৯০ এর দশক ততদিনে সেলুলয়েডের আলো থেকে আড়ালে চলে গিয়েছেন বিগ বি, রাজেশ খান্না, ঋষি কাপুর, ধর্মেন্দ্র, জিতেন্দ্র। বলিউডে তৈরী হয়েছে একটা শূন্যতা। বিশেষ করে রোমীয়-জুলিয়েট রোমান্স পাল্টে জায়গা করে নিয়েছে অ্যাএংরি ইয়ং ম্যানদের রোমান্সের রসায়ন। বরং প্রেম তখন জারিত হয় অ্যাকশনের অনুঘটক। ভিলেনদের মোকাবিলায় বেশ কিছুটা রুদ্ধশ্বাস মারামারির আগুন আঁচে। এইভাবেই ৯০ এর দশকের অ্যাকশন বেসড রোমান্টিক ছবি জন্ম নিল। আর সেই সূত্রেই দরকার পড়লো বেশ কিছু ইয়ং হিরোর যারা তার হেরোইনকে খুঁজে পাবে বেশ চড়াই-উৎরাই পেরিয়ে। আর সেই ধারাই শুরু করল ‘দিলওয়ালে দুলহানিয়া যে জায়েঙ্গে’-র মতো ছবি।
বৃহস্পিতবার সেই ছবি পরিণত হল ২৭ বছরের যৌবনে। এটি এমন একটি ছবি, যা সেইসময় ক্রমশ ধুঁকতে থাকা বলিউডকে চাগিয়ে তুলেছিল। ভারতীয় সিনেমাকে পৌঁছে দিয়েছিল বিশ্বের আনাচ-কানাচে। হিন্দি সিনেমায় রোম্যান্সকে তুলে ধরেছিল একেবারে নতুন আঙ্গিকে। শাহরুখ-কাজলকে নিয়ে প্রথমবারেই ছবি পরিচালনায় নেমে আদিত্য চোপড়া পাল্টে দিয়েছিলেন ভারতীয় সিনেমার গতিপথ। তাই এই ছবিকে যদি বলিউডের নবপ্রজন্মের রোম্যান্সের পথিকৃৎ বলা হয়, খুব একটা ভুল হবে না।
২০১৫ সালে ছবিমুক্তির ২০ বছরে থিয়েটার কর্তৃপক্ষ জানিয়েছিল যে, সেই বছরেই শেষবারের মতো চালানো হবে ‘ডিডিএলজে’। কিন্তু ঘোষণাই সার, এই শো বন্ধ করা যে একপ্রকার অসম্ভব, তা কিছুক্ষণের মধ্যেই পরিষ্কার হয়ে যায়। অগণিত সিনেমাপ্রেমী এই সিদ্ধান্তের বিরোধিতা শুরু করে ‘মারাঠা মন্দির’-এর সামনে জমায়েত করতে শুরু করেন। এমনকি ইন্টারনেটেও শুরু হয় প্রতিবাদ। পরিস্থিতি বেগতিক বুঝে প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই নিজেদের সিদ্ধান্ত বাতিল করে দেয় হল কর্তৃপক্ষ। প্রসঙ্গত বলে রাখা দরকার, করোনা পরিস্থিতির সময়টুকু ছাড়া এখনও অবধি একদিনও ‘মারাঠা মন্দির’-এ ‘ডিডিএলজে’-র শো বন্ধ হয়নি। এবং এখনও শো চলাকালীন প্রেক্ষাগৃহ প্রায় হাউজফুল থাকে।
যদিও এখন অনেকেই এই ছবিটিকে ক্লিশে কিংবা রিগ্রেসিভ তকমা দিয়ে থাকেন। ‘ডিডিএলজে’-তে পরিচালক বা কাহিনিকার যেহেতু মেয়েদের ইচ্ছা অপূর্ণ থাকার গল্প বলেছেন, অন্যদিকে ছবিতে সিমরনের মা’র স্বামীর কথা শুনে ত্যাগের গল্প ফুটে উঠেছে, আবার তেমনই এই সিনেমাতে মেয়েদের প্রায় বস্তু হিসাবে ট্রিট করা হয়েছে, তাই এমন অভিযোগ খুব একটা মিথ্যে নয়। কিন্তু সেই সমালোচকদের বোঝা প্রয়োজন, সিনেমাটা কোন সময়ে তৈরি হয়েছিল।
এবার সেইসময় দাঁড়িয়ে ভারতীয় দর্শকদের ধ্যানধারণা যেমনটা ছিল (আজও যে খুব একটা বদলেছে, তা নয়), তেমনভাবেই তৈরি হয়েছিল ‘ডিডিএলজে’। আবার রাজ আর সিমরন যখন পালিয়ে না গিয়ে পরিবারের অনুমতি নিয়েই বিয়ে করতে চাইছে, এটা দেখে কিন্তু নতুন প্রজন্মের পাশাপাশি পুরনো প্রজন্ম অর্থাৎ বাড়ির গুরুজনরাও প্রচণ্ড খুশি হয়েছিলেন। ফলে ভারতীয় ছবির অনুরাগীরা, বিশেষ করে বলিউডপ্রেমীরা ভীষণভাবে ছবিটির সঙ্গে একাত্ম হতে পেরেছিলেন। আর এখানেই ‘দিলওয়ালে দুলহানিয়া লে জায়েঙ্গে’র সার্থকতা।
শুধু ভারতেই নয়, বিদেশে থাকা ভারতীয়দের মধ্যেও ‘ডিডিএলজে’ ভীষণভাবে সমাদৃত হয়েছিল। আর এই সিনেমার পরই বিশ্বব্যাপী চাহিদা বেড়েছিল বলিউডের সিনেমার। এই ছবির পরেই শাহরুখের মাধ্যমে বলিউডকে নতুন করে চিনতে শুরু করে সিনেমাপ্রেমীরা। আর ‘ডিডিএলজে’ দিয়ে নিজেকে নতুনভাবে আবিষ্কার করেন শাহরুখ নিজেও।