ক্রিসমাস উৎসবের উদ্বোধনে এসে গোটা দেশকে রাজনৈতিক বার্তা দিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সোমবার অ্যালেন পার্কে ক্রিসমাস উৎসবের উদ্বোধনে এসে শুধু রাজ্যবাসীই নয়, গোটা দেশবাসীকে বড়দিনের শুভেচ্ছা জানান মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
এরপরই কেন্দ্রকে নিশানা করে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, দিন দিন দেশজুড়ে রাজনৈতিক উত্তেজনার পারদ চড়ছে। রাজনৈতিক দূষণ চলছে।
একই মঞ্চ থেকে নগরপাল সৌমেন মিত্রের ‘ভালো কাজের’ প্রশংসা করেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বলেন, খুব ভালো কাজ করেছে। প্রকাশ্যে না বললেও পুরভোেট নির্বিঘ্নে উত্তরে দেওয়ার জন্যই এই সাধুবাদ, তা বলার অপেক্ষা রাখেনা।
ক্রিসমাস উৎসবের সূচনা করে মুখ্যমন্ত্রী বলেন আরও বড় করে উৎসব পালন করার চেষ্টা করুন কৃষ্ণনগর, ব্যান্ডেল, ঝাড়গ্রাম এমন অনেক চার্চ রয়েছে।
এবছরও রাজ্যের বিভিন্ন কমিশনারেট সাজানোর জন্য নির্দেশ দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। বাংলা থেকেই ক্রিসমাস উৎসবকে জাতীয় ফ্লেভার দেওয়ার কথা বলেন। শুভেচ্ছা জানিয়ে বলেন ভাটিকান থেকে গোয়া, গোয়া থেকে কলকাতা সবাইকে শুভেচ্ছা।
মুখ্যমন্ত্রীর বার্তা গোটা দেশে সম্প্রীতি একতা বজায় রাখতে হবে। যে যার ধর্ম পালন করুন। দেশ মজবুত রাখতে গেলে ঐক্য বজায় রাখতে হবে।
বেদেই রয়েছে একতার কথা। সেই সঙ্গে এদিন মুখ্যমন্ত্রী রাজ্যবাসীর মনোবল বাড়াতে বলেন, আমাদের লড়াই করতে হবে। লড়াই আমরা করে নেব। রবিবারই রাজ্যে একটা পুরভোেট জুড়ে লড়াইয়ের আবহ ছিল।
পুরভোটে ব্যাপক রিগিং, ছাপ্পা ভোট, সিসিটিভি অকেজো করার দাবি তুলে পুরভোট বাতিলের দাবি তোলে গেরুয়া শিবির। পুরভোটের দিন রাজ্যে বিক্ষিপ্তভাবে বোমাবাজি চলেছে, রক্তারক্তিও হয়েছে। কিন্তু তারপরেও পুরভোেট শান্তিপূর্ণই হয়েছে বলে দাবি করেন মুখ্যমন্ত্রী।
পুরভোটের পরের দিনই নগরপাল সৌমেন মিত্রের প্রশংসা করে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ওঁরা ভালো কাজ করছে বলেই আমরা শান্তিতে থাকছি।
যদিও বিরোধীদের অভিযোগ, রবিবারের ভোটে পুলিশ শাসক দলের হয়েই কাজ করছে। পুলিশের সামনেই তৃণমূল অবাধে ভোট লুঠ করেছে।
মুখ্যমন্ত্রীর এদিনের মন্তব্যে বিরোধীদের সব অভিযোগই নস্যাৎ হয়ে গিয়েছে বলে মনে করছে। ওয়াকিবহাল মহল। যদিও বর্তমান নগরপাল সৌমনে মিত্রের প্রতি বরাবরই মুখ্যমন্ত্রী সদয় ছিলেন এমনটা বলা যাবে না।
২০১৬ সালের বিধানসভা নির্বাচনের আগেও কলকাতার তৎকালীন পুলিশ কমিশনার রাজীব কুমারের জায়গায় নগরপালের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল সৌমেন মিত্রকে। তখনও ভোটের দায়িত্ব পালন করে কলকাতা পুলিশ সকলের প্রশংসা কুড়িয়েছিল। যদিও তখন সৌমেন মিত্রের কাজে খুশি ছিলেন না মমতা।
নির্বাচনের মুখে বিজেপির লাগাতার অভিযোগের জন্য রাজীব কুমারকে সরিয়ে সৌমের মিত্রকে কলকাতা পুলিশের কমিশনার পদে বসায় নির্বাচন কমিশন। সেই বছরই নগরপালের দায়িত্ব নেন তিনি।
সেই সময় নির্বাচন কমিশনকে প্রকাশ্যে কটাক্ষ করতেও ছাড়েননি মমতা। কিন্তু সেবার দক্ষতার সঙ্গে কলকাতার ভোটে নিরাপত্তা ব্যবস্থা সামাল দিয়ে নাগরিক সমাজের প্রশংসা কুড়িয়েছিলেন সৌমেন মিত্র।
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে দ্বিতীয়বার শপথ নেওয়ার পরে রাজীব কুমারকে ফের নগরপালের পদে ফিরিয়ে আনেন। সৌমেন মিত্রকে পাঠানো হয় এডিজি প্রশিক্ষণে। সেই সৌমেন মিত্রকেই একুশের বিধানসভা ভোটের আগে ফের নগরপালের দায়িত্ব দেওয়া হয়।
এরপর কর্মক্ষেত্রে অসাধারণ কৃতিত্বের জন্য চলতি বছর ‘স্বাধীনতা দিবসে‘ মুখ্যমন্ত্রী পুরস্কার পান সৌমেন মিত্র। দু-দু’টো ভোট নির্বিঘ্নে সামলানোর জন্যই সৌমেন মিত্র পৌঁছে গিয়েছেন অন্য উচ্চতায় মুখ্যমন্ত্রীর প্রশংসাও পেয়েছেন প্রকাশ্যে।