• facebook
  • twitter
Saturday, 23 November, 2024

তৃণমূল কংগ্রেসের জাতীয় কর্মসমিতির বৈঠক মমতা-অভিষেক একান্ত আলোচনা

কেউ কেউ এও দাবি করতে শুরু করেছিলেন যে অভিষেককে চাপে রাখতে দলে একাধিক সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক নিয়োগ করতে পারেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।

শুক্রবার বিকেল পাঁচটা থেকে তৃণমূলের জাতীয় কর্মসমিতির বৈঠকের আগে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় ও মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের এক প্রস্থ একান্ত কথাবার্তা হয়ে যায়।

বর্তমানে তৃণমূলের অন্দরে যে শক্তি-সংঘাতের বাতাবরণ তৈরি হয়েছে, সেই পরিস্থিতিতে নবনির্মিত কর্মসমিতির প্রথম বৈঠকের ঠিক আগে মমতা-অভিষেক এই একান্ত আলোচনা স্বাভাবিকভাবেই যথেষ্ট তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।

এর পাশাপাশি কর্মসমিতির অন্যান্য সদস্যদের সঙ্গেও আলাদা করে কথা বলেন তৃণমূল সুপ্রিমো।

তৃণমূল সূত্রের দাবি, কালীঘাটে একের পর এক যে নেতারা ঢুকেছেন, তাঁদের অনেকের সঙ্গেও আলাদা করে কথা বলেছেন দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ।

অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ও শুক্রবার বিকেলে কালীঘাটে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বাসভবনে ঢোকার পর তাঁর সঙ্গে একান্তে কথা বার্তা বলেন মমতা।

দলীয় সূত্রে খবর, বেশ কিছুক্ষণ ধরে অভিষেকের সঙ্গে কথা বলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।

দলের যে দুইজনকে কেন্দ্র করে নীচুতলায় এক আড়াআড়ি বিভাজনের পরিস্থিতি তৈরি হয়েছিল সেই পরিস্থিতিতে মমতা অভিষেক এই একান্ত আলোচনা, তৃণমূলের সাংগঠনিক দিক থেকে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করা হচ্ছে।

বিশেষ করে শুক্রবার যখন দলের বিভিন্ন সাংগঠনিক পদের বণ্টন হতে পারে বলে জল্পনা ছড়িয়েছে, সেই পরিস্থিতিতে এই দুই মূল শক্তিস্তম্ভের মধ্যে একান্ত আলোচনায় রাজনৈতিক মহলে যথেষ্ট গুঞ্জন ছড়িয়েছে এবং একইসঙ্গে বাড়ছে কৌতূহলও।

উল্লেখ্য, তৃণমূলের জাতীয় কর্মসমিতির যাঁরা সদস্য রয়েছেন, তাঁরা প্রত্যেকেই একে একে কালীঘাটে মমতার বাসভবনে ঢুকেছেন।

এছাড়াও এমন অনেক নেতাকেও কালীঘাটের বাড়িতে ঢুকতে দেখা গিয়েছে, যাঁরা জাতীয় কর্মসমিতির সদস্য নন সেই তালিকায় রয়েছেন গোয়ার প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী লুইজিনহো ফেলেইরো এবং ত্রিপুরার সুবল ভৌমিকের মতো বেশ কিছু বড় মুখ। ওল্ড ইজ গোল্ড।

নতুনদের প্রয়োজন, কিন্তু এর পাশপাশি প্রবীণদেরকেও গুরুত্ব দিতে হবে।

জাতীয় কর্মসমিতির দ্বিতীয় বৈঠকে এমনই বার্তা দিলেন তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সেই সঙ্গে তিনি জানান, সাধারণ গরিব মানুষের দল তৃণমূল।

তৃণমূল কংগ্রেস জাতীয় কর্মসমিতি (Photo:SNS)

এখানে প্রাচুর্যের প্রদর্শন চলবে না অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়কেও তাঁর পুরনো পদ দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক ফিরিয়ে দেওয়া হল।

জাতীয় কর্মসমিতিতে অরূপ বিশ্বাস এবং চন্দ্রিমা ভট্টাচার্যের গুরুত্ব অনেক বাড়ল। সেই সঙ্গে জাতীয় কর্মসমিতির সঙ্গে তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যোগসূত্র রাখার ভার পড়ল ফিরহাদ হাকিমের উপর।

