আজ সোমবার দেশের ষোড়শতম রাষ্ট্রপতি নির্বাচন। ভোটগণনা হবে ২১ জুলাই। রাষ্ট্রপতি পদপ্রার্থী হিসেবে মোট ১১৫ টি নাম জমা পড়েছিল।
স্ক্রুটিনি পর্ব পেরিয়ে দু’জনের নাম চূড়ান্ত হয়, এনডিএ প্রার্থী দ্রৌপদী মুর্মু এবং বিরোধী প্রার্থী যশবন্ত সিনহা।
মুখোমুখি লড়ইয়ে জনজাতি নেত্রী দ্রৌপদী মুর্মু এবং যশবন্ত সিনহা। বিজেপি নেতৃত্বাধীন এনডিএ সরকারের প্রার্থী দ্রৌপদী।
বিরোধীদের মনোনীত প্রার্থী যশবন্ত দ্রৌপদী জয়যুক্ত হলে জনজাতি সম্প্রদায় থেকে এই প্রথম কাউকে রাষ্ট্রপতি হিসেবে পাবে দেশ।
দেশের দ্বিতীয় মহিলা রাষ্ট্রপতি হিসেবেও দেশের ইতিহাসে নাম নথিভুক্ত হবে তাঁর। অপরদিকে, দেশের প্রশাসনিক এবং রাজনৈতিক ক্ষেত্রে দীর্ঘ দিনের অভিজ্ঞতাসম্পন্ন যশবন্ত।
সংখ্যার নিরিখে তাঁর জয়ের সম্ভাবনা ক্ষীণ বলে মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা। কিন্তু ভোটগ্রহণের ক্ষেত্রে যে কোনও মুহূর্তে পটপরিবর্তন হওয়ার সম্ভাবনাও উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না।
উল্লেখ্য, ইলেক্টোরাল কলেজ রাষ্ট্রপতি নির্বাচন করে, লোকসভা এবং রাজ্যসভা নির্বাচিত প্রতিনিধিরা ওই ইলেক্টোরাল কলেজের অংশ।
এ ছাড়াও, প্রত্যেক রাজ্যের বিধানসভার নির্বাচিত প্রতিনিধি, রাজধানী দিল্লি এবং কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল পুদুচ্চেরীর নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিরাও ভোটগ্রহণে অংশ নেবেন। কোনও মনোনীত জনপ্রতিনিধি রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে অংশ নিতে পারবেন না।
লোকসভা, রাজ্যসভা এবং বিধানসভার নির্বাচিত প্রতিনিধিদের মিলিয়ে বর্তমানে ইলেক্টোরাল কলেজের মোট সদস্য সংখ্যা ৪৮০৯।
এর মধ্যে লোকসভার নির্বাচিত প্রতিনিধি ৫৪৩ জন। ২৩৩ জন রাজ্যসভার নির্বাচিত প্রতিনিধি।
বিধানসভার ৪,০৩৩ জন নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি। তবে লোকসভা রাজ্যসভা এবং বিধানসভার প্রতিনিধিদের ভোটমূল্যে বিক্তর ফারাক।
লোকসভার একজন সদস্যের একটি ভোটের মূল্য ৭০০। সেই নিরিখে লোকসভার ৫৪৩ সদস্যের সম্মিলিত ভোটমূল্য ৩ লক্ষ ৮০ হাজার ১০০। রাজ্যসভার এক সদস্যের ভোটমূল্যও ৭০০।
সেই নিরিখে ২৩৩ জনের সম্মিলিত ভোটমূল্য ১ লক্ষ ৬৩ হাজার ১০০। সংসদের এই দুই কক্ষের সব সদস্যের সম্মিলিত ভোটমূল্য ৫ লক্ষ ৪৩ হাজার ২০০।
অন্য দিকে, বিধানসভার ৪০৩৩ জন নির্বাচিত প্রতিনিধির সম্মিলিত ভোটমূল্য লক্ষ ৫৩ হাজার ২৩১।
রাজ্যের নিরিখে জনপ্রতিনিধিদের ভোটমূল্যেও ফারাক থাকে। সেই সব ধরে, সংসদ, বিধানসভা মিলিয়ে ৪৮০৯ জনের সম্মিলিত ভোটের মূল্য দাঁড়ায় ১০ লক্ষ ৮৬ হাজার ৪৩১।
যে প্রার্থী বেশি সংখ্যক ভোট পাবেন তিনি জয়ী হবেন পরবর্তী রাষ্ট্রপতি হিসেবে। ৫ আজ সোমবার রাষ্ট্রপতি নির্বাচন।
তার প্রাক্কালে রবিবারই ভোটের শেষ লগ্নের প্রচার টুইটারেই সেরে নিলেন বিরোধী পক্ষের রাষ্ট্রপতি পদপ্রার্থী যশবন্ত সিনহা। টুইট করে তিনি ভোটের আবেদন জানিয়েছেন।
পাশাপাশি বিজেপিকে কটাক্ষ করতে ছাড়েননি তিনি। বলেছেন, ‘গণতন্ত্রের স্তম্ভ ধ্বংস করছে ওরা, তাই সংবিধান রক্ষায় ভোটে নেমেছি আমি।’
এর আগে গত বৃহস্পতিবার একটি ভিডিও বার্তায় তাঁর পক্ষে ভোটের জন্য সওয়াল করেন বিরোধী জোটের প্রার্থী তথা এককালের অটল বিহারী বাজপেয়ী মন্ত্রিসভার বিদেশ ও অর্থমন্ত্রী যশবন্ত সিনহা।
