গত ১মে গড়চিরােলিতে নকশাল হামলায় ১৫জন পুলিশকর্মী ও তাঁদের ড্রাইভারের প্রাণহানি মধ্য ভারতের রেড় করিডরে উগ্রপন্থী কার্যকলাপ দমনে ব্যর্থতারই পরিচায়ক।মহারাষ্ট্র পুলিশের ডিরেক্টর জেনারেল এ ব্যাপারে জানিয়েছেন যে সড়ক নির্মাণের কাজে ব্যবহৃত কিছু গাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেওয়ার মােকাবিলা করতে গিয়ে পুলিশের কাজের নির্ধারিত পদ্ধতি অনুসরণ করা হয়নি।একটা অতি সরলীকরণের মনােভাব কখনই স্থায়ী সমাধানের পথ হতে পারে না।শুধু মহারাষ্ট্রে নয়,এই অঞ্চলেই নকশালরা এই প্রথম পুলিশকে ফাঁদে ফেলে হামলা চালাল এমন নয়। এর থেকে বােঝা যাচ্ছে স্বাভাবিক নির্ধারিত পদ্ধতি অনুসরণের বর্তমান পথ হয় বাস্তবসম্মত নয়,অথবা পর্যালােচনার মাধ্যমে তাকে আরও উন্নত করার প্রয়ােজন রয়েছে।পর্যাপ্ত প্রস্তুতি ছাড়াই তড়িঘড়ি পুলিশকে উপদ্রুত অঞ্চলে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। যেসব পুলিশ অফিসার এইভাবে পুলিশ পাঠানাের সিদ্ধান্ত নেন তারা জনগণের সমালােচনা সামাল দিতেই এই পথ নিয়ে থাকেন।কুরখেদা থেকে যে পুলিশ বাহিনীকে ঘটনাস্থলে পাঠানাে হয়েছিল দ্রুত পাল্টা হামলা চালানাের জন্য তারা কি আদৌ পুরােপুরি অস্ত্রসজ্জিত ছিল?তাদের কাছে কি মাইন নিরােধক গাড়ি ছিল?তাদের কাছে কি নকশালদের সম্পর্কে পর্যাপ্ত গােয়েন্দা খবর ছিল? নকশালরা এবারেও আইডি ব্যবহার করে পুলিশদের গাড়ি উড়িয়ে দিয়েছে এবং তারপর বন্দুকের জোরে তাদের শেষ করে দিয়েছে।নির্বাচন সংক্রান্ত কাজে পুলিশ কর্মীদের অন্যত্র সরিয়ে নেওয়ার ফলে মাওবাদী মােকাবিলার জন্য পুলিশ কি কম পড়ে গিয়েছিল?নির্বাচন কমিশনের উদ্দেশ্যেও প্রশ্ন রাখা যায়,স্থানীয় চাহিদার কথা না ভেবে নির্বাচনের জন্য বিপুল পরিমাণ বাহিনী নিয়ােগ কি সঠিক সিদ্ধান্ত?
দান্তেয়াড়া , সুকমা , গড়চিরােলি সহ এই অঞ্চলের সর্বত্র অদক্ষ পুলিশ ব্যবস্থার একই ছবি উঠে আসে।একটা সামগ্রিক লড়াইয়ের পরিকল্পনার অভাবে পুলিশের তরফে কার্যকরী সহযােগিতা ও সমন্বয় এবং জবাব দেওয়ার ব্যাপারটি স্থানীয় পর্যায়েই সীমিত থাকছে,ফলে সাফল্যও সীমিত।নকশালরা কোনও কোনও জায়গায় পুলিশের সৌজন্যেই শক্তি সঞ্চয় করছে এবং আন্তঃরাজ্য সীমা পেরিয়ে অন্যত্র হামলা চালাচ্ছে রাস্তাঘাট সহ বড় বড় নির্মাণকার্যের ব্যাপারে পুলিশের সতর্ক হওয়া দরকার।এখন সময় এসেছে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের উদ্যোগ নেওয়ার।বিভিন্ন সংস্থাকে নিয়ে একটা পূর্ণাঙ্গ পরিকল্পনা রচনার জন্য বিশেষজ্ঞদের সাহায্য নিক কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক। যেহেতু নকশাল সমস্যা মােকাবিলার ব্যাপারে একাধিক রাজ্য জড়িত তাই প্রয়ােজনে একটি যৌথ কম্যান্ডও গড়া যেতে পারে।এই অঞ্চলে দীর্ঘকাল ধরে উগ্রপন্থার সমস্যা চলছে,তাই সংশ্লিষ্ট রাজ্য সরকারগুলিকে তৎপর হতেই হবে।কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অনেকদিন ধরেই দাবি করে আসছেন যে নিরাপত্তা বাহিনীই এখন ওই অঞ্চলে কর্তৃত্ব করছে, কিন্তু নকশালরা মাঝেমধ্যেই নানা হামলার মাধ্যমে তাদের শক্তির পরিচয় দিয়ে চলেছে।বারংবার নকশাল হামলার ব্যাপারে দুর্বল পুলিশি জবাব থেকে বােঝা যায় সবরকম নিরাপত্তা আইনকে একত্রিত করতে কেন্দ্রীয় সরকার ব্যর্থ।অতিরিক্ত বাহুবল প্রদর্শন ছাড়াও নকশালদের প্রভাব থেকে সাধারণ মানুষকে বের করে আনার জন্য কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রককে তৎপর হতে হবে।