• facebook
  • twitter
Friday, 22 November, 2024

বিরোধী মুখ্যমন্ত্রীদের চিঠি মমতার বিজেপির হাতে আক্রান্ত গণতন্ত্র

সম্প্রতি বারবার অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়কে তলব করছে ইডি। সেই সঙ্গে রামপুরহাটের ঘটনার পরে অনুব্রত মণ্ডলকেও ডেকে পাঠিয়েছে সিবিআই।

সম্প্রতি বারবার অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়কে তলব করছে ইডি। সেই সঙ্গে রামপুরহাটের ঘটনার পরে অনুব্রত মণ্ডলকেও ডেকে পাঠিয়েছে সিবিআই।

মঙ্গলবারও অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় এমনকী তার স্ত্রী রুজিরাকে ইডির ডাক পাঠিয়েছে। বিজেপি সরকারের এই মনোভাবকে প্রতিহিংসার রাজনীতি হিসেবেই দেখছেন তৃণমূল সুপ্রিমো।

এহেন পরিস্থিতিতে বিরোধী মুখ্যমন্ত্রীদের চিঠি লিখে মমতা আবেদন করলেন, বিজেপির হাতে গণতন্ত্র আক্রান্ত।

ইডি, সিবিতাই, আয়কর, ভিজিলেন্স কমিশনকে ব্যবহার করা হচ্ছে বিরোধীদের হেনস্তা করার জন্য। যা ঠেকাতে বিজেপি বিরোধী রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী ও নেতাদের একজোট হওয়ার বার্তা দিলেন, মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।

এভাবেই ফের পদ্ম বিরোধিতায় শান দিলেন তিনি। সম্প্রতি সংসদের শীতকালীন অধিবেশনে দিল্লি স্পেশাল পুলিস ও সিভিসি সংশোধনীর জন্য দু’টি বিল পাশ করিয়েছে কেন্দ্র।

মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (Photo:SNS)

যার বলে ইডি, সিবিতাই ডিরেক্টরদের কার্যকালের মেয়াদ পাঁচ বছর করা হয়েছে। যা সুপ্রিম কোর্টের রায়ের বিরোধী।

মঙ্গলবারের চিঠিতে মমতা লিখেলন, বিজেপি যেভাবে কেন্দ্রীয় সংস্থাগুলিকে ব্যবহার করছে, তা আমাদের ঠেকাতেই হবে।

মমতার কথায়, ভোট এলেই কেন্দ্রীয় এজেন্সিগুলি সক্রিয় হয়ে ওঠে বিজেপি শাসিত রাজাগুলিকে কেন্দ্রীয় এজেন্সির নাগালের বাইরে রাখা হয়।

মতার বক্তব্য সরকার চালানোর ক্ষেত্রে স্বচ্ছতায় বিশ্বাস করি আমরা কিন্তু বিজেপির এই প্রতিহিংসার রাজনীতিকে সমর্থন করা যায় না বিচারব্যবস্থার ওপরে শ্রদ্ধা রেখেই বলছি রাজনীতির ঘোরপাকে মানুষ ন্যায় বিচার পাচ্ছে না গণতন্ত্র, বিচারব্যবস্থা, জনগণ, মিডিয়া গণতন্ত্রের স্তম্ভ। এর একচি বিপর্যস্ত হলে গণতন্ত্র ভেঙে পড়বে।

কেন্দ্রের বিজেপি সরকারের এই অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করাকে গণতান্ত্রিক দায়িত্ব বলে মনে করেন মমতা।

এই ইস্যুতে বিজেপি বিরোধী সব শীর্ষনেতাদের একসঙ্গে বৈঠকে বসার জন্য চিঠিতে আহ্বান জানিয়েছেন মমতা।

তবে মুখ্যমন্ত্রীর এই চিঠিকে রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত হিসেবে না দেখে ব্যক্তিগত উদ্বেগের বহিঃপ্রকাশ হিসেবেই দেখছেন রাজনৈতিক মহল।

বিজেপি নেতা শমীক ভট্টাচার্য বলেন, সারদা, নারদা নিয়ে তদন্ত হচ্ছে আদালতের নির্দেশে।

সেই নির্দেশ ঠেকানোর জন্যই আদালতে ঘুরছে তৃণমূল। কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থাকে আক্রমণ করে মুখ্যমন্ত্রী বিচারব্যবস্থাকেই আক্রমণ করছেন।

সোমবারই পাহাড়ের চার রাজনৈতিক দলের সঙ্গে বৈঠক করে পাহাড়বাসীর তাঁর ওপর আস্থা সম্পর্কে নিশ্চিত হয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।

মঙ্গলবার পাহাড়ে সরকারি প্রকল্পের পরিষেবা প্রদানের অনুষ্ঠানে এসে পাহাড়বাসীর প্রতি কেন্দ্রীয় সরকারের অবহেলা নিয়ে সরব হলেন তিনি।

স্পষ্ট জানিয়ে দিলেন, পাহাড়বাসীর ‘দিল্লির লাড্ডুর দরকার নেই। কারণ তাদের দাজিলিং, কার্শিয়াং কালিম্পং-এর লাড্ডু আছে।

রাজা সরকার পাহাড়ের এই সমস্ত জেলায় কীভাবে নানান উন্নয়নমুখী প্রকল্প নিয়েছেন সেসবের খতিয়ান তুলে ধরেন মমতা।

