কলকাতা , ৯ জুন – পঞ্চায়েত নির্বাচন ঘোষণার পরের দিনই কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহর তলব পেয়ে শুক্রবার দিল্লি রওনা হন শুভেন্দু অধিকারী। দিল্লিতে নর্থ ব্লকে অমিত শাহের দফতরে প্রায় ৪৫ মিনিট ধরে ২ জনের বৈঠক হয় বলে বিশেষ সূত্রে জানা যায়। তবে ওই বৈঠকে কী নিয়ে আলোচনা হয়েছে, সে ব্যাপারে সরাসরি কেউই মুখ খোলেননি। বৃহস্পতিবারই পঞ্চায়েত নির্বাচনের দিনক্ষণ ঘোষণা হয়েছে। আর তার পরের দিনই স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর শুভেন্দুকে তলব রাজ্য রাজনীতিতে নতুন জল্পনার ঢেউ তুলেছে। বৈঠকে দু’জনের আলোচনার বিষয়বস্তু স্পষ্ট না হলেও , পঞ্চায়েত নির্বাচনের কৌশল ও নির্বাচনে কেন্দ্রীয় বাহিনীর প্রয়োজনীয়তা নিয়ে আলোচনা হয় সে কথা অনুমান করা যায়। এদিকে কেন্দ্রীয় বাহিনীর সাহায্য নেওয়ার আর্জি জানিয়ে বৃহস্পতিবারই হাইকোর্টের দ্বারস্থ হন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী ও প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরী। শুক্রবার প্রধান বিচারপতির ডিভিশন বেঞ্চে সেই মামলার শুনানি ছিল। পঞ্চায়েত ভোটে কেন্দ্রীয় বাহিনী ব্যবহার করা হবে কি না, সে বিষয়ে রাজ্য সরকারই সিদ্ধান্ত নেবে বলে জানায় আদালত ।
রাজ্যের পঞ্চায়েত নির্বাচনে কেন্দ্রীয় বাহিনী প্রয়োজনীয়তার দাবি দীর্ঘদিন ধরেই জানিয়ে আসছেন শুভেন্দু। ভোট ঘোষণার পর বাহিনীর দাবিতে হাই কোর্টে মামলাও করেছেন। তবে আরও একটি বিষয় উল্লেখ্য, বৃহস্পতিবারই কয়লা পাচার কাণ্ডে রুজিরাকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা। অভিষেক কিছুদিন আগে দাবি করেছিলেন, তিনি ইডি-সিবিআই-কে জেরায় কী জানান, সেটা আবার জেনে যান শুভেন্দু। ঘটনাচক্রে আবার রুজিরাকে ইডির জিজ্ঞাসাবাদের পরদিনই দিল্লি গেলেন শুভেন্দু। নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় সিবিআইয়ের পর আগামী মঙ্গলবার অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়কে তলব করেছে ইডি। এই মামলাতেই গ্রেফতার হয়েছেন ‘কালীঘাটের কাকু’ ওরফে সুজয়কৃষ্ণ ভদ্র। তিনি বর্তমানে ইডির হেফাজতে। আগামী ১৪ জুন তাঁকে আবার আদালতে হাজির করানো হবে। ১৩ জুন অভিষেককে তলব করা হয়েছে, যদিও হাজিরা দেবেন না বলে জানিয়েছেন অভিষেক। ইডি -সিবিআইয়ের এই তৎপরতার মধ্যেই দিল্লিতে শাহ-শুভেন্দু বৈঠক আলাদা মাত্রা যোগ করেছে। তবে জানা গেছে আমি শাহের তলব পেয়েই শুক্রবার সকালে দিল্লির উদ্দেশে রওনা হন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। নর্থ ব্লকে গিয়ে বৈঠক করেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে। সূত্রের খবর, তাঁদের মধ্যে প্রায় ৪৫ মিনিট ধরে বৈঠক হয়। শুক্রবারই আবার কলকাতায় ফিরবেন শুভেন্দু। তবে কী নিয়ে বৈঠক তা স্পষ্ট নয় । তবে বিজেপি সূত্রে খবর, বেশ কিছু ফাইল নিয়ে দিল্লি যান শুভেন্দু।
বৃহস্পতিবার নির্বাচন কমিশন ভোট ঘোষণা করতেই রাজ্য বিজেপির তরফে জেলাস্তরে একটি নির্দেশিকা পাঠিয়ে দেওয়া হয়। সেখানে বলা হয় , শাসকদল হুমকিও দিলেও যত বেশি সম্ভব আসনে প্রার্থী দিতে হবে। কিন্তু সব আসনে প্রার্থী দেওয়া সম্ভব নয়, সেটা ভালই জানে বিজেপি রাজ্য নেতৃত্ব। সূত্রের খবর, যেখানে বিজেপি প্রার্থী দিতে পারবে না, সেখানে তৃণমূলকে হারাতে অন্য দলের প্রার্থী বা নির্দল প্রার্থীর পাশে দাঁড়াতে বলা হয়েছে জেলা নেতৃত্বকে। অর্থাৎ নিজেদের সাংগঠনিক দুর্বলতা একপ্রকার মেনেই নিচ্ছে গেরুয়া শিবির। এই দুর্বল সংগঠন নিয়ে লড়াই করতে হলে যে কেন্দ্রীয় বাহিনী আর কেন্দ্রীয় নেতৃত্বই ভরসা, সেটা শুভেন্দুর দিল্লি যাত্রাতেই স্পষ্ট।