আবার ডার্বি ম্যাচের উত্তাপে সবই কি মেতে উঠবেন। বাংলার ফুটবলের মহাযুদ্ধ বলতেই সবুজ-মেরুন ও লাল-হলুদের চ্যালেঞ্জ। তাই আইএসএল ফুটবলের চেহারা বদলে গেছে এটিকে মোহনবাগান ও এসসি ইস্টবেঙ্গলের আবির্ভাবে।
যে কোনও সময়ে দুই প্রধানের লড়াই বলতে উত্তেজনা আর উত্তেজনা। সেই উদ্দীপনার পারদ কোথায় গিয়ে থমকে দাঁড়াবে তা নিয়ে কেউই আগাম ধারণা প্রকাশ করতে পারবেন না ফুটবলের ইতিহাসে ডার্বি
ম্যাচের আবেগ সবসময় অন্য কথা বলে যায়। এবারের আইএসএল ফুটবলের ফিরতি ম্যাচের উৎসাহে কোনও ছেল পড়েনি শনিবারের মহারণে বজিমাত করার জন্য দুই প্রধানের কোচের মগজাস্ত্র যেমন কথা বলবে তেমনই ফুটবলাররা বাজিমাত করার জন্য টগবগ করে ফুটবেন।
ডার্বি ম্যাচের স্বপ্নকে সার্থক করে তোলার জন্য আলাদা ভাবনা কথা বলবে। তবে প্রথম লেগে এটিকে মোহনবাগানের দাপটের কাছে বিধ্বস্ত এসসি ইস্টবেঙ্গল চাইবে ঘুরে দাঁড়াতে। দুই প্রধানের কোচ-বদলের খেলায় নতুন কোচদের গোপন কৌশল নিয়ে হয়তো নানা ব্যাখ্যা হতে পারে।
সবুজ মেরুন শিবিরের কোচ জুয়ান ফেরান্সের পরিকল্পনাকে কীভাবে নস্যাৎ করতে চাইকো লাল-হলুদের কোচ মারিও রিভেরা তা প্রমাণ পাওয়া যাবে মাঠে। দুই কোচের কাছে এই ডার্বির ম্যাচ অত্যন্ত মর্যাদার তা নিয়ে কোনও সন্দেহ নেই। কোচ ফেরাডো আত্মবিশ্বাসে ভরপুর হয়ে সবুজ মেরুন ব্রিগেড সাজাবেন।
আবার ঘুরে দাঁড়ানোর শপথে উজ্জীবিত করে ফুটবলারদের সেরা খেলা উপহার দেওয়ার জন্যে তৈরি থাকবেন লাল-হলুদ কোচ রিভেরা। দুই শিবিরের চাপা একটা আগুনে বাকল খেলা করছে ফুটবলারদের মানসিকতায়। তার বিস্ফোরণ মাঠে কীভাবে দেখতে পাওয়া যাবে, সেটাই দেখার বিষয়।
কোচ মারিও বিভেরো ভালো করেই জানেন বিপক্ষ এটিকে মোহনবাগান হেভিওয়েট দল। কিন্তু ডার্বি ম্যাচের সময় তাঁদের বিরুদ্ধে ফুটবলাররা সবসময় পরিকল্পনামাফিক খেলা খেলে জব দিতে জানে লাল-হলুদ শিবির। সেই কারণেই অতীতের ডার্বি ম্যাচের ছবিগুলি একের পর এক দেখিয়ে খেলোয়াড়দের অনুপ্রাণিত করার একটা কৌশল তৈরি করেছেন।
টেকনিক্যালি ও ট্যাকটিকালি কীভাবে ম্যাচ ছিনিয়ে নিতে হয়, তারও একটা পাঠ খেলোয়াড়দের কাছে তুলে ধরেছেন কোচ। ইতিমধ্যেই ব্রাজিলের ফুটবলার ফ্রান সাতো দলের সঙ্গে অনুশীলনে যোগ দিয়েছেন। স্বাভাবিকভাবে মাতো ও পেরোসেভিচ জুটি খেলার রং বদলে দিতে পারেন বলে আশা করা যাচ্ছে।
