দিল্লি, ৪ নভেম্বর– ভোটের নির্ঘন্ট ঘোষণা হতেই মাঠে নেমে পড়েছে প্রতিটি দল। এই ভোট শাসকদল বিজেপির কাছে প্রেস্টিজ ফাইট হয়ে দাঁড়িয়েছে। টানা ২৭ বছর ক্ষমতায় থাকায় গুজরাতে সরকার বিরোধী হাওয়া প্রবল। তারপর মোরবির দুর্ঘটনা ‘গোদের ওপর বিষফোড়া’র মতো হয়েছে গেরুয়া শিবিরের। মানুষের ক্ষোভে প্রলেপ দিতে তৎপর দল ও সরকার।
এখানে আসন বাড়িয়ে পুনরায় ক্ষমতায় ফেরাই লক্ষ্য। তাই কমিশন নির্ঘণ্ট ঘোষণা করতেই দলের কোর কমিটির সঙ্গে বৈঠকে করলেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। বৈঠক শেষে প্রার্থী তালিকায় বেশকিছু নতুন মুখ থাকার ইঙ্গিত মিলেছে গেরুয়া শিবিরের তরফে। বাদ পরতে পারেন বেশ কয়েকজন বর্তমান বিধায়ক। তৎপর দুই বিরোধী দল কংগ্রেস ও আপও । আগেই ৮৬জন প্রার্থীর নাম ঘোষণা করে দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী কেজরিওয়ালের দল। এদিন ক্ষমতায় এলে রাজ্যের মানুষের জন্য কী করবেন তার ফিরিস্তি দেন কেজরিওয়াল। অন্যদিকে, দলের নবনির্বাচিত সভাপতি দিল্লিতে ফিরলেই গুজরাত ভোটে প্রথম দফার প্রার্থী তালিকা ঘোষণা করবে কংগ্রেস। তারই তোড়জোর কংগ্রেসের সদর দফতরে।
কেন্দ্রীয় পেট্রোলিয়াম মন্ত্রক সূত্রে খবর, ভোটারদের মন জয়ে পেট্রেল, ডিজেল ও গ্যাসের দাম কমানো হতে পারে। গুজরাটে গতবারই পাঁচবারের মধ্যে সবচেয়ে কম আসনে জয় পায় মোদি-অমিত শাহদের দল। ১৮২ আসনের মধ্যে ঝুলিতে আসে ৯৯টি। কংগ্রেস পায় ৭৭ আসন। অন্যান্যরা ৬টি। এর মাঝে পাঁচ বছর অতিক্রান্ত। পাঁচবছরে মুখ্যমন্ত্রী বদল করতে হয়েছে পদ্ম শিবিরকে। তাতেও মানুষের ক্ষোভ প্রশমিত করা যায়নি। তাই ‘ড্যামেজ কন্ট্রোল’ করতে গত চারমাস দফায় দফায় গুজরাট গিয়েছেন মোদি-শাহ-নাড্ডারা। জনমুখী প্রকল্প ঘোষণার পাশাপাশি সাংগাঠনিক বৈঠক করেছেন। আর গত একমাসে কার্যত গুজরাটে পড়ে থেকেছেন হেভিওয়েট নেতারা। স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী মোদি শেষ কয়েকদিন নিজের রাজ্যে একাধিক প্রকল্প ঘোষণার পাশাপাশি প্রতিশ্রুতি দিয়ে এসেছেন।
এদিন নির্বাচনের নির্ঘন্ট ঘোষণা হতেই রাজ্যের কোর কমিটির সঙ্গে বৈঠকে বসেন অমিত শাহ। নির্বাচনী কৌশল নিয়ে আলোচনার পাশাপাশি প্রার্থী তালিকা নিয়ে আলোচনা হয় বলে সূত্রের খবর। প্রথম দফার প্রার্থী চূড়ান্ত করতে দু-একদিনের মধ্যেই দলের নির্বাচনী কমিটি বৈঠকে বসবে। তবে উল্লেখযোগ্য, এদিনের বৈঠকে বেশ কয়েকজন বিধায়কের কাজকর্মে উষ্মা প্রকাশ করেন অমিত শাহ। প্রার্থী তালিকা থেকে তাঁদের বাদ দেওয়ার নির্দেশ দেন। এরকম প্রায় ২৪-২৫ জন বর্তমান বিধায়কের বাদ পড়ার সম্ভাবনা প্রবল বলে সূত্রের খবর। মোরিবর ঘটনার পর রাজ্য প্রশাসন ও দলের ওপর ক্ষুব্ধ মোদি-শাহরা। তাই মুখ্যমন্ত্রী মুখও বদল হতে পারে বলে বিজেপির দিল্লির কেন্দ্রীয় কার্যালয় সূত্রে খবর।
অন্যদিকে, শাসক বিজেপি ও প্রধান বিরোধী কংগ্রেসের কপালে চিন্তার ভাঁজ ফেলেছেন দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী। ক্ষমতায় এলে রাজ্যের মানুষকে বিনামূল্যে বিদ্যুৎ, শিক্ষা ও উন্নত চিকিৎসা দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন তিনি। ২০১৭ এর নির্বাচনে কেজরিওয়ালের দল এই রাজে্য কোনও প্রভাব না ফেলতে পারলেও এবার দাগ কাটবে বলে মনে করছে রাজনৈতিক মহল। ফলে পদ্ম না হাত। কার কপাল পোড়ে সেদিকে নজর সকলের। মোদি ও কেজরিওয়ালকে ধাক্কা দিতে প্রতিশ্রুতির বন্যা বইয়ে দিচ্ছে কংগ্রেস। ইতিমধ্যেই গুজরাতের জন্য সাতদফা প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন রাহুল গান্ধী। তার মধ্যে ৩০০ ইউনিট পর্যন্ত বিনামূল্যে বিদ্যুৎ, বেকারদের চাকরি, শ্রমিক কল্যাণে একাধিক প্রকল্প ঘোষণা করেছেন সোনিয়াপুত্র। আবার গুজরাট প্রদেশ কংগ্রেসের থেকে আসন পিছু দুই অথবা তিনজন প্রার্থীর নাম দিল্লিতে পাঠানোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল। অধিকাংশ আসনে প্রার্থীদের নাম দিল্লির আকবর রোডের দফতরে এসে পৌঁছেছে। চলতি সপ্তাহে প্রদেশ নেতৃত্বের সঙ্গে বৈঠক করে সোনিয়া গান্ধি ও মল্লিকার্জুন খাড়গে প্রার্থী তালিকায় চূড়ান্ত সিলমোহর দেবেন বলে কংগ্রেস সূত্রে খবর।