সিতওয়া/ঢাকা , ১৫ মে – ঘূর্ণিঝড় মোকার প্রভাবে তছনছ মায়ানমার। বাংলাদেশের উপকূল অঞ্চলে ক্ষয়খতি কিছুটা কম হলেও শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড়ে তছনছ হয়ে প্রবল ক্ষয়ক্ষতির মুখে মায়ানমারের বিস্তীর্ণ এলাকা। সিতওয়া-সহ মায়ানমারের বিস্তীর্ণ এলাকা কার্যত ধংসস্তূপ পরিণত হয়। শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত মারণ ঝড়ে মায়ানমারে মৃত্যু হয়েছে ৬ জনের। আহতের সংখ্যা ৭০০-র বেশি। বিদ্যুৎ, জল, টেলি সংযোগ, ইন্টারনেট পরিষেবা বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে। রাস্তার দুপাশে ভাঙা বাড়ি, হোটেল, অফিস। উপড়ে পড়েছে গাছ, বিদ্যুতের পোল। ফলে উদ্ধারকাজেও নানারকম বাধার সৃষ্টি হচ্ছে।
রবিবার দুপুরে আছড়ে পড়ার পর ২৪ ঘন্টা কেটে গেছে। সোমবার সকালে দিল্লির মৌসম ভবন থেকে জানানো হয়েছে, মোকা মায়ানমারের উপরেই রয়েছে এবং ধীরে ধীরে চিনের উত্তর অংশের দিকে এগোচ্ছে। তবে শক্তি হারানোর আগে, রবিবার সারাদিন ধরে মায়ানমার এবং বাংলাদেশে তাণ্ডব চালায় এই শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড়। আবহাওয়া বিজ্ঞানীদের তথ্যানুযায়ী , ১৯৮২ সালের পর থেকে এটিই ভারত মহাসাগরের উত্তর অংশে তৈরি হওয়া সবথেকে শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড়। এর সর্বোচ্চ গতিবেগ ছিল ঘন্টায় ২৬০ কিলোমিটার।
মোকার পূর্বাভাস পেয়ে আগে থেকেই প্রস্তুতি নেওয়া হয়। মায়ানমারে রাখাইনে প্রায় ২০,০০০ মানুষকে বিভিন্ন মঠ, মন্দির, স্কুলবাড়ির মতো অপেক্ষাকৃত উঁচু এবং শক্তপোক্ত আশ্রয়ে সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়। এরপরও, ঝড়ের দাপটে লন্ডভন্ড হয়ে যায় রাখাইনের রাজধানী শহর সিতওয়ে। ভেঙে পড়ে যোগাযোগ ব্যবস্থা। ঘুর্ণিঝড়ের জেরে সিতওয়ের নীচু এলাকাগুলিতে বন্যা পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়।
শহরের অন্যান্য জায়গাও ঝড়ের দাপটে বিধ্বস্ত। নেই বিদ্যুৎবা ওয়াইফাই সংযোগ। রবিবারই, সিতওয়ে থেকে ভাইরাল হওয়া এক ভিডিয়োতে ঝড়ের সময় একটি টেলিকম টাওয়ার হুড়মুড়িয়ে ভেঙে পড়তে দেখা যায়। উড়ে যায় বহু বাড়ির চাল, উপড়ে যায় বহু গাছ। স্থানীয় সংবাদমাধ্যমগুলির প্রতিবেদন অনুযায়ী, মায়ানমারের সামরিক সরকার ঘূর্ণিঝড় ও বন্যা বিধ্বস্ত এলাকাগুলিতে খাদ্য, পানীয়, ওষুধ এবং চিকিৎসকদের পাঠাচ্ছে।
মায়ানমারে উপস্থিত রাষ্ট্রপুঞ্জের উন্নয়ন কর্মসূচির প্রতিনিধি টুইট করে জানান , রাষ্ট্রপুঞ্জের পক্ষ থেকে মায়ানমারে উদ্ধআর ও ত্রাণের কাজ শুরু করা হয়েছে। তাদের সহায়তা করছে রেড ক্রস বাহিনীও।
অন্যদিকে বাংলাদেশের কক্সবাজারেও ঝড়ের বিধ্বংসী রূপ দেখা গেছে। মোকার দাপটে লণ্ডভণ্ড হয়ে গেছে বাংলাদেশের সেন্ট মার্টিন দ্বীপ।রোহিঙ্গা শিবিরে প্রায় ১৩০০ ঘর ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। মোকার তাণ্ডবে দেড় হাজারেরও বেশি রোহিঙ্গা ক্ষতিগ্রস্ত। ওপার বাংলার সংবাদমাধ্যম ‘প্রথম আলো’ সূত্রে এই খবর জানা গিয়েছে। সে দেশের সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদন অনুযায়ী, গাছে চাপা পড়ে বেশ কয়েক জন আহত হয়েছেন। বহু গাছ উপড়ে পড়েছে। ভেঙে পড়েছে অস্থায়ী ছাউনি, বাড়ির টিনের চাল। কয়েক হাজার বাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
মারাত্মক প্রবল ঘূর্ণিঝড়ের চেহারা নিয়ে রবিবার দুপুরে বাংলাদেশ এবং মায়ানমার উপকূল অতিক্রম করে মোকা। মোকার দাপটে লণ্ডভণ্ড হয়ে গেছে বাংলাদেশের সেন্ট মার্টিন দ্বীপ।ব হু ঘরবাড়ি ভেঙে পড়েছে। কমপক্ষে ১১ জন আহত হন। তাঁদের মধ্যে এক মহিলার অবস্থা আশঙ্কাজনক। বাংলাদেশের আবহাওয়া দফতর জানিয়েছে, রবিবার দুপুর আড়াইটের সময় সেন্ট মার্টিন দ্বীপে ঝড়ের বেগ ছিল ঘণ্টায় ১৪৭ কিমি।
আপাতত শক্তি খুইয়ে ‘অতি শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড়’ থেকে ‘ঘূর্ণিঝড়ে’ পরিণত হয়েছে। এদিকে ঘূর্ণিঝড় মায়ানমারে চলে যাওয়ার পর জলীয় বাষ্প ঢুকতে শুরু করেছে এরাজ্যে। ফলে পশ্চিমবঙ্গে এ বার বৃষ্টির অনুকূল পরিস্থিতি তৈরি হতে পারে। আলিপুর হাওয়া দফতর জানায় , আগামী বুধবার থেকে দক্ষিণবঙ্গ জুড়ে বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে।