• facebook
  • twitter
Friday, 22 November, 2024

মৃত শিশুকে ব্যাগে করে নিয়ে যেতে হল কেন , রিপোর্ট তলব রাজ্য স্বাস্থ্য দফতরের 

কালিয়াগঞ্জ, ১৫ মে  –  হাসপাতালে মৃত্যু হয় পাঁচ মাসের একরত্তি সন্তানের।  সেই সন্তানের নিথর দেহ ব্যাগে ভরে বাসে করে বাড়ি ফেরেন কালিয়াগঞ্জের বাসিন্দা অসীম দেবশর্মা। রবিবারের এই ঘটনায় তুমুল আলোড়ন রাজ্য জুড়ে। কালিয়াগঞ্জের ঘটনায় ক্ষুব্ধ নবান্ন। রিপোর্ট তলব করা হল উত্তর দিনাজপুর জেলা মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিকের কাছে। নিয়ম মতো ওই রিপোর্টের একটি কপি পাঠাতে হবে

কালিয়াগঞ্জ, ১৫ মে  –  হাসপাতালে মৃত্যু হয় পাঁচ মাসের একরত্তি সন্তানের।  সেই সন্তানের নিথর দেহ ব্যাগে ভরে বাসে করে বাড়ি ফেরেন কালিয়াগঞ্জের বাসিন্দা অসীম দেবশর্মা। রবিবারের এই ঘটনায় তুমুল আলোড়ন রাজ্য জুড়ে। কালিয়াগঞ্জের ঘটনায় ক্ষুব্ধ নবান্ন। রিপোর্ট তলব করা হল উত্তর দিনাজপুর জেলা মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিকের কাছে। নিয়ম মতো ওই রিপোর্টের একটি কপি পাঠাতে হবে স্বাস্থ্য ভবনকেও।

রবিবার ঘটনাটি জানাজানি হতেই রাজনৈতিক মহলে শোরগোল শুরু হয়। শুরু হয়ে যায় পারস্পরিক দোষারোপের পালা । বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী তাঁর টুইটে কটাক্ষ করেন রাজ্য সরকারকে। যদিও এটি একটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা বলেই দাবি করা হয় তৃণমূলের তরফে।  সোমবার কড়া পদক্ষেপ করে জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিকের কাছে রিপোর্ট তলব করে নবান্ন।

পরিবারের লোককে দেহ বাড়িতে নিয়ে যাওয়ার জন্য কেন হাসপাতালের তরফে কোনও শববাহী গাড়ির ব্যবস্থা করে দেওয়া হল না, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে। প্রশাসনিক সূত্রে খবর, এর জন্য নবান্নের শীর্ষ কর্তাদের তোপের মুখে পড়তে পারেন উত্তরবঙ্গের স্বাস্থ্য পরিষেবার দায়িত্বে থাকা অধিকাধিকারিকরা। তবে এ বিষয়ে প্রকাশ্যে মুখ খোলেননি প্রশাসনের কোনও কর্তা।

যদিও সরকারি হাসপাতালে স্বাস্থ্য পরিষেবার সঙ্গে যুক্ত যারা তাদের অনেকেই মনে করছেন, দেহ বাড়িতে নিয়ে যাওয়ার বিষয়ে সরকারি স্তরে কোনও নিদিষ্ট নির্দেশ নেই। কিন্তু মানবিক কারণে শববাহী গাড়ির ব্যবস্থা করা উচিত ছিল হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের। যদিও উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজের সুপার সঞ্জয় মল্লিকের যুক্তি, শিশুর দেহ বাড়িতে নিয়ে যাওয়ার বিষয়ে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করেনি পরিবারের লোকেরা। 

কালিয়াগঞ্জের মুস্তাফানগরের ডাঙিপাড়ার বাসিন্দা অসীম পরিযায়ী শ্রমিক, থাকেন কেরলে। তিনি জানান , শনিবার রাত সাড়ে ৯টা নাগাদ ছেলে মারা যায়। হাসপাতালে তখন তিনিই ছিলেন । তিনি ১০২ নম্বরে ফোন করেন। অসীমের দাবি, তাঁকে পরিষ্কার জানিয়ে দেওয়া হয়  লাশ নিয়ে যেতে হলে ৮ হাজার টাকা লাগবে। 

তখন ঘাবড়ে গিয়ে হিতাহিত জ্ঞান হারিয়ে ফেলেন। ছেলের দেহ ব্যাগের ভিতর ভরে নিয়ে যাওয়ার ভাবনা মাথায় আসে। ২২০ টাকা দিয়ে একটা ব্যাগ কিনে ছেলের দেহ কাপড়ে মুড়ে ব্যাগে ভরেন।  প্রচন্ড ভয় ও মানসিক কষ্ট নিয়ে তিনি গ্রামে ফেরেন।  

কালিয়াগঞ্জে পৌঁছে বাসস্ট্যান্ডে নেমে দেখে প্রচুর লোকজন, মিডিয়াও এসেছে। ছিল অ্যাম্বুল্যান্সও। কালিয়াগঞ্জে বিবেকানন্দ মোড় থেকে গ্রাম ৮ কিলোমিটার দূরে। অ্যাম্বুল্যান্সে করেই ওই রাস্তা বাড়ি ফেরেন। ছেলের শেষকৃত্য করেছেন।  

অসীম দেবশর্মার কথায়, ‘ কোনও সাহায্য আমি পাইনি। আমায় কেউ কিছু বলেও দেয়নি। কী করে জানব আমি? আমি কয়েক জন ড্রাইভারকে ফোন করেছিলাম। সকলেই এক কথা বলে , ‘‘টাকা ছাড়া যাব না।’’ আমি গরিব মানুষ। কোনও উপায় না দেখে এই কাজ করতে বাধ্য হয়েছি। কোন উপায় না দেখে বাবা হয়ে ছেলের লাশ ব্যাগে ঢুকিয়ে বাড়ি ফিরতে বাধ্য হয়েছি ।

এই  ঘটনার পর নড়েচড়ে বসে প্রশাসন। ঠিক কী ঘটনা  ঘটেছিল, কেন অ্যাম্বুলেন্স পাওয়া যায়নি, সেইসব জানতেই এবার উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজের সুপারের থেকে রিপোর্ট চাইল রাজ্য স্বস্থ্য দফতর।