নির্বাচন শেষ পর্যায়ে চলে আসছে।আর ভোটের সম্ভাব্য ফলাফল নিয়ে দেশের রাজনৈতিক মহলে বেশি করে অঙ্ক কষা শুরু হয়েছে।হচ্ছে নানা আলােচনা।চুলচেরা বিশ্লেষণ।’আর একবার,মােদি সরকার’-এ নিয়ে দেশব্যাপী বিজেপির নেতাকর্মী সমর্থকেরা আওয়াজ তুললেও,ফলাফলের পাল্লা তাঁদের দিকে ভারী কিনা,তা কেউ বলতে পারবে না।শাসক দল হারতে চায় না,তাদের বিরুদ্ধে নানা ক্ষেত্রে ব্যর্থতা,দুর্নীতির অভিযােগ থাকলেও দল নিশ্চিত,সরকার যা করেছে গত পাঁচ বছরে তার জন্য মানুষ তাদেরই দিল্লির মসনদে বসাবেন।প্রচারের নিরিখে বিজেপি যে অনেকটাই এগিয়ে তা অস্বীকার করা যাবে না।একা প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মােদি যেভাবে সারা দেশ চলে ফেলে ভােটের প্রচার করছেন,তা তারিফযােগ্য।আর পশ্চিমবঙ্গে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় রাজ্যে প্রচারের ঝড় বইয়ে দিয়েছেন।অফুরন্ত প্রাণশক্তি নিয়ে যেভাবে এই দুঃসহ সহ্য কবে একটার পর একটা জনসভা করে যাচ্ছেন,তার প্রশংসা না করে পারা যায় না।আর তিনি যেভাবে প্রধানমন্ত্রীর পাঁচ বারের শাসনের ব্যর্থতা,নানা পরিসংখ্যান এবং দৃষ্টান্ত দিয়ে মানুষকে বুঝিয়েছেন,তা অ-বিজেপি কোনও নেতা এ পর্যন্ত পারেননি।
ভােটের আগে অবিজেপি এবং ধর্মনিরপেক্ষ দলগুলির নেতারা বিজেপি-বিরোধী একটা শক্তপােক্ত জোট গড়া নিয়ে নানা আলােচনা এবং একসঙ্গে কয়েকবার মিলিত হলেও,ঠিক সেই অর্থে বিরােধী জোট গড়ে ওঠেনি।যদিও তার জন্য কয়েকজন নেতার চেষ্টার ত্রুটি ছিল না।এদের মধ্যে অবশ্যই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং অন্ধ্রপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী চন্দ্রবাবু নাইডুর নাম চলে আসবে।রাহুল গান্ধি প্রস্তাবিত এই জোট নিয়ে ততটা আগ্রহান্বিত না থাকলেও,জোটের বিরােধিতা তিনি করেননি।কারণ তাঁর আশা,কংগ্রেস একাই এই নির্বাচনে বাজিমাত করবে।নির্বাচনের আগে এই জোট দানা না বাঁধলেও,নির্বাচন প্রায় শেষের মুখে।মমতা ও চন্দ্রবাবু নাইডু সম্প্রতি খড়্গপুরে একটি সংক্ষিপ্ত আলােচনা সেরে নিয়েছেন।নাইডু বিশ্বাস করেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ই একমাত্র নেত্রী দেশকে পরিচালনার দায়িত্ব নিতে পারেন।কারণ তিনি সব আবিজেপি নেতাদের এক ছাতার তলায় নিয়ে আসার যে চেষ্টা করেছেন,আর কেউ তা পারেননি।তাছাড়া যেভাবে তিনি তাঁর নিজ রাজ্যকে উন্নতির সােপানে তুলেছেন তার জন্য কোনও প্রশংসাই যথেষ্ট নয়।খড়গপুবে এই দুইজনের মধ্যে কী আলােচনা হল,তা বিস্তারিত জানা না গেলেও,বিভিন্ন সূত্র বলছে,নির্বাচনের ফল বেরনাের সঙ্গে সঙ্গে সব অবিজেপি বিরােধী নেতারা আবার মিলিত হবেন ফলাফল বিশ্লেষণ করতে বলা হয়েছে,বিজেপি সংখ্যাগরিষ্ঠ আসন না পেলেও রাষ্ট্রপতি যাতে তাদের সরকার গঠনের জন্য না ডাকেন সে পথে বাধা দিতে হবে।রাষ্ট্রপতিকে অনুরোধ করা হবে,বিরােধী দলগুলির ফলাফলের নিরিখে তাদেরও ডাকতে হবে সরকার গঠনকল্পে।এটাই নাকি চন্দ্রবাবু ও মমতার আলােচনার নির্যাস।
যদিও সবই অনুমানে ঢিল ছােড়া।মানুষের রায় এখন স্ট্রংরুমে বন্দি।সুতরাং সেই রায় কোন দিকে যাবে তা নিয়ে অঙ্ক কষা যেতে পারে,তবে ফল মিলেতেও পারে,নাও মিলতে পারে।ধরে যদি নেওয়া হয় বিজেপি ও তার সঙ্গী দল, নির্বাচনে সরকার গড়ার মতাে আসন পেল,অর্থাৎ সংখ্যাগরিষ্ঠ আসন লাভ করল , তাহলে সরকার গঠনের প্রক্রিয়া সহজ হয়ে যায়।আর বিজেপি যদি পিছিয়ে থাকে , তাহলে বিরােধীরা মিলে যে আসন পাবেন,তা যদি সরকার গঠনের সংখ্যা হয়,তাহলে বিরােধীদেরও ডাকতে হবে রাষ্ট্রপতিকে সরকার গঠন করার জন্য।কিন্তু দলবদ্ধ হয়ে বিরােধীদের রাষ্ট্রপতিকে নিশ্চিত করতে হবে যে তারা সরকার গঠনে সমর্থ।
ভােটের ফলাফল যদি বিজেপির পক্ষে না যায় , তাহলে বিরােধীদের বিকল্প সরকার গঠনে অনেক কাঠখড় পােড়াতে হবে।তখনই বােঝা যাবে এই নেতাদের কার মত কী? যে বিরােধী জোটকে পরিচালনার দায়িত্ব নেবেন, তিনিই হবেন সম্ভাব্য প্রধানমন্ত্রী।এখানে অনেক প্রশ্ন মাথাচাড়া দিয়ে উঠতে পাবে।কংগ্রেসের ঝুলিতে কত আসন আসবে,আবার মায়াবতী-অখিলেশ জোট উত্তরপ্রদেশে কতগুলি আসন পাবে,তার ওপর বিরােধীদের সরকার গঠনের প্রক্রিয়া অনেকটাই নির্ভর করছে।
কোনও কোনও রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞদের মত,বিজেপি তার প্রধান সঙ্গী দল শিবসেনা মিলে এমন আসন পাবে না যা সরকার গঠনে সহায়ক হয়।তখন বিরােধীদের কাছে একটি সুযোগ এসে যাবে।এইখানে বোঝা যাবে বিরোধীরা কীভাবে সংঘবদ্ধ হয়ে, ন্যূনতম কর্মসূচির ভিত্তিতে কেন্দ্রে সরকার গঠনে এগিয়ে আসে।কোনো গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু নিয়ে যদি বিরোধীদের মধ্যে মতান্তর ঘটে, তা আলোচনার মাধ্যমে মিটিয়ে ফেলতে হবে।