নির্বাচনে উতরােতে আর উন্নয়নের ফর্মুলায় ভরসা রাখতে পারছেন না মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বরং এবার পেশাদারী নির্বাচনী স্ট্রাটেজিকেই গ্রহণ করতে চাইছেন তৃণমূলনেত্রী।
বৃহস্পতিবার নবান্নে এসেছিলেন রাজনৈতিক স্ট্র্যাটেজিস্ট প্রশান্ত কিশাের। তাঁর সঙ্গে প্রায় এক ঘন্টা চল্লিশের মিনিটের বৈঠক করেন মুখ্যমন্ত্রী। প্রশ্ন উঠছে নরেন্দ্র মােদির পথে হেঁটে কি আগামী নির্বাচনে প্রশান্ত কিশােরের সংস্থার সঙ্গে চুক্তি করতে চলেছেন তৃণমূল সুপ্রিমাে।
সূত্রের খবর, এদিন আগামী নির্বাচনে সাফল্যের জন্য প্রশান্ত কিশােরের সঙ্গে চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে। লােকসভা নির্বাচনের ধাক্কা থেকে শিক্ষা নিয়ে মােদির চাণক্যকেই ডাকলেন মমতা।
অতীতে বিজেপি এবং কংগ্রেসের হয়ে কাজ করেছে এই প্রশান্ত কিশােরের সংস্থা সিটিজেন্স ফর অ্যাকাউন্টেবল গভর্নেন্স। নরেন্দ্র মােদি গুজরাতের মুখ্যমন্ত্রী থাকাকালীন মােদির ব্র্যান্ড ম্যানেজমেন্টের কাজ করেছেন প্রশান্ত কিশাের। এমনকী মােদি ক্যারিশমার নেপথ্যে ‘হর হর মােদি, ঘর ঘর মােদি’ স্লোগানটা এই প্রশান্ত কিশােরেরই মস্তিষ্ক প্রসূত।
২০১৪ সালের লােকসভা নির্বাচনেও বিজেপির হয়ে কাজ করেছে এই সংস্থা। এরপর ২০১৫ সালে বিহার বিধানসভা নির্বাচনে নীতিশ কুমার-লালুপ্রসাদ যাদব জোটের হয়ে নির্বাচনের প্রচারে সহযােগিতা করেছিল সংস্থাটি। সেবারেও প্রবল মােদি হাওয়ার মধ্যে ‘ঘর ঘর দস্তক’ স্লোগানের পালে ভর করে নীতিশ কুমারের জেডিইউ দলকে জিতিয়ে এনেছিলেন প্রশান্ত কিশাের।
এবছর লােকসভা নির্বাচনের সময়েই অন্ধ্রে বিধানসভা নির্বাচন হয়। সেক্ষেত্রে জগনমােহন রেড্ডির ওয়াইএসআর কংগ্রেসের নির্বাচনী প্রচারের স্ট্র্যাটেজি তৈরি করেছিল প্রশান্ত কিশােরের সংস্থা। এবছর ওই রাজ্যে লােকসভা নির্বাচনে ২৫টি আসনের মধ্যে সবক’টিতে এবং বিধানসভায় ১৭৫ টি কেন্দ্রের মধ্যে ১৫১ টিতে জয়লাভ করেছে জগনমােহনের দল।
অন্ধ্রপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী চন্দ্রবাবু নাইডুর দলকে প্রায় নিশ্চিহ্ন করে দিয়ে জয়লাভ করে এই প্রথম ক্ষমতায় আসেন জগনমােহন। তাঁর এই অপ্রত্যাশিত জয়ের পর বহু রাজনৈতিক দলই নাকি প্রশান্ত কিশােরের সংস্থার সঙ্গে তাদের নির্বাচনের জন্য চুক্তিবদ্ধ হতে চাইছেন। সেই তালিকায় এবার নথিভুক্ত হয়ে গেল পশ্চিমবঙ্গের তৃণমূল কংগ্রেসের নাম।
এর আগেও অবশ্য প্রশান্ত কিশােরের সঙ্গে যােগাযােগ করেছিল তৃণমূল। কিন্তু দরদামে পােষায়নি বলে সেবার রফা হয়নি। এবছর লােকসভা নির্বাচনে ৪২টি আসনের মধ্যে মাত্র ২২টি আসন পেয়েছে তৃণমূল কংগ্রেস। ১৮ টি আসন পেয়ে ঘাড়ে নিঃশ্বাস ফেলছে বিজেপি। খাতায় কলমে বিধানসভায় নির্বাচনের আর দু’বছর বাকি রয়েছে। যদিও ইতিমধ্যেই গুঞ্জন উঠেছে ২০২১ সালের আগেই তৃণমূল সরকারকে গদিচ্যুত করা হতে পারে।
এছাড়া সামনেই রয়েছে পুরসভার ভােট। এই অবস্থায় প্রশান্ত কিশােরের সঙ্গে বৈঠক করে নির্বাচনী স্ট্রাটেজি ঠিক করতে চাইছেন তৃণমূল নেত্রী। বৃহস্পতিবার নবান্নে প্রশান্ত কিশােরকে নিয়ে এসেছিলেন সাংসদ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়।
এখন প্রশ্ন উঠছে আগামী নির্বাচনে তৃণমূল কংগ্রেসের বিপর্যয় রুখতে কী ট্র্যাটেজি নেবে প্রশান্ত কিশােরের সংস্থা। সেক্ষেত্রে রাজ্যের উন্নয়ন প্রকল্পগুলির কথাও হয়তাে তুলে ধরা হতে পারে।
সাম্প্রতিক কালে প্রশান্ত কিশােরের সংস্থা যেসব নির্বাচনী স্ট্রাটেজি তৈরি করেছে তার সবকটিতেই মিলেছে সাফল্য। অবশ্য ২০১৭ সালে উত্তরপ্রদেশের বিধানসভায় কংগ্রেসকে জয় এনে দিতে পারেননি প্রশান্ত কিশাের। গত বছর প্রশান্ত কিশাের সরাসরি রাজনীতিতে যােগ দিয়েছিলেন।
বিহারে জনতা দল (ইউনাইটেড)-এর ভাইস প্রেসিডেন্টের পদে ছিলেন তিনি। কিন্তু সেখানে কোনও কাজের সুযােগ পাননি প্রশান্ত কিশাের। কারণ, বিহারের মুখ্যমন্ত্রী নীতিশ কুমার তখন চাপের মুখে নতিস্বীকার করে বিজেপির দিকেই ঝুঁকেছিলেন। ফলে বিহারে জনতা দলের জয়লাভের জন্য প্রশান্ত কিশােরের সমস্ত প্রচেষ্টা মাঠে মারা যায়। বিশেষ করে বিহারের যুব সম্প্রদায়ের মধ্যে জনতা দলের গ্রহণযােগ্যতা বাড়ানাে যায়নি।
এই পরিস্থিতিতে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ডাকে সাড়া দিতে আর বিলম্ব করেননি প্রশান্ত কিশাের। এখন তাঁর সংস্থার পেশাদারিত্ব আগামী নির্বাচনে বিপর্যয়ের মােকাবিলা করতে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে কতটা সাহায্য করবে, সেটাই দেখার।