এমনকি গত ম্যাচে হায়দরাবাদের বিরুদ্ধে মার্সেলো রিবেইরে খেলেছেন। স্বাভাবিকভাবেই দলের বর্তমান চেহারা দেখে কীভাবে ঘুরে দাঁড়ানো যায়, তার জন্য কৌশলগত পরিকল্পনাগুলি তাঁরা বাস্তবে রূপ দিতে চান। ফুটবলের দর্শনে কখনওই কে বড় খেলোয়াড় তা নিয়ে আলোচনা হয় না। দলগত প্রয়াসই সাফলোর ভিত রচনা করে।
যদি কোচ চার-দুই-তিন এক প্রথায় খেলা শুরু করেন সেক্ষেত্রে লাল-হলুদ শিবিরের গোলরক্ষা করবেন অবশ্যই অরিন্দম ভট্টাচার্য। ব্রক্ষণভাগ সামলাবেন অঙ্কিত মুখার্জি, আদিল খান ফ্রাঙ্কো ও হীরা মণ্ডল। হীরা আগের থেকে অনেকটাই সুস্থ বলে ভাবি ম্যাচে প্রধান ভূমিকা পালন করার জন্য কোচ অবশ্যই ফুটবলারদের আক্রমণ ভেঙে চুরমার করে দিতে। মাঝমাঠের দায়িত্বে থাকবেন মহম্মদ রফিক ও মহেশের সঙ্গে পেরোসেভিচ।
পেরোসেভিচ আটাকিং মিডফিল্ডার হিসেবে আক্রমণে সহযোগিতা করবেন সারা মাঠে। আসল লক্ষ্য, গোল করতে গেলে পুরো দলটাকেই উজ্জীবিত করতে হবে। এই ভাবনাটাকে বাস্তব রূপ দেওয়ার জন্য অবশ্যই কোচ রিভেরে গোপন ছক তৈরি করে ফেলেছেন।
নির্দেশ দেবেন, যাতে বিপক্ষ দলের এটিকে মোহনবাগানের কিং প্লেয়ার বয় কৃষ্ণকে নিয়ে সংশয় দেখা দিয়েছে তিনি পুরোপুরি ফিট না হওয়ায় দলের কোচ কেরেডো অন্যভাবে রূপরেখাটা রচনা করছেন।
অনেকের তুলনায় প্রথম একাদশে রয়কৃষ্ণকে খেলিয়ে চমক দিতে চাইছেন কোচ। তিনি যতক্ষণ মাঠে থাকবেন, বিপক্ষ দল অনেকটা আতঙ্কে থাকবে এবং তাদের নিজস্বতা হারিয়ে যেতে পারে সেই সুযোগে গোল করে জয়ে ফিরতে চান সবুজ-মেরুন কোচ।
ডার্বি ম্যাচের গুরুত্বটাই আলাদা রাকৃষ্ণকে নিয়ে চিন্তায় থাকলেও কার্ডের সমস্যা মিটিয়ে দলে ফিরছেন হুগো বোমাস। প্রথম লেগে যেভাবে দাপটের সঙ্গে এসসি ইস্টবেঙ্গলকে হারিয়ে দিয়েছে।
এটিকে মোহনবাগান সেই ধারাতেই আবার জেতার জন্য মুখিয়ে রয়েছেন সব ফুটবলার। স্প্যানিশ কোচ ফেরেল্ডোর কাছে প্রথম ডাবি ম্যাচ। আর এই ম্যাচে জেতার স্বপ্ন নিয়ে মাঠে নামাতে চান পুরো দলটাকে। রয়কৃষ্ণ যদি প্রথম একাদশে না থাকেন, সেই জায়গায় মনবীর সিংকে নামিয়ে জয়ের হাসি দেখতে চাইছো কোচ।
আক্রমণ শানাতে লিস্টন, ডেভিড উইলিয়ামের মতো ফুটবলাররা সজাগ রয়েছেন। মন্ত্রীরের বড়। ম্যাচে গোল করার অভিজ্ঞতা ডার্বি ম্যাচে অবশ্যই কাজে দেবে। সবুজ-মেরুন শিবিরের সবচেয়ে বড় প্লাস পয়েন্ট রক্ষণভাগে সন্দেশ জিঙ্গাল ফিরছেন। সন্দেশের সঙ্গে জুটি বাঁধবেন তিনি। কার হিসেবে মাঝমাঠ থেকে বড় ভূমিকা নেবেন কার্ল ম্যাকহিউম।
এ বাদে রয়েছেন প্রীতম কোটালের মতো অভিজ্ঞ ফুটবলার আর শুভাশিস বসু। তাই দুই প্রধানের দুই কোচের অভিষেক ডার্বি ম্যাচে জেতার জন্য গোপন ছক কী কথা বলবে, তার জন্য অপেক্ষায় সমর্থকরা।