এদিন নিজেকে পাহাড়ের ঘরের মেয়ে বলেও দাবি করলেন মুখ্যমন্ত্রী এমনকী পাহাড়ের প্রতি ভালোবাসার জন্যই যে এক পাহাড়ি মেয়েকে তাঁর পরিবারে সাতপাকের বাঁধনে বেঁধে ফেলা হচ্ছে, সেকথাও আগাম জানিয়ে দিলেন মমতা।

মঙ্গলবার মুখ্যমন্ত্রী দার্জিলিং-এর ম্যালে দাঁড়িয়ে প্রথমেই পাহাড়বাসীর প্রতি কেন্দ্রীয় বঞ্চনার প্রসঙ্গ তোলেন বন্ধ চা বাগান না খোলা, পঞ্চায়েত ব্যবস্থাকে ত্রিস্তরীয় করার জন্য রাজ্যের আবেদনে কর্ণপাত না করা এসবের প্রসঙ্গ তোলেন।

প্রশ্ন করেন, সেভেন সিস্টারর্স স্টেচের জন্য কেন্দ্রীয় সরকার যদি নব্বই শতাংশ ভর্তুকি দিতে পারে, তাহলে পাহাড়ের জন্য কেন দিতে পারে না।

মুখ্যমন্ত্রী বিজেপির নাম না করে বলেন, কোনও কোনও রাজনৈতিক দল রয়েছে, যারা নির্বাচন এলে উল্টোপাল্টা বুঝিয়ে ভোট নিয়ে চলে যায় তারপর দশ-পনেরো বছরে তাদের টিকিটাও দেখা যায় না।

আসলে বিজেপি সরকার যে পাহাড়ের ভালো চায় না, সেকথাও তাঁর বক্তব্যে স্পষ্ট করে দেন মমতা।

বিজেপির ভোটের রাজনীতির সূত্র ধরে মমতা এদিন বলেন, উত্তরপ্রদেশে ভোটে জেতার পরেই পাঁচ দিনে পাঁচবার পেট্রোল, ডিজেলের দাম বাড়িয়েছে।

গ্যাসের দাম এক ধাক্কায় পঞ্চাশ টাকা বাড়িয়েছে। লোকে খাবে কী? বিজেপি খাবে?

এমনকী ইউক্রেন ফেরত পড়ুয়াদের পড়াশুনো এদেশে শেষ করার অনুমতি দেওয়ার ক্ষেত্রেও যে কেন্দ্রীয় সরকার উদাসীন সেই প্রসঙ্গও তোলো এদিন মুখ্যমন্ত্রী পাহাড়বাসীকে তাদের ভাষাতেই কুশল জিজ্ঞেস করেন।

সোমবারের মতো মঙ্গলবারও মুখ্যমন্ত্রী পাহাড়ে প্রাতঃভ্রমণে বেরিয়ে স্কুলপড়ুয়াদের সঙ্গে ছবি তোলেন মমতা, স্থানীয় বাসিন্দাদের কুশল জিজ্ঞেস করেন।

বিধবা ভাতা, বার্ধক্যভাতা, স্টুডেন্টস ক্রেডিট কার্ড, কিষাণ পেনশন, লক্ষ্মীর ভাণ্ডার, স্বাস্থ্যসাথী রূপশ্রী, সমবার্থী ইত্যাদি সরকারি প্রকল্পের অগ্রগতির কথা পরিসংখ্যান দিয়ে শোনান পাহাড়বাসীকে।

পাহাড়ের চা সুন্দরী প্রকল্পে ২৫০ টি চা বাগানের শ্রমিকদের বাড়ি বানিয়ে দেওয়ার কথা বলেন।

তৃণমূল সরকারের আমলে চা শ্রমিকদের দৈনিক ভাতা ৬৭ টাকা থেকে বাড়িয়ে ২০২ টাকা করা হয়েছে বলে জানিয়ে দেন।

চা বাগান বন্ধ বলে এখন দু-মাসের মধ্যে চা শ্রমিকদের মাসিক দেড় হাজার টাকা করে সাহায্য করা হয়। যা আগে মাসে মাত্র ৫০০ টাকা ছিল।

পাহাড়ের প্রান্তিক্রবাসীদের আগে জমির পাট্টা দেওয়ার বন্দোবক্ত ছিল না কিন্তু বর্তমান সরকার রিফিউজি কলোনীর উদ্বাস্তুদের জমির পাট্টা বিতরণের বন্দোবস্ত করেছে।

এছাড়া কালিম্পং-এ যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের এবং কার্শিয়াং-এ প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়ের হিল ক্যাম্পাস তৈরি করা হচ্ছে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, আমি চাই পাহাড়ের সব ছেলেমেয়েদের কাঞ্চনজঙ্ঘা’র মতো উজ্জ্বল হাসিমুখ।

মুখ্যমন্ত্রীর কথায় বিজেপির কাজই হল দাঙ্গা লাগিয়ে দেওয়া। ওরা নিজেরাই খুন করে আবার নিজেরাই ঘর জ্বালিয়ে দেয়। এইভাবে বগটুই কাণ্ডে চক্রান্তের জন্য নাম না করে বিজেপিকে দায়ী করেন মমতা।

স্পষ্ট করে জানিয়ে দেন, পাহাড়ে আর কোনও অশান্তি চাই না। পাহাড়বাসীর জন্য মুখ্যমন্ত্রীর নিদান, দশ বছর কেই কোনও ঝগড়া না করে মন দিয়ে কাজ করে যান। দেখবেন, উন্নয়নের জেরে পাহাড় কোথায় পৌঁছয়।