• facebook
  • twitter
Saturday, 23 November, 2024

ইতিহাস নিয়ে কুৎসা

সামরিক বাহিনীকে নির্বাচনী রাজনীতিতে টেনে না আনার জন্য সেনাবাহিনীর সর্বাধিনায়ক রাষ্ট্রপতির কাছে দেড়শজনের মতাে প্রাক্তন সামরিক অফিসারের আবেদনে কোনও ইতিবাচক ফল মেলেনি।

আইএনএস বিরাট-এ প্রক্তন প্রধানমন্ত্রী রাজীব গান্ধি (File Photo IANS)

সামরিক বাহিনীকে নির্বাচনী রাজনীতিতে টেনে না আনার জন্য সেনাবাহিনীর সর্বাধিনায়ক রাষ্ট্রপতির কাছে দেড়শজনের মতাে প্রাক্তন সামরিক অফিসারের আবেদনে কোনও ইতিবাচক ফল মেলেনি। ব্যাপারটা এখন এত নীচে নেমে গেছে যে, প্রধানমন্ত্রীর দাবিকে খণ্ডন করার জন্য চারজন প্রাক্তন অ্যাডমিরাল (তাদের মধ্যে দুজন পরে নৌবাহিনীর প্রধান হয়েছিলেন) নৈতিক সাহসের পরিচয় দেওয়ার দৃঢ়তা দেখিয়েছেন।

প্রধানমন্ত্রী দাবি করেছিলেন যে, ১৯৮৭ সালে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী রাজীব গান্ধি লাক্ষাদ্বীপ দ্বীপপুঞ্জে পারিবারিক ছুটি কাটানাের জন্য বিমানবাহী জাহাজ আইএনএস বিরাটকে ‘ব্যক্তিগত ট্যাক্সি’ হিসেবে ব্যবহার করেছিলেন। প্রধানমন্ত্রী এ ব্যাপারে প্রশ্রিক্ষামন্ত্রী ও অর্থমন্ত্রীর (যিনি এক সময় প্রতিরক্ষামন্ত্রী ছিলেন) সমর্থন পেয়েছেন। ওই সময়ে যিনি লাক্ষা দ্বীপপুঞ্জের কমিশনার ছিলেন তিনিও নরেন্দ্র মােদির দাবিকে খারিজ করে দিয়েছে।

আইএনএস বিরাট বাতিল হয়ে যাওয়ার সময় তার লগবুককে সংরক্ষণ করা হয়েছে কিনা জানা নেই। সেটা থাকলে পরিস্থিতিটা জানা যেত। পূর্বসূরী অ্যাডমিরাল রামদাস, অরুণ কুমার, মদনজিৎ সিং ও পাসরিচার মতাে সাহস যদি বর্তমান নৌসেনা বাহিনীর কেউ দেখাতে পারতেন তাহলে লগবুকের একটা সুরাহা হতে পারত। নৌসেনা বাহিনী যে পেশাদার ও অরাজনৈতিক সংস্থা ওই চার অ্যাডমিরাল তা প্রমাণ করে দিয়েছে। সেনাবাহিনী ও বিমানবাহিনীতে যা চলছে, তাতে যা বলা হবে, তাই বিশ্বাস করতে হবে এই অবস্থাটা চলে যাচ্ছে।

রাঞ্জীব গান্ধির বিতর্কিত ‘ছুটি কাটানাে’ নিয়ে শিশুদের মতাে হইচইয়ের প্রাসঙ্গিকতা কেবল রাজনীতিকদের কাছেই রয়েছে। বােস কেলেঙ্কারিকে জনসমক্ষে ফিরিয়ে আনাকে সমর্থন করেছেন প্রতিরামন্ত্রী নির্মলা সীতারামন। কিন্তু তিনি ভুলে গেছেন যে রাজীবকে ক্লিনচিট দিয়ে আদালত যে আদেশ দিয়েছিল তার বিরুদ্ধে আপিল করতে বাজপেয়ী সরকার অস্বীকার করেছিল। আসলে এরা ইতিহাসের পছন্দসই অংশগুলাে বেছে নেন।

বর্তমান বিজেপি সরকারের মন্ত্রীর কী করে এত তাড়াতাড়ি বাজপেয়ী-আদবানি যুগকে ভুলে গেলেন? ভাগ্য ভালাে ২০০২-এর গুজরাত গণহত্যা নির্বাচনী ইস্যু হিসাবে উঠে আসেনি। দেশে এখন নেতিবাচক রাজনীতিরই প্রবাহ চলছে। ব্রিটিশ নাগরিকত্ব নিয়ে রাহুল গান্ধিকে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের নােটিশকে সুপ্রিম কোর্ট পাত্তাই দেয়নি। বিচারপতিরা এ ব্যাপারে এক রাজনৈতিক সমাজকর্মীর এই সংক্রান্ত বক্তব্যের কড়া সমালােচনা করেছেন। নির্বাচনী বিতর্কের মানের অবনমনে জনগণ যে কতটা ক্ষুব্ধ সেটা এতে বােঝা যায়।

যা একটা ‘মৃত’ বিষয়, তা যদি সুব্রাহ্মণ্যম স্বামীর মতো লােকও আবার উত্থাপন করেন তাহলে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের উচিত তাকে পাত্তা না দেওয়া। কয়েক বছর আগে এক বায়ু আমলা একটা ঘরােয়া আসরে বলেছিলেন, কোনও প্রতিষ্ঠানই সুপ্রিম কোর্টের মতাে রাজনৈতিক হাওয়া ঘুরিয়ে দিতে সক্ষম নয়। রাহুলের নাগরিকত্ব নিয়ে সুপ্রিম কোর্টের রায় কি কিছুটা তারই প্রতীক? এথন পর্যন্ত যে কয়েক দফার নির্বাচন হয়েছে, তাতে খুব একটা সুবিধা করতে পারেনি বলেই কি বিজেপি এত অসংযমী হয়ে উঠেছে। তারা এখন এনডিএ’র সংখ্যাগরিষ্ঠতার কথা বলছে, এনডিএ বহির্ভূত ছােট দললির সঙ্গে যােগাযােগ স্থাপনের চেষ্টা করছে। কংগ্রেস ও তাদের মিত্র দলগুলি বিগত কয়েক মাসের জড়তা কাটিয়ে এখন অনেক উজ্জীবিত হয়ে উঠেছে। ফলে ফলাফল কী হবে, তা অনিশ্চিতই থেকে যাচ্ছে।