• facebook
  • twitter
Saturday, 23 November, 2024

হোক হিংসামুক্ত ভোট

পুরভোটের জন্য তৈরি কলকাতা।প্রস্তুত রাজ্য নির্বাচন কমিশন।রাজ্য প্রশাসনের সাহায্যও রয়েছে।বিষয়টি নিয়ে ভোটারদের চিন্তা—ভোট পরিপূর্ণ হবে তো? হবে তো অবধি?

প্রতীকী ছবি (File Photo: iStock)

পুরভোটের জন্য তৈরি কলকাতা। প্রস্তুত রাজ্য নির্বাচন কমিশন। রাজ্য প্রশাসনের সাহায্যও রয়েছে। কিন্তু যে বিষয়টি নিয়ে ভোটারদের চিন্তা—ভোট পরিপূর্ণ হবে তো? হবে তো অবধি? বাংলায় যে ভোটই হোক না কেন, তা হিংসামুক্তি হয় না। কিছু বুদ্ধি লোপ পাওয়া মানুষের দাপাদাপি—–ছোট নির্বিঘ্নে হতে বাধা।

এই দুর্নাম কবে ঘুচবে আমরা জানি না। তাই এবারের পুর ভোট নিয়েও ৪০ লক্ষ ভোটদাতারা মুক্ত মনে, নিরাপদে বাধাহীন ভাবে পছন্দের প্রতীকে আঙুল ছোঁয়াতে পারবেন কিনা, তা নিয়ে চিন্তামুক্ত থাকা যায় না। আমরা তবুও আশায় আশায় থাকব, এই পুরভোট শান্তিতেই সম্পন্ন হবে——কোনও হিংসার ঘটনা ঘটবে না।

যদি তা হয়, তাহলে তো বলা যাবে বুক ফুলিয়ে। কে বলে, এই বাংলায় শান্তিপূর্ণ ভোট হয় না? এখন পর্যন্ত যা নির্ধারিত হয়ে আছে, এই ভোটে শাস্তিশৃঙ্খলা রক্ষা করবে কলকাতা পুলিশ। যদিও বিজেপি সহ আরও দু-একটি বিরোধী দল অবাধ ভোটের জন্য কেন্দ্রীয় ফোর্স মোতায়েনের দাবি জানিয়েছে।

কলকাতা পুলিশ কমিশনার জানিয়েছেন, ভোট অবাধ ও শান্তিপূর্ণ করতে সবরকম ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। সুতরাং নিরপেক্ষ ও শান্তিপূর্ণ ভোট নিয়ে কলকাতা পুলিশের এবার একটা বড় পরীক্ষা। যদি পুলিশ কোনও দিকে না হেলে, শান্তিপূর্ণ ভোট হওয়ার জন্য চেষ্টা করে, তাহলে ভোটাররা শান্ত মনে তাদের পছন্দের প্রার্থীদের ভোট দিতে পারবেন।

মহামান্য কলকাতা হাইকোর্ট ইতিমধ্যেই একটি রায়ে বলেছে, পুরভোেট শান্তিপূর্ণ করার স্বার্থে প্রত্যেকটি বুথে সিসি ক্যামেরা লাগাতে হবে। তা ছঁড়া যেখানে মানে স্ট্রং রুমে। ইভিএম বাক্সগুলি ভোট শেষে জমা থাকবে। সেখানেও এই ক্যামরার সাহায্য নিতে হবে।

এতে ভোট প্রক্রিয়া কীভাবে হচ্ছে, কোনও নীতিবিরুদ্ধ কাজ হচ্ছে কিনা, তা ধরা থাকবে। সব রাজনৈতিক দল আদালতের এই নির্দেশকে সাধুবাদ জানিয়েছে। কলকাতা পুলিশ স্পর্শকাতর এলাকাগুলি চিহ্নিত করেছে এবং সেখানে ভোটাররা এসে যাতে কোনও বাধার সম্মুখীন না হন, তার জন্য বেশি সংখ্যায় নিরাপত্তরক্ষী মোতায়েন থাকবে।

