• facebook
  • twitter
Saturday, 23 November, 2024

মৃত্যুর হাতছানি

হিমালয়ে প্রাক-বর্ষা পর্বতাভিযান এখনও চলছে, এভারেস্টে এখনও পর্যন্ত মারা গেছেন ১১ জন

মাউন্ট এভারেস্ট (ছবি- Getty Images)

হিমালয়ে প্রাক-বর্ষা পর্বতাভিযান এখনও চলছে, এভারেস্টে এখনও পর্যন্ত মারা গেছেন ১১ জন। ১৯৫৩ সালে সর্বপ্রথম বিশ্বের এই সর্বোচ্চ শৃঙ্গ (২৯,০২০ ফুট) জয়ের পর তা সারা বিশ্বের নজর কাড়ে। কিন্তু ২০১৯ সালে পাহাড়ে যে অবস্থা দাড়িয়েছে তাকে স্রেফ ‘চিড়িয়াখানা’ বা তার চেয়েও বেশি কিছু বলা যায়। দারিদ্র্যক্লিষ্ট নেপালে পর্বতারােহণ যেভাবে বিরাট অর্থ নিয়ে আসছে তার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে মৃত্যু। একজন পর্বতারােহীকে পারমিটের জন্য ১১ হাজার ডলার দিতে হয়। এ বছর সরকারিভাবে ৩৮১টি পারমিট দেওয়া হয়েছে। এর সঙ্গে প্রত্যেক পর্বতারােহীকে অন্তত একজন শেরপা-গাইড নিতে হবে। এছাড়াও বিপুল পরিমাণে আনুষঙ্গিক ব্যয় তাে আছেই। এসব সত্ত্বেও আন্তর্জাতিক প্রচারমাধ্যম জুড়ে নানা আতঙ্কের কাহিনি ছড়িয়ে পড়েছে। এখন এটা জিজ্ঞাসা করার সময় এসেছে প্রবাদতুল্য ‘সােনার রাজহাঁস’কে অহেতুক বিপদের মধ্যে ফেলে দেওয়া হচ্ছে কিনা। এটা সত্যি যে বিশ্বের সর্বোচ্চ স্থান থেকে নীচের দিকে তাকানাের রােমান্টিকতা মানুষকে চিরকাল আচ্ছন্ন করে রাখবে। কিন্তু এমন একটা সময় আসে যখন ঝুঁকির মূল্যায়নও হিসাবের একটা অঙ্গ হয়ে দাঁড়ায়। তবে এটা পুরােটাই নেতিবাচক ব্যাপার নয়, আসলে পর্বতারােহীর সংখ্যা কমাতে পারলে এভারেস্ট পরিচালন ব্যবস্থার উন্নতি ঘটবে।

বল্গাহীন বাণিজ্যকরণের ফলে ব্যাঙের ছাতার মতাে পর্যটন ও স্পাের্টস ম্যানেজিং কমিটি গজিয়ে উঠেছে, যাদের পর্বতারােহণ অভিযান সংঘটিত করার মতাে দক্ষতা ও পর্যাপ্ত সরঞ্জামের ব্যবস্থা নেই। অনেক অনভিজ্ঞ ও প্রশিক্ষণহীন শেরপাকে পর্বতারােহীদের সঙ্গে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। যখন পরিস্থিতি বিগড়ে যায় তখন তা মােকাবিলা করার ক্ষমতা তাদের থাকে না। আরও খারাপ ব্যাপার হল নেপালের কর্তৃপক্ষ পর্বতারােহীদের অতীত অভিজ্ঞতা খতিয়ে দেখে না, তাদের মধ্যে কেউ কেউ তাদের শেরপাদের মতােই নবীন। একমাত্র ইতিবাচক ঘটনা যা ঘটেছে তা হল আবহাওয়া সম্পর্কে ভবিষ্যদ্বাণী অনেক উন্নত ও নিখুঁত হয়েছে। সেটাও পর্বতারােহণের ওপর নেতিবাচক ছাপ ফেলছে। ‘জানলা’টা যেহেতু ছােট হয়ে গেছে তাই বহু সংখ্যক পর্বতারােহী একই সময়ে শৃঙ্গে আরােহণের চেষ্টা করছে। বহুল প্রচারিত একটি ফটোতে দেখা যাচ্ছে এভারেস্ট শৃঙ্গে ওঠার শেষ ধাপে পর্বতারােহীরা ট্রাফিক জ্যামে ফেঁসে গেছেন। বিলম্বের কারণে তাদের অক্সিজেন সরবরাহে টান পড়ছে। ফলে নামার সময় তাদের কারও কারও মৃত্যু ঘটছে অথবা উচ্চতাজনিত প্রবল অসুস্থতা গ্রাস করছে। লাইনে দাঁড়িয়ে থাকতে থাকতে তাদের অক্সিজেনের ভাড়ারই কমে যাচ্ছে। এভারেস্টে ভিড় অতীতে কখনও এত সমস্যা সৃষ্টি করেনি–এটাকে ম্যান-মেড় ডিজাস্টারই বলা যেতে পারে।

এভারেস্টের জন্য পারমিটের সংখ্যা কমানাে একটা সহজ সমাধান কিন্তু শেরপা সম্প্রদায়ের ওপর এর প্রভাব কখনই অস্বীকার করা যায় না। হিমালয়ের অন্যান্য শৃঙ্গগুলিতে অভিযানের জন্য পর্বতারােহীদের আকৃষ্ট করতে ব্যাপক প্রচারাভিযান ও উৎসাহ প্রদান জরুরি। এর মধ্যে কয়েকটি শৃঙ্গে আরােহণ যথেষ্ট চ্যালেঞ্জিং, যদিও তা এভারেস্টতুল্য খ্যাতির অধিকারী নয়। পর্বতারােহীদের একটা গ্রেড দেওয়া প্রয়ােজন, যাদের প্রমাণিত দক্ষতা আছে তাদেরই কেবল উঁচু শৃঙ্গগুলিতে অভিযানের অনুমতি দেওয়া উচিত। ভারতে পর্বতাঞ্চলে অনেক সুউচ্চ শৃঙ্গ রয়েছে সেগুলিকে অভিযানের জন্য বাছা যেতে পারে। ইন্ডিয়ান মাউন্টেনিয়ারিং ফাউন্ডেশন এ ব্যাপারে একটা ভূমিকা নিতে পারে। সারা বিশ্বের পর্বতারােহীদের লক্ষ্য হিসাবে এভারেস্টের গরিমা বজায় রেখেও এটা সম্ভব।