সােমবার ভারতীয় শেয়ার বাজার বিগত দশ বছরে একদিনে সর্বোচ্চ উত্থানের সাক্ষী হয়ে রইল রবিবারের বুথ ফেরত সমীক্ষার খবরে উৎসাহিত হয়ে। রবিবার ২০১৯ সালের লােকসভা নির্বাচনের সপ্তম ও শেষ দফার ভােট সম্পন্ন হতেই বিভিন্ন টিভি চ্যানেলগুলি বুথ ফেরত সমীক্ষা বা এক্সিট পােল দেখাতে শুরু করে এবং রাত পর্যন্ত সেই সব সমীক্ষায় বিজেপি তথা এনডিএ’র সরকার গঠনের সম্ভাবনা উজ্জ্বল হয়ে ওঠে।
২০১৯ সালে নরেন্দ্র মােদির নেতৃত্বাধীন একটি মজবুত ও স্থায়ী সরকার যে ফের একবার ক্ষমতায় আসতে চলেছে, বুথ ফেরত সমীক্ষায় তারই স্পষ্ট ইঙ্গিত পাওয়া যায়। এই খবরে উৎসাহিত হয়ে সােমবার শেয়ার বাজার খুলতেই দ্রুত গতিতে উপরে উঠতে থাকে সেনসেক্স ও নিফটির অন্তর্গত শেয়ারগুলি।
পাশাপাশি, এদিন আন্তর্জাতিক বাজারে মার্কিন ডলারের তুলনায় বেড়ে যায় ভারতীয় টাকার দামও। এদিন সেনসেক্স ১৪২১ অঙ্ক বেড়ে বাজার বন্ধের সময় দাঁড়ায় ৩৯,৩৫২ অঙ্কে এবং নিফটি ৩.৭ শতাংশ বেড়ে দাঁড়ায় ১১৮২৮ অঙ্কে, যা বিগত দশ বছরে ভারতীয় শেয়ার বাজারে যে কোনও একদিনের সবচেয়ে বড় উত্থান। লােকসভা নির্বাচনের প্রকৃত ফলাফল যদিও জানা যাবে ২৩ মে, বৃহস্পতিবার।
শেয়ার বাজারের এদিন উত্থানের নেতৃত্ব দিয়েছে নিফটির ব্যাঙ্ক এবং অটোর সূচকগুলি। ব্যাঙ্কের সূচক এদিন বেড়েছে ৪ শতাংশ, অপরদিকে অটোর নিফটি সূচকও-বড়েছে ৪ শতাংশ। এদের মধ্যে আবার সরকারি ব্যাঙ্কগুলির সচক লাফিয়ে বেড়েছে ৮ শতাংশ পর্যন্ত। এতে লাভবান হয়েছে মূলত ব্যাঙ্ক অব ইন্ডিয়া, ব্যাঙ্ক অব বরােদা, সিন্ডিকেট ব্যাঙ্ক, এলাহাবাদ ব্যাঙ্ক, এসবিআই, কানাড়া ব্যাঙ্ক।
এদের মধ্যে কোনও কোনও ব্যাঙ্ক শেয়ার বৃদ্ধির হার ১০ শতাংশ পর্যন্ত। সেনসেক্সের অধীনস্থ শেয়ারগুলির মধ্যে লাভবান হয়েছে এসবিআই এবং ইভাসইন্ড ব্যাঙ্ক। পাশাপাশি বেড়েছে টাটা মােটরস, এল অ্যান্ড টি, ইয়েস ব্যাঙ্ক, এইচডিএফসি, এম অ্যান্ড এম, মারুতি, ওএনজিসি এবং রিলায়েন্স ইন্ডাস্ট্রিজের শেয়ারের দাম। এই সব সংস্থার শেয়ার বৃদ্ধির হার ৫ থেকে ৭ শতাংশ।
এদিন ভারতীয় টাকার দাম আন্তর্জাতিক বাজারে মার্কিন ডলারের তুলনায় বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৬৯.৬০ টাকা। গত শুক্রবার বাজার বন্ধের সময় টাকার দাম ছিল ৭০.২৩ টাকা। বন্ডগুলির দামও বেড়েছে এই প্রত্যাশায় যে, আগামী মাসে রিজার্ভ ব্যাঙ্ক অব ইন্ডিয়া বাজারে নগদের জোগান ঠিক রাখতে সুদ কমাতে পারে।
সেন্ট্রাল ওয়েলথ ম্যানেজমেন্টের ইকুইটি বিভাগের প্রধান দেবাং মেহতা এদিন জানিয়েছেন, যদি বুথ ফেরত সমীক্ষার ফলাফল ভােটের প্রকৃত ফলাফলের সঙ্গে মিলে যায়, তাহলে ভারতীয় শেয়ার বাজারে দেশি লগ্নি এবং বিদেশি লগ্নির পরিমাণ আরও বাড়বে। তারপর হয়তাে বাজার কিছুটা থিতু হবে, কারণ তখন বাজার বুঝে নিতে চাইবে নতুন সরকার চাহিদা সৃষ্টির জন্য কী কী সিদ্ধান্ত নিচ্ছে। কারণ চাহিদা সৃষ্টির উপর নির্ভর করে ভােগ্যপণ্যের বিক্রি এবং এটাই আখেরে জিডিপি বৃদ্ধির কারণ হয়ে ওঠে। জিডিপি বৃদ্ধি হল আর্থিক বিকাশের সবচেয়ে বড় সূচক।
বাজার বিশ্লেষক সন্দীপ সাবারওয়াল মনে করেন যে যদি একটি শক্তিশালী স্থায়ী সরকার ক্ষমতা আসে, তাহলে শীঘ্রই সেনসেক্স ৪০ হাজারের অঙ্ক ছাড়িয়ে যাবে। কারণ রাজনৈতিক এবং প্রশাসনিক স্থায়িত্বের জন্য ভারতে বিনিয়ােগ বাড়বে বিদেশি আর্থিক সংস্থাগুলির। এদিন বাজার উত্থানে বিএসই’র মিউক্যাপ এবং স্মল ক্যাপের সূচক বেড়েছে প্রায় ৩.৫ শতাংশের মতাে। অর্থাৎ শেয়ার বাজার এদিন সামগ্রিকভাবে প্রতিটি ক্ষেত্রে শেয়ারের উত্থান প্রত্যক্ষ করেছে।