ওই ভিডিওতে বিধায়ক সাংসদদের উদ্দেশে তাঁর বার্তা ছিল, আপনার বিবেক যাঁকে বলছে, তাঁকেই ভোট দিন। এদিন সমস্ত রাজনৈতিক দলের উদ্দেশে দু’পাতার প্রচারমূলক একটি বিবৃতি টুইট করেন তিনি।
সেখানে তিনি উল্লেখ করেন যে, রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে প্রতিপক্ষ কেবল দু’জন প্রার্থী নন বরং দু’টি সম্পূর্ণ ভিন্ন আদর্শ। সংক্ষিপ্ত বিবৃতিতে তিনি লেখেন, ‘ধর্মনিরপেক্ষতা ও সংবিধানকে রক্ষা করতে ভোটে দাঁড়িয়েছি আমি।
আমার প্রতিপক্ষ যে দলের হয়ে দাঁড়িয়েছেন তারা গণতন্ত্রের স্তম্ভ গুলিকে ধ্বংস করে সংখ্যাগুরুর আধিপত্য কায়েম করতে চায় এদেশে।
তাঁর বার্তা, আমি ঐকমত্য ও পারস্পরিক সহযোগিতার রাজনীতিকে উৎসাহিত করতে চেয়ে ভোটে দাঁড়িয়েছি।
আমার প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী এমন এক দলের সমর্থনে দাঁড়িয়েছেন, যারা সংঘাত ও সংঘর্ষের রাজনীতি করতেই পছন্দ করেন।
যশবন্তের দাবি, ‘শেষ পর্যন্ত দ্রৌপদী মুর্মু যদি জিতেও যান, তবে তিনি পরিচালিত হবেন এমন মানুষের দ্বারা, যাঁরা ভারতকে কমিউনিস্ট চিন বানতে চায়।’
যশবন্তের প্রশ্ন, ‘এক রাষ্ট্র, একটিমাত্র রাজনৈতিক দল, একজন একনায়ক নেতা, এই সংস্কৃতিকে রোখা উচিত নয় কি আমাদের?’ নিজেই উত্তর দেন, ‘রোখা উচিত বলেই মনে হয় আমার আর আপনারাই তা রুখতে পারেন।’
এদিকে , রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের আগের দিনই হোটেল বন্দি রাজ্যের বিজেপি বিধায়করা। সোমবার অর্থাৎ আজ রাষ্ট্রপতি নির্বাচন।
আর বিজেপির ভোট যাতে এনডিএ প্রার্থী দ্রৌপদী মুর্মুর সমর্থনে আসে তা নিশ্চিত করতেই রবিবার এক হোটেলে নিয়ে যাওয়া হয় রাজ্যের বিজেপি বিধায়কদের। মূলত বিজেপির এখন ৭০ জন বিধায়ক রয়েছে।
কিন্তু হোটেলে এদিন আনা হয়েছে ৬৯ জন বিধায়ককে। এদিন বিজেপির যে বিধায়ক হোটেলে অনুপস্থিত ছিলেন তিনি অর্জুনপুত্র পবন সিং।
বাবা তৃণমূল কংগ্রেসে যোগ দেওয়ার পর পবন সিং আনুষ্ঠানিকভাবে দল না ছাড়লেও পদ্ম শিবিরের পক্ষ থেকে মনে করা হচ্ছে পবনের ভোট তৃণমূল সমর্থিত প্রার্থীর দিকেই যাবে।
তবে এর আগে নির্বাচন ঘিরে অন্যান্য রাজ্যে বিধায়কদের একত্রিত করে রাখার ঘটনা ঘটলেও পশ্চিমবঙ্গে এই প্রথম এমনটি ঘটেছে।
সূত্রের খবর ঘোড়া কেনাবেচার আশঙ্কায় ঝুঁকি নিতে চাইছে না বিজেপি। সব ভোট যাতে দ্রৌপদী মুর্মুর পক্ষে পড়ে তা নিশ্চতি করতেই বাংলার রাজনৈতিক ইতিহাসে এই বেনজির পদক্ষেপ পদ্মশিবিরের।
কারণ, আগেই বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে বিধানসভাতে কারচুপির আশঙ্কা করেছেন।
তৃণমূল তাদের বিধায়কদের ভাঙাতে পারেন বলে আশঙ্কা ভোটিং হলে এ রাজ্যে দ্রৌপদীর ঝুলিতে কম নম্বর আসবে। তা মাথায় রয়েছে বিজেপির।
তবে দলের তরফ থেকে দাবি করা হয়েছে, দূর-দূরান্ত থেকে বিশেষত উত্তরবঙ্গ থেকে আসা বিধায়কদের পক্ষে ঝক্কি।
তার পর বিধানসভায় সকালে সময়ে পৌঁছনোও জরুরি। তাই মুশকিল আসান করতেই বিধায়কদের প্রত্যেককে হোটেলে নিয়ে যাওয়া হয়েছে।
হোটেলেই দলীয় মুখ্যসচেতক মনোজ টিগ্গা বিধায়কদের মক ভোটিং করাবেন। তারপর সোমবার সকালে হোটেল থেকে বিধানসভায় একসঙ্গে যানে গেরুয়া বিধায়করা।