এদিন এক ঘণ্টা পঁচিশ মিনিট বৈঠক হয়েছে কালীঘাটে দলীয় কার্যালয়ে। নেট মাধ্যমে আত্মপ্রচার নয়, দলের প্রচার করতে হবে বলে সাফ জানান তৃণমূল সুপ্রিমো।

দলকে বাংলায় সুসংহত রেখে জাতীয় স্তরে তৃণমূলের বিস্তারের উপর গুরুত্ব আরোপ করেন মমতা দিল্লিতে দলের কার্যালয় নিয়মিত খুলে রাখারও নির্দেশ দিয়েছেন তিনি।

সেখানে নিয়মিত সাংবাদিক বৈঠক করবেন সুখেন্দুশেখর রায় মহুয়া মৈত্র, কাকলি ঘোষদস্তিদার।

অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে জাতীয় স্তরে তৃণমূলের একাধিক কমিটি করা হবে। তৃণমূলের জাতীয় কর্মসমিতির বৈঠকের পর এমনই ঘোষণা করেন পার্থ চট্টোপাধ্যায়।

গত শনিবার কালীঘাটের বাড়িতে কোর গ্রুপের বৈঠক ডেকেছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তার পর সাংগঠনিক নির্বাচনের রীতি মেনে নতুন ওয়ার্কিং কমিটি তৈরি হয় ও পুরনো সমস্ত পদের বিলোপ ঘটানো হয়।

তাতে স্বাভাবিক নিয়মেই অবলুপ্ত হয়েছিল অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের পদও। দিনের ব্যবধানে তাঁর পুরনো পদেই ফিরলেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়।

দলের নতুন ওয়ার্কিং কমিটিতেও সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক পদের দায়িত্ব তাকেই দিলেন সভানেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।

তাৎপর্যপূর্ণ হল, খুব স্বাভাবিক নিয়মে। আর পাঁচ জনের মতো যখন অভিষেকের পদ চলে যায়, তখন দলের মধ্যে ও রাজনৈতিক মহলে এক শ্রেণির মধ্যে যুদ্ধ জয়ের আনন্দ ছিল।

কেউ কেউ এও দাবি করতে শুরু করেছিলেন যে অভিষেককে চাপে রাখতে দলে একাধিক সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক নিয়োগ করতে পারেন দিদি।

অভিষেকের আলাদা করে বিশেষ মর্যাদা যাতে না থাকে, তা নিশ্চিত করতেই সেই ব্যবস্থার কথা ভাবা হচ্ছে।

যদিও তা ভুল প্রমাণিত হল, অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়কে শুধু সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক পদের দায়িত্ব দেওয়া হল তাই নয়, জাতীয় স্তরে সাধারণ সম্পাদকের পদ আর কাউকে দেওয়া হল না।

জানিয়ে রাখা ভাল যে, কংগ্রেস বা বিজেপির মতো জাতীয় দলের সভাপতির পর একাধিক সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক থাকেন।

তাঁদের মধ্যে অলিখিত ভাবে সংগঠনের দায়িত্বপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদকের গুরুত্ব থাকে সবথেকে বেশি অর্থাৎ দলীয় সভাপতির পর সাংগঠনিক ভাবে সব থেকে বেশি মর্যাদা ও ক্ষমতা থাকে সংগঠনের দায়িত্বপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদকের।

তৃণমূল জাতীয় দল হলেও সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক পদে বরাবরই এক জন ছিলেন।

দীর্ঘ সময় ধরে সেই পদের দায়িত্ব সামলেছেন মুকুল রায়। মুকুল রায় তৃণমূল ছাড়ার পর সেই পদের সাময়িক দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল সুব্রত বক্সীকে।

তার পর অভিষেক বন্দ্যোপাধায়কে সাধারণ সম্পাদক পদের দায়িত্ব দেন মমতা। এবং এটাও ফের প্রমাণিত হল, সাংগঠনিক ভাবে দিদির পরই দ্বিতীয় ক্ষমতাশালী নেতা হলেন অভিষেকই।