বুধবার দলীয় প্রার্থী সৌগত রায়ের সমর্থনে উত্তর ২৪ পরগনার আগরপাড়ায় জনসভা থেকে মঙ্গলবার বিদ্যাসাগরের মূর্তি ভাঙা ইস্যুতে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মােদি ও বিজেপিকে একযােগে আক্রমণ শানালেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
এদিন বিকেল চারটে নাগাদ আগরপাড়ার উষুমপুর বটতলায় বিদ্যাসাগর ক্রীড়াঙ্গনে জনসভা থেকে বিদ্যাসাগর কাজের ঘটনা প্রসঙ্গে বিজেপিকে তােপ দাগেন মুখ্যমন্ত্রী। বক্তব্য রাখার আগে মঞ্চে বিদ্যাসাগরে ছবিতে মাল্যদান করেন তিনি। আর এরপরেই বক্তব্যের সিংহভাগ জুড়েই গতকাল অমিত শাহের রােড শাে চলাকালীন কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় ও বিদ্যাসাগর কলেজে তাণ্ডবের ঘটনায় বিজেপিকে দায়ী করেন।
মুখ্যমন্ত্রী বলেন, বিদ্যাসাগর, রবীন্দ্রনাথকে মেরে বাংলা দখল করা যাবে না। তাঁর কথায়, ‘বাংলার সংস্কৃতিকে কেউ ধ্বংস করতে চাইলে প্রয়ােজনে জীবন দেব, কিন্তু বাংলার কোনও ক্ষতি হতে দেব।’ তাঁর দাবি, বিহার, উত্তরপ্রদেশ, রাজস্থান, বিহার, ঝাড়খণ্ড থেকে লােক এনে তাণ্ডব চালানাের পরিকল্পনা করেছিল বিজেপি। বাইরে থেকে লােক এনে বিদ্যাসাগরের মূর্তি ভাঙচুর করেছে বিজেপি। কারণ, বাঙালি কোনওদিন বিদ্যাসাগরের মূর্তি ভাঙতে পারে না। তারা জানেন বাংলার সংস্কৃতিতে বিদ্যাসাগরের ভূমিকা কতটা।
সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়ে যাওয়া বেশ কিছু ফুটেজ সভায় উপস্থিত মানুষের সামনে রেখে মমতা বলেন, ‘বিজেপি বাংলার সংস্কৃতিকে ধ্বংস করতে চাইছে। বিদ্যাসাগর, নেতাজি, বিবেকানন্দের বাংলাকে অপমান করছে। এসব আমরা মানব না। বাংলার স্বার্থে প্রয়োজনে জীবন দিয়ে দেব। কন্তু কোনওভাবেই অন্য রাজ্যের লােকজনের হাতে বাংলাকে ধ্বংস হতে দেব না।’
তিনি আরও বলেন, ‘চড়কের মিছিলের মতাে হমান সহ নানারকম সাজ করে ডিজে বাজিয়ে ব্লাড়া দিয়ে গুন্ডামি করতে করতে যাওয়া। রাস্তায় কোটি কোটি টাকার গাঁদা ফুল ফেলে গেছে। আমরা ফুল দিয়ে পুজো করি, আর ওরা এই ফুল পা দিয়ে মাড়িয়ে গেছে। এটাই নাকি ওদের সংস্কৃতি। বাংলার মানুষ এসব অসভ্যতা কখনওই পছন্দ করে না। এরা বাংলার সংস্কৃতি, ঐতিহ্য জানে না। তাই ভাড়াটে গুন্ডা নিয়ে এসে তাণ্ডব চালিয়েছে। বিদ্যাসাগরের উপর হামলা মানে বাংলার উপর আক্রমণ।’
সভায় প্রার্থী সৌগত রায় সহ উপস্থিত ছিলেন মন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক, তাপস রায়, সুজিত বসু, বিধায়ক নির্মল ঘোষ, পার্থ ভৌমিক, জেলা পরিষদের কর্মাধ্যক্ষ নারায়ণ গােস্বামী প্রমুখ।
মুখ্যমন্ত্রী বলেন, সিপিএম এতদিন বাংলার ঐতিহ্য নষ্ট করেছে। এখন বাম-রাম মিলে একই কাজ করছে। পাশাপাশি বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতিকে আক্রমণ করে তিনি বলেন, অমিত শাহের কোনও গুরুত্বই নেই তাঁদের কাছে। তাই তাঁকে আক্রমণের কোনও প্রশ্নই নেই।
মােদি মিথ্যে কথা বলছেন। এদিন প্রধানমন্ত্রীকে আক্রমণ করে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘মােদি যতই মিটিং করুক, আমাদের কিছুই এসে যায়। যত বেশি মিটিং করবে, তত ভােট কমবে ওদের।’
এদিন বিজেপির বিরুদ্ধে ভােট কেনার অভিযােগ তুলে সরব হন মুখ্যমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘এজেন্ট বসাতে পাঁচ হাজার টাকা দিচ্ছে। টাকা দিচ্ছে ভােটারদের। মােটা টাকার বিনিময়ে ভােট কিনছে বিজেপি। কিন্তু আমরা কেনাবেচার রাজনীতিতে বিশ্বাসী নই। রাজনীতি টাকা লুটের জায়গা নয়। আর এই বাংলায় কাউকে তা করতে দেব না। অনেকদিন আগেই প্রস্তাব দিয়েছিলাম ভােটের জন্য টাকা খরচ করবে নির্বাচন কমিশন। আমরা শুধু প্রার্থী দেব। আমার বিশ্বাস একদিন না একদিন তা চালু হবেই। মােদি যদি ভাবেন এইভাবে ভােটে জিতবেন, তা কোনও দিনও সম্ভব নয়। আপনি বিগত পাঁচ বছরে কী কী করেছেন, তা সবাই জানে।’
মমতা বলেন, ‘একটা ভােট মানে একটা বদলা। সৌগত রায়কে ভোট দিয়ে জিতিয়ে সংসদে পাঠান। সৌগত রায় অত্যন্ত মূল্যবান সাংসদ। সংসদে নাগরিকত্ব বিলের প্রতিবাদে সরব হবেন।’