• facebook
  • twitter
Saturday, 20 December, 2025

ক্ষমা প্রার্থনাই যথেষ্ট?

শীর্ষ আদালত এখনও দুঃখপ্রকাশ ও ক্ষমা প্রার্থনাকে সমান বলে গণ্য করেনি।এইসব কথাতে আঘাতপ্রাপ্ত ভাবাবেগে প্রলেপ পড়ে কিনা জানা নেই,কিন্তু ১৯৮৪-র শিখ হত্যা সম্পর্কে উদাসীন মন্তব্যের জন্য সাম পিত্রোদাকে ভর্তসনা করার সময় রাহুল গান্ধি আরও কড়া ভাষা ব্যবহার করতে পারতেন।

স্যাম পিত্রোদা(Photo: IANS)

শীর্ষ আদালত এখনও দুঃখপ্রকাশ ও ক্ষমা প্রার্থনাকে সমান বলে গণ্য করেনি।এইসব কথাতে আঘাতপ্রাপ্ত ভাবাবেগে প্রলেপ পড়ে কিনা জানা নেই,কিন্তু ১৯৮৪-র শিখ হত্যা সম্পর্কে উদাসীন মন্তব্যের জন্য সাম পিত্রোদাকে ভর্তসনা করার সময় রাহুল গান্ধি আরও কড়া ভাষা ব্যবহার করতে পারতেন।পিত্রোদার লজ্জিত হওয়া উচিত ও প্রকাশ্যে ক্ষমা চাওয়া উচিত বলে রাহুল গান্ধি যে মন্তব্য করেছেন তা যথেষ্ট নয়। পিত্রোদা দিল্লির শিখ গণহত্যা সম্পর্কে ‘হুয়া তো হুয়া ’ মন্তব্য করে বিষয়টিকে লঘু করায় বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে।তার হিন্দি বলার দক্ষতা না থাকায় এই ঘটনা ঘটেছে বলে পিত্রোদা যে ব্যাখ্যা দিয়েছেন পাঞ্জাবের  জনগণের কাছে তা নিশ্চয়ই গ্রহণযােগ্য হবে না।পরিবারের প্রিয় পিত্রোদাকে রাহুলের মৃদু ধমকানিও তাঁরা নিশ্চয়ই পছন্দ করবেন না।পিত্রোদাকে তাঁর পদ থেকে পর্যন্ত সরিয়ে দেওয়া হয়নি।নরেন্দ্র মােদি সম্পর্কে কুমন্তব্যের জেরে মণিশঙ্কর আয়ারকে অন্তত সাময়িকভাবে দল থেকে সাসপেন্ড করা হয়েছিল।পিত্রোদার ব্যাপারে একটা বহুল প্রচারিত মত বল পাঞ্জাবের নির্বাচনের প্রাক্কালে রাহুল গান্ধি একটা সীমিত ড্যামেজ কন্ট্রোলের পথই বেছে নিয়েছেন।এতে পাঞ্জাবের ক্যাপ্টেন অমরিন্দর সিংয়ের কাজটা বেড়ে গেল।অমরিন্দর সিং রাজ্যে অকালি-বিজেপি জোটের ভালাে ফলে বাধা দেওয়ার জন্য মরিয়া প্রয়াস করে যাচ্ছেন। ১৯৮৪ সালে ব্লুস্টার অপারেশনের পর থেকে কংগ্রেস দীর্ঘকাল রাজ্যের ক্ষমতা থেকে বঞ্চিত থাকার পর সর্বশেষ বিধানসভা নির্বাচনে ক্ষমতায় ফিরতে সমর্থ হয়েছে। পিত্রোদা প্রায়শই দাবি করেন যে তিনি রাজনীতিক নন,একজন টেকনােক্রাট।ফলে তিনি কেন রাজনীতির বিষয়ে নাক গলাতে গেলেন তা বােঝা গেল না।বােঝাই যাচ্ছে, বর্তমান নির্বাচনী প্রচারাভিযান তাঁর চিন্তাভাবনার ওপর ছাপ ফেলেছে।তবু রাহুল কিন্তু পিত্রোদার ওপর খড়গহস্ত হননি।

বৃহত্তর প্রশ্নটা হল,রাজনীতিতে ক্ষমা প্রার্থনার মূল্য নিয়ে।এটা ঠিক যে ইন্দিরা গান্ধি জরুরি অবস্থা ও ব্লুস্টার অপারেশনের জন্য ক্ষমা চেয়েছিলেন।কিন্তু এর থেকে এই সিদ্ধান্তে আসা যাবে না যে তিনি জনগণের ক্ষতিগ্রস্ত অংশের কাছে আবার আপনজন হয়ে উঠেছিলেন।কোনও মহীরুহের পতন ঘটলে মেদিনী একটু কম্পিত হয় বলে মন্তব্য করায় রাজীব গান্ধি বরাবর কলঙ্কিত রয়েই গেলেন।দিল্লির গণহত্যার অন্তত দুই নায়ককে মন্ত্রিসভায় স্থান দিয়ে রাজীব তাদের পুরস্কৃতই করেছিলেন।তাই পিত্রোদার মন্তব্য দলের কাছে বিব্রতকর হলেও বিপর্যয়কর বলে মনে হয়নি।

Advertisement

কুকথার এই অবাধ মরশুমে রাজনীতিকরা একে অপরের বিরুদ্ধে অভিযােগ করার সময় প্রায়শই ক্ষমা প্রার্থনার দাবি জানান।মজার ব্যাপার হল সবাই বলছে কেন অন্যকে ভােট দেওয়া উচিত নয়,কিন্তু একথা কেউ বলছে না যে কেন তাকে ভােট দেওয়া উচিত।এটা নেতিবাচক প্রচারেরই ফল।ক্ষমা প্রার্থনার দাবিটা এখন কেবল দেশীয় ক্ষেত্রেই সীমাবদ্ধ নেই।মাত্র এক মাস আগে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী টেরেসা মে জালিয়ানওয়ালাবাগ গণহত্যার জন্য সরকারিভাবে ক্ষমা প্রার্থনার পরিবর্তে শুধুমাত্র দুঃখপ্রকাশ করায় পাঞ্জাবে বিপুল আবেগের সঞ্চার হয়েছিল।রাহুল অন্তত বলেছেন পিত্রোদার লজ্জিত হওয়া উচিত এবং ক্ষমা প্রার্থনা করা উচিত,ভাবখানা যেন তিনি এরকম কোনও কাজ করেননি।

Advertisement

Advertisement