিল। মন্দির সংস্কারের পাশাপাশি সেখানে যাতায়াতের উন্নত ব্যবস্থা গড়ে তোলা হয়েছে। চালু হয়েছে হেলিকপ্টার সার্ভিস। এছাড়া পুণ্যার্থীদের থাকার ব্যবস্থাও বাড়ানো হয়েছে। স্বভাবতই প্রবীণ পুরোহিতের অভিযোগ মুহূর্তে গোটা দেশে শোরগোল ফেলে দিয়েছে। মন্দির কমিটি যদিও পুরোহিতের অভিযোগকে ভিত্তিহীন বলে উড়িয়ে দিয়েছে। কিন্তু সামাজিক মাধ্যমে ত্রিবেদীর ভিডিও বক্তব্য ছড়িয়ে পড়ায় রীতিমতো চাপে পড়েছে মন্দির কর্তৃপক্ষ।
পুরোহিত ত্রিবেদী তীর্থযাত্রী মহাপঞ্চায়েতের সহ-সভাপতি। কেলেঙ্কারির সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার দাবিতে আন্দোলনে নামার হুঁশিয়ারি দিয়েছে মহাপঞ্চায়েত। চাপের মুখে বদ্রীনাথ-কেদারনাথ মন্দির কমিটি সোশ্যাল মিডিয়ার প্রচারকে ‘ষড়যন্ত্র’ বলে দাবি করে বিবৃতি দেয়। কিন্তু সরাসরি ত্রিবেদীর অভিযোগ নিয়ে কোনও প্রতিক্রিয়া দেয়নি।
বিকেটিসি (বদ্রীনাথ-কেদারনাথ টেম্পল কমিটি)-র চেয়ারম্যান অজেন্দ্র অজয় বলেছেন, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির নেতৃত্বে মন্দির সংস্কারের পাশাপাশি উন্নত সুযোগ-সুবিধার ব্যবস্থা হয়েছে ভক্তদের জন্য। তার ফলে কেদারনাথ মন্দিরে ভক্তদের সংখ্যা রেকর্ড পরিমাণ বৃদ্ধি পেয়েছে। এই সাফল্য কিছু মানুষ মেনে নিতে পারছেন না।’ তিনি আরও বলেন, ‘কেদারনাথ ধামের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ করতে রাজনৈতিক ষড়যন্ত্র শুরু হয়েছে।’ তবে কোনও রাজনৈতিক দলের নাম বলেননি।
অজয় জানান, ভারতের প্রত্নতাত্ত্বিক জরিপ বিশেষজ্ঞদের তত্ত্বাবধানে বিকেটিসি-র অনুমতি নিয়ে মহারাষ্ট্রের একজন ভক্ত মন্দিরের গর্ভগৃহের দেওয়াল সোনা দিয়ে মুড়ে দিয়েছেন। তবে মূল পাতটি তামার। তার উপর সোনার প্রলেপ দেওয়া আছে। পুরো কাজটিই ওই ভক্ত করেছেন। বিকেটিসির সরাসরি কোনো ভূমিকা নেই।
তিনি আরও জানান, কাজ শেষ হওয়ার পর, তামার এবং সোনার প্লেটের অফিসিয়াল বিল এবং ভাউচারগুলি বিকেটিসিতে জমা দেওয়া হয়েছিল যা তাদের স্টক বইয়ে উল্লেখ করা আছে। তিনি জানান, একই দাতা ২০০৫ সালে বদ্রীনাথ মন্দিরে সোনার প্রলেপ দিয়েছিলেন।