তৃণমূলের ভাটপাড়ার প্রাক্তন বিধায়ক এবং স্থানীয় পুরসভার চেয়ারম্যান, অর্জুন সিংকে বারাকপুর লােকসভা কেন্দ্রে তৃণমূলের প্রার্থী হয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার জন্য এই দলের নেতৃত্ব যে টিকিট দেয়নি তা ঠিক অথবা বেঠিক প্রমাণিত হবে ২৩ মে, যেদিন ভােটের ফলাফল ঘােষিত হবে। অর্জুন সিং তারপর বিজেপিতে যােগ দেন এবং এই দল তাকে দলের প্রার্থী হয়ে লড়ার জন্য নির্বাচিত করেন।
কিন্তু যেটা বলার জন্য এই প্রারম্ভিক কথা তা হল, অর্জুন সিং তৃণমূলের বিদায়ী সাংসদ দীনেশ ত্রিবেদীর সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় অবতীর্ণ হওয়ার ফলে বারাকপুর লােকসভা কেন্দ্রের কৌলিন্য অনেকগুণ বেড়ে গিয়েছিল। অর্জুন বনাম দীনেশ ত্রিবেদী মুখােমুখি, সুতরাং প্রথম থেকেই এই অঞ্চলে উত্তেজনার পারদ উর্ধ্বমুখী। ভােটের দিন এই কেন্দ্রের বিভিন্ন বুথে, বুথের বাইরে, দুই দলের সমর্থকদের মধ্যে যে অশান্তি, সংঘর্ষ হয়েছে তা হয়ত অন্য কোনও কেন্দ্রে হয়নি। অশান্তি যেমন হয়েছে, মানুষ আবার অনেক উৎসাহ উদ্দীপনা নিয়ে দীর্ঘক্ষণ ভােটের লাইনে দাঁড়িয়ে থেকে তাদের ভােটাধিকারও প্রয়ােগ করেছেন।
এই কেন্দ্রের নির্বাচন শেষ হয়েছে ৬ মে। তারপরও অশান্তি বিদায় নেয়নি। ছােটখাটো সংঘর্ষ দুই দলের সমর্থকদের মধ্যে চলছেই। অঞ্চলের বাসিন্দাদের মতে, দীনেশ ত্রিবেদীর দু’দুবার বিপুল ভােটে এই কেন্দ্র থেকে নির্বাচিত হবার মূল কারিগর ছিলেন অর্জন সিং। সুতরাং সেই অর্জন যখন ত্রিবেদীর প্রতিদ্বন্দ্বী তখন ভাগ হয়ে যাওয়া দুই দলের সমর্থকদের মধ্যে রেষারেষি থাকবেই।
এই অঞ্চল শান্ত না হওয়ার অন্যতম কারণ হল ভাটপাড়া বিধানসভা কেন্দ্রের উপনির্বাচনে প্রার্থী হয়েছেন অর্জুন পুত্র, আর তার সঙ্গে পাল্লা দেবেন অনেকদিন রাজনীতিতে অলস সময় কাটানাে প্রাক্তন পরিবহণমন্ত্রী মদন মিত্র। মদন মিত্রের নাম যেদিন ঘােষিত হল, সেই দিনই অর্জুন সিংয়ের স্পর্ধিত ঘােষণা ‘ওর জামানত বাজেয়াপ্ত করব।’ সুতরাং ভাটপাড়া উপনির্বাচনের উত্তাপ ছড়িয়ে পড়ছে সারা বারাকপুর অঞ্চলে। আর দাপুটে তৃণমূল নেতার কপালে চিন্তার ভাজ দেখা গেছে।
তৃণমূল নেতার এই দলবদলের ফলে, বারাকপুর এখন একটি অন্যতম নজরকাড়া কেন্দ্র। ভােটের দিন বিজেপি প্রার্থী যেভাবে অভিযােগ শুনেই বিভিন্ন কেন্দ্রে ছােটাছুটি করেছেন, তা সবার নজর কেড়েছে। তিনি মােহনপুরের একটি বুথে এসে পুলিশের সঙ্গে তর্কাতর্কি এবং শেষ পর্যন্ত হাতাহাতিও হয়েছে। উপনির্বাচনের প্রচার ঘিরে প্রতিদিনই কোনও না কোনও ঘটনা ঘটছে। চলবে ভােটের দিন পর্যন্ত। অপরদিকে যেদিন বারাকপুর কেন্দ্রের ফল ঘােষণা হবে, সেদিনও একটা শিল্পে সমৃদ্ধ শহর বারাকপুর যে শান্ত থাকবে না তা পলিশেরও অনুমান।
অতীতে বারাকপুর লােকসভা কেন্দ্র নিয়ে এত অশান্তি, এত কথা, এত আলােচনা কোনওদিনই হয়নি। বাম আমলে স্থানীয় সিপিএম নেতা দীর্ঘদিন এই আসনটি ধরে রেখেছিলেন। তারপরই পরিবর্তন এবং দীনেশ ত্রিবেদী তৃণমূলের প্রার্থী হয়ে বাম প্রার্থীকে পরাজিত করলেন দু’দুবার। সুতরাং এবার কী হবে তা নিয়ে স্থানীয় স্তরে আলােচনা অঙ্ক কষা, বিশ্লেষণের শেষ নেই। তবে বিশ্লেষণ ভাল, অঙ্ক কষাও ভাল, কিন্তু তা যদি অশান্তির আবহে হয়, তা হলে তা কোনওভাবেই সমর্থনযােগ্য নয়।
তবে ভােট ছাড়াও, এই শিল্পশহর শান্ত, সংঘর্ষবর্জিত, কোনন দিনই ছিল না। এখন তাে বি টি রােডের ধারে, অনেক শিল্প সংস্থায় ঝাঁপ পড়েছে– শ্রমিক অশান্তি তেমন না থাকলেও, টিটাগড় অঞ্চলে ছােটখাটো সংঘর্ষ, খুন, জখম লেগেই আছে। বারাকপুরকে শান্ত রাখতে তাই বারাকপুর পুলিশ কমিশনারেট স্থাপিত হয়েছে। তবুও অশান্তির ঘটনা এড়ানাে যাচ্ছে না। বামেদের আধিপত্য চলে যাবার পর, তৃণমূলেরও রমরমা বারাকপুর লােকসভা কেন্দ্রের সাতটি বিধানসভা কেন্দ্রে। সবটাই এখন তৃণমুলের অধীনে।
ভােট হয়ে গেছে, সুতরাং তা নিয়ে জল্পনাকল্পনা নিষ্প্রয়ােজন। কিন্তু এই কেন্দ্রে কে জিতবে, তৃণমুল না বিজেপি, তাই নিয়েই এখন আলােচনা তুঙ্গে। অর্জুন সিং বিজেপিতে যােগ দেওয়ার ফলে, এই কেন্দ্রের ফলাফল নিয়ে আলােচনা সর্বত্র। স্থানীয় বিজেপি নেতৃত্ব মনে করে, দীনেশ ত্রিবেদী একজন ভাল পার্লামেন্টারিয়ান হতে পারেন, কিন্তু গত ১০ বছরে বারাকপুরের উন্নতিকল্পে তাঁর কোনও অবদান নেই। তিনি দু’দুবার জিতে আর কেন্দ্রমুখী হননি।