• facebook
  • twitter
Wednesday, 27 November, 2024

এমন কমিশন জীবনে দেখিনি : মমতা

বুধবার নির্বাচন কমিশনের নজিরবিহীন সিদ্ধান্তে রীতিমতাে ক্ষুব্ধ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যেপাধ্যায়। তিনি তাঁর সেই ক্ষোভ উগরে দিয়েছে সংবাদমাধ্যমের কাছে।

মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (Photo: IANS)

বুধবার নির্বাচন কমিশনের নজিরবিহীন সিদ্ধান্তে রীতিমতাে ক্ষুব্ধ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যেপাধ্যায়। তিনি তাঁর সেই ক্ষোভ উগরে দিয়েছে সংবাদমাধ্যমের কাছে।

বুধবার রাত ন’টায় মমতা তাঁর কালীঘাটের বাড়ি সংলগ্ন দলীয় কার্যালয়ে জরুরি ভিত্তিতে সাংবাদিকদের মুখােমুখি হন মমতা। সেখানে তিনি সাফ জানিয়ে দেন, অনেক নির্বাচনের প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষ অভিজ্ঞতা তাঁর রয়েছে। কিন্তু কমিশনের এহেন ভুমিকা, বিশেষ করে এই রাজ্যের ক্ষেত্রে অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক। এরকম ইলেকশন কমিশন আমি জীবনে দেখিনি।

তবে কমিশনের এই সিদ্ধান্ত যে প্রকারান্তরে মােদি-শাহেরই সিদ্ধান্ত সেকথা স্পষ্ট জানিয়ে দেন মমতা। যেখানে রাজ্যে আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতিতে তেমন কোনও বিপর্যয় ঘটেনি, সেখানে নির্বাচন কমিশন কীভাবে ৩২৪ ধারা প্রয়ােগ করল, তা নিয়ে প্রশ্ন তুললেন মমতা।

মমতা বলেন, অর্জুন সিং-এর নির্বাচনী কেন্দ্র (ব্যারাকপুর) এবং কেশপুরের ঘটনা ছাড়া অন্য কোথাও কোনও বড় ধরনের ঘটনা ঘটেনি। সেখানে নির্বাচন কমিশনের এই সিদ্ধান্তকে অসাংবিধানিক, অনৈতিক এবং অন্যায় বলেই মনে করছেন মমতা। গণতন্ত্রের ইতিহাসে এই দিনটিকে কালাে দিন বলেই মন্তব্য করেন মমতা।

দিল্লি থেকে উপ-নির্বাচন কমিশনার সুদীপ জৈন এক সাংবাদিক বৈঠকে কমিশনের সিদ্ধান্তের কথা জানান। দেশের মধ্যে সম্ভবত এই প্রথম ৩২৪ ধারা প্রয়ােগ করা হল বাংলায়।

প্রসঙ্গত, শেষ দফার নির্বাচনের আগে নজিরবিহীনভাবে নির্বাচন কমিশন দায়িত্ব থেকে সরিয়ে দিয়েছে রাজ্যের স্বরাষ্ট্রসচিব অত্রি ভট্টাচার্যকে। সেই সঙ্গে এডিজি সিআইডি রাজীব কুমারকেও। এই আধিকারিককে শুধু সরানােই নয় রাজ্যছাড়া করেছে কমিশন। আজ বৃহস্পতিবার সকাল দশটার মধ্যে তাঁকে রিপোর্ট করতে বলা হয়েছে দিল্লিতে।

বাংলায় এই প্রথম রাজ্যের কোনও স্বরাষ্ট্রসচিবকে ভােটর সময় তাঁর দায়িত্ব থেকে সরিয়ে দিল কমিশন। এদিন ধিক্কার মিছিলের শেষ পর্বে শ্যামবাজারে পৌছনাের পর কমিশনের সিদ্ধান্তের খবর তাঁর কানে পৌঁছনােমাত্র তড়িঘড়ি সভাস্থল ত্যাগ করেন মুখ্যমন্ত্রী।

এরপর মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় রাতে কালীঘাটে সাংবাদিক সম্মেলনে নির্বাচন কমিশনের ওপর অসন্তোষে ফেটে পড়েন। বলেন, মঙ্গলবার অমিত শাহর মিছিলে দাঙ্গা পূর্ব পরিকল্পিত ছিল। বিজেপিই রাজস্থান, ঝাড়খণ্ড, গুজরাত থেকে লােক নিয়ে এসে বিদ্যাসাগরের মূর্তি ভেঙেছে। সেখানে নির্বাচন কমিশন তাঁদের শাস্তি না দিয়ে, বরং পুরস্কৃত করল।

নির্বাচনের প্রচারের সময় কমানাের সিদ্ধান্ত যদি নিরপেক্ষভাবে কমিশন নিত, তাহলে বৃহস্পতিবারই কেন সভা করা বন্ধ করে দেওয়া হল না? এদিন নরেন্দ্র মােদির সভা রয়েছে, সেই কারণেই কি?

সাংবাদিক সম্মেলনে রাজীব কুমাররে রাজ্য থেকে সরিয়ে দেওয়া নিয়েও সরব হলেন মমতা। তিনি প্রশ্ন করেন, রাজীব কুমারকে নিয়ে এত সমস্যা কেন? বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের সময়েও তাে তিনি ভালাে অফিসার ছিলেন। আসলে গদ্দারের কথা শুনেই বিধাননগরে সিপিকে পরিবর্তন করেছে। রাজীবের বিরুদ্ধে এত রাগ কেন? মুকুল রায়, হিমন্ত বিশ্বশর্মাদের বিরুদ্ধে রাজীব কুমার তদন্ত করছে, তাই?

মানুষই শেষ কথা বলবে, মানুষই সুপ্রিম। আমি সব রেকর্ড রাখছি। কমিশনের এই সিদ্ধান্তের বিরােধিতা করে সুপ্রিম কোর্টে যাচ্ছি না। বিচারব্যবস্থা, সংবাদ মাধ্যম, নির্বাচন কমিশন-সবাই হুমকির মুখে রয়েছেন।

মমতা বলেন, শুক্রবারও প্রচার রাজ্যে আমার কর্মসূচি ছিল। কিন্তু তা পরিবর্তন করতে হবে। বিকেল চারটে থেকে পাঁচটা বেহালায় মিছিল করব। আজ শুক্রবার মথুরাপুরে সভা করব। তারপর মােদির সভা হবে। এরপর বালিগঞ্জ ও দক্ষিণ কলকাতায় পূর্বসুচি অনুযায়ী সভা হবে। তবে মমতার বিশ্বাস, এই সব অন্যায়ের প্রতিবাদ মানুষ ব্যালট বাক্সে জানাবে।