• facebook
  • twitter
Saturday, 23 November, 2024

বিশ্বকাপের উদ্বোধনী অনুষ্ঠান, আজ প্রথম ম্যাচে ইংল্যান্ডের সামনে দক্ষিণ আফ্রিকা

উদ্যোক্তারা উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের জন্য চার হাজার টিকিট বিক্রি করলেও অংশগ্রহণকারী দলগুলির কোনও খেলােয়াড়কেই উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে ডাকেননি।

২০১৯ আইসিসি ক্রিকেট বিশ্বকাপ (Photo: Twitter@cricketworldcup)

উদ্যোক্তারা বলেছিলেন, কুড়ি বছর আগে লর্ডসে বিশ্বকাপের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে স্যাঁতসেঁতে সন্ধ্যার স্মৃতি তারা মুছে দেবেন এবার। বুধবার লন্ডনের মধ্যস্থলে দ্য মলে বিশ্বকাপের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে জাঁকজমক, আলাের রােশনাই, অতীতের নাম করা ক্রিকেটারদের উপস্থিতি সবকিছু থাকলেও লন্ডনের বিখ্যাত ব্যান্ড রুডিমেন্টালের মাত্র চারজন সদস্যের দুজন হাজির হয়েছিলেন উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বিশ্বকাপের অফিসিয়াল সঙ্গীত গাইবার জন্য। কারণ বাকি দুজন অন্য একটি সফরে অস্ট্রেলিয়ায় চলে গিয়েছিলেন।

প্যাডি ম্যাকগুইনেশ সেলিব্রেশন অফ ক্রিকেট, মিউজিক এবং কালচার পরিবেশন করেন বাকিংহ্যাম্প প্যালেসের পশ্চাৎপটে। ট্র্যালেন্ডার স্ক্যোয়ার থেকে যে রাস্তাটি প্যালেস পর্যন্ত চলে গিয়েছে সেই দ্য মলেই দু’ধারে ব্রিটেন এবং অংশগ্রহণকারী দেশগুলির পতাকা দিয়ে সাজিয়ে ফেলা হয়েছিল।

উদ্যোক্তারা উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের জন্য চার হাজার টিকিট বিক্রি করলেও অংশগ্রহণকারী দলগুলির কোনও খেলােয়াড়কেই উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে ডাকেননি। ইংল্যান্ডের হয়ে উপস্থিত ছিলেন অতীতের ক্রিকেটার কেভিন পিটারসন এবং লাভ আইল্যান্ডের হয়ে ক্রিস হিউজেস। বৃহস্পতিবার ইংল্যান্ড এবং দক্ষিণ আফ্রিকার মধ্যে ম্যাচ দিয়ে সুচনা হওয়ার আগে বুধবাবের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানকে বিশ্বকাপের ইতিহাসে সর্বকালের সেরা হবে বলে আগেই আখ্যা দিয়েছিলেন আইসিসি এবং ইংল্যান্ডের ক্রিকেট কর্তারা।

দ্য ওভালে বৃহস্পতিবার বিশ্বকাপ ক্রিকেটের উদ্বোধনী ম্যাচে আগে কখনো বিশ্বকাপ জিততে না পারা এমান দুটি দল মুখােমুখি হচ্ছে যারা এ পর্যন্ত বিশ্বকাপ ক্রিকেটে ছয়বার সাক্ষাৎকারে প্রত্যেকেই তিনটি করে জয় পেয়েছে। একটিও বল না হওয়ার আগে দক্ষিণ আফ্রিকা ক্রিকেট দলটি এমনকি একটি লড়াইয়ে নেমে পড়েছে সেখানে ডেল স্টেইনের মতাে বােলারের অনুপস্থিতি থাকতে তারা প্রথম বিশ্বকাপ খেলতে নামা কাগিসাে রাবাডার দিকেই ফোকাস করেছে।

দক্ষিণ আফ্রিকার অধিনায়ক ফ্যাব ডুপ্লেসিস এবং দলের থিঙ্ক ট্যাঙ্ক তাদের কম্বিনেশন বদলাতে বাধ্য হলেও এ ব্যাপারে নিশ্চিত যে দক্ষিণ আফ্রিকা দলের প্রতিভা রয়েছে যা ইংলান্ডের সঙ্গে টক্কর দেওয়ার পক্ষে যথেষ্ঠ।

বুধবার দ্য ওভালেই ডুপ্লেসিস সাংবাদিকদের মুখােমুখি হয়েছিলেন। সেখানে দক্ষিণ আফ্রিকার অধিনায়ক পরিষ্কার স্বীকার করেছে ডেল স্টেন না খেলাটা তাদের দলের কাছে বিরাট ক্ষতি। যখন দক্ষিণ আফ্রিকা দল নির্বাচন করা হয়েছিল তখন স্টেন সম্ভবত ৬০ শতাংশ ফিট ছিলেন। তাই আমরা আশঙ্কা করেছিলাম শেষ পর্যন্ত এমনটাই ঘটবে। ডেল স্টেন থাকলে দক্ষিণ আফ্রিকার বােলিং আক্রমণ প্রচণ্ড শক্তিশালী হয়ে উঠতাে। ইল্যান্ড তাই বৃহস্পতিবার দল গঠনে আমাদের কিছু কাটছাট কিছু রদবদল করতে হচ্ছে। যাতে একটি ব্যালান্সড দল দাঁড় করানাে যায় যাতে ইংল্যান্ডকে চ্যালেঞ্জ করা যায়।

দক্ষিণ আফ্রিকা শিবিরের ধারণা সভবত সাউদাম্পটনেও ভারতের বিরুদ্ধে ম্যাচে ডেল স্টেনকে পাওয়া যাবে না। তাই দলের থিঙ্ক ট্যাঙ্ক কাগিসাে রাবাডার দিকেই ফোকাস করেছে রাবাডা ছাড়াও লুঙ্গি নিডি, অ্যান্ডিলে ফেলুকাওয়া, ক্রিস মরিস, ফ্যাব ডুপ্লেসিসকে উদ্বোধনী ম্যাচের আগে ভরসা জোগাচ্ছে। অধিনায়ক বলেছে, আমাদের এক্স ফ্যাক্টরগুলি একটি হল সত্যিকার শক্তিশালী আক্রমণ পেস বােলিংয়ের ক্ষেত্রে ইংল্যান্ডের আবহাওয়া ও পরিবেশ অনুযায়ী এই পেশ বােলিংই খুবই কার্যকর। তাদের প্রতিদ্বন্দ্বী ইংল্যান্ড যে বিশাল প্রত্যাশা নিয়ে ম্যাচ খেলতে নামছে এটা ফ্যাব ডুপ্লেসিসের কাছে একটা প্লাস পয়েন্ট মনে হচ্ছে।

ফেভারিট না হওয়ার সুবিধে ভাল ক্রিকেট খেলা যায়। ডুপ্লেসিস বলেছেন, প্রতিদ্বন্দ্বীর দিকে বেশি ফোকাস করলে নিজেদের মনােবল ভেঙে যেতে পারে তাই আমরা বর্তমান পরিস্থিতির এবং নিজেরা যে অনুশীলন করেছি সেই বিষয়গুলােকেই নিয়ন্ত্রণে রেখে উদ্বোধনী ম্যাচ খেলতে যাচ্ছি। ডুপ্লেসিস বলেছেন, জীবনে ক্রিকেট ম্যাচ জেতা বা হারাটার চেয়ে আরও অনেক বড় বিষয় আছে। ৩৪ বছর বয়সী দক্ষিণ আফ্রিকা অধিনায়কের এটি তৃতীয় বিশ্বকাপ এবং অধিনায়ক হিসেবে প্রথম। তিনি বলেছেন, ক্রিকেটটা আমাদের প্রত্যেকের জীবনে একটা গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার ঠিকই কিন্তু এটাই সব নয়। কেউই আমাদের ফেভারিট মনে করে না। কিন্তু আমরা এমন ক্রিকেট খেলতে চাই যা দিয়ে ক্রিকেট দুনিয়া অন্তত এটুকু মনে করতে পারে যে আইসিসি র‍্যাঙ্কিংয়ে তিন নম্বর স্থানে দাঁড়িয়ে থাকা দলটি একেবারে হতাশকর কিছু করেনি।

এমন দুটি দল বুধবার বিশ্বকাপের উদ্বোধনী ম্যাচে মুখােমুখি হচ্ছে যারা এর আগে একবারও বিশ্বকাপের শিরােপা নিজেদের হাতে তুলে নিতে পারেনি। তবে দুটি দলই কিন্তু শক্তিশালী দল নিয়ে প্রতি চার বছর অন্তর বিশ্বকাপের আসরে খেলতে নামে। কিন্তু তারা কখনােই কাজের কাজটা করে দেখাতে পারে না। একদিকে দক্ষিণ আফ্রিকা দল যেমন তাদের নামের পিছনে লেগে যাওয়া ‘চোকার্স’ শব্দটা মুছে উঠতে পারেনি। তখন অন্যদিকে ইংল্যান্ডও তাদের খেতাব জয়ের স্বপ্ন পূরণ করতে পারেনি। এমনই দুই দলের চরিত্র। তারা এবারে তাদের ভাগ্য নির্ধারণ করতে পারে কিনা সেটাই দেখার বিষয়।

তবে আসন্ন বিশ্বকাপের আসরে উদ্যোক্তাকারী দেশ ইংল্যান্ডই ফেভারিট হিসাবে মাঠে নামছে। উপরন্তু তারা এখন বর্তমানে একদিনের ক্রিকেটের র‍্যাঙ্কিংয়ে এক নম্বর তালিকায় রয়েছে। সেখানে ঘরের মাঠে খেলার সুযােগটা যে তারা পুরােপুরি নেবে সেটা এখন থেকে বিশ্বাসের সঙ্গে বলা যায়। বিশ্বকাপে খেলতে নামার আগে ইংল্যান্ড শিবিরে চোটগ্রস্ত হয়ে পড়েছিলেন কিছু খেলােয়াড় তবে তারা প্রত্যেকেই পুরােপুরি সুস্থ হয়ে উঠেছেন এবং তাদের নিয়েই আজ ইংল্যান্ডের প্রথম একাদশ গঠন করা হবে সেটা এখন থেকে নিশ্চিতভাবে বলা যায়।