কলকাতা পুলিশের একটি সুনাম আছে–যদি পুলিশ শান্তিশৃঙ্খলা রক্ষা করে ভোট অবাধ হওয়ার জন্য চেষ্টা করে, তাহলে তারা প্রশংসিত হবে। পুলিশ শাসক দলের সুবিধা করে দেয়, এই অপবাদ ঘুচে যাবে।

পুরভোটে বিজেপি সহ অন্যান্য বিরোধী দল, কংগ্রেস, সিপিএম, তার সহযোগী বাম দলগুলি প্রায় সব ওয়ার্ডেই প্রার্থী দিয়েছে। শাসক দল তৃণমূল কংগ্রেস ইতিমধ্যেই সর্বস্তরে জানিয়ে দিয়েছে, তারাই বোর্ড গঠন করবে।

সিংহভাগ ওয়ার্ডে তাদের দলের প্রার্থীরাই জয়ী হবেন। বিজেপি গত বিধানসভার নির্বাচনে পর্যদুক্ত হয়ে তৃণমূলকে হঠিয়ে সরকার গড়ার যে স্বপ্ন দেখেছিল, তা পূরণ না হওয়ায়, এবার আশা করা গিয়েলি পুরভোটে এই দল কোমর বেঁধে লড়াইয়ে নামবে।

কিন্তু সব ওয়ার্ডে প্রার্থী দাঁড় করালেও, তাদের সমর্থনে জোরদার প্রচার চালাচ্ছেন দলের নেতারা। কেমন যেন একটা নিরাসক্ত ভাব। দেখে মনে হয় পরাজয় অবশ্যম্ভাবী মেনে যেন গা ঝাড়া দিয়ে উঠছে না দল। বরং রাজনৈতিক মহলে বিস্ময় সৃষ্টি করে বিজেপি ভোটের মুখে সিঙ্গুরে তিন দিনের কৃষক সমাবেশের আয়োজন করেছে।

সেখানে রাজ্যের নেতারা কৃষকদের প্রতি সরকার উদাসীন, এই অভিযোগ এনে সমালোচনার ঝড় তুলেছেন। কোথায় পুরভোটে তেড়েফুঁড়ে প্রচার চালাবেন, তা না করে ওই সময়টা বেছে নিলেন সিঙ্গুরে কৃষকদরদি হয়ে সমাবেশের আয়োজন করতে।

তৃণমূরে নেতারা বিজেপির এই ভাবসাব দেখে বলেছেন ওরা বুঝতে পেরেছেন একটি ওয়ার্ডেও দলের প্রার্থী জয়ের মুখ দেখবেন না। তাই সিঙ্গুরে গিয়ে কৃষকদের জন্য মায়াকান্না কাদছেন। সিপিএম, কংগ্রেস কী ফল করে তাই দেখার।

এই শহর পাহাড় সমান সমস্যা নিয়ে দু’জন মহানাগরিকের কাজ দেখেছে। তাঁদের মধ্যে একজন শোভন চট্টোপাধ্যায় (মুখ্যমন্ত্রীর দেওয়া নাম কানন, অপর নাম জল শোভন) অপরজন মুখ্যমন্ত্রীর আস্থাভাজন স্নেহাস্পদ ফিরহাদ হাকিম (ববি)।

শহরের প্রধান প্রধান সমস্যা সমাধানে তাঁদের ভূমিকা যে বলার মতো নয়, তা ভালো করেই উপলব্ধি করেন নগরবাসী। প্রথমজন এখন আর তৃণমূলী নন, তিনি রাজনৈতিক সন্ন্যাস নিয়েছেন।

অপরজন, হাকিম সাহেব শহরের সমস্যা নিরসনে কাজ যতটা করতে পেরেছেন, তার চাইতে বেশি দলনেত্রীর জয়গান গেয়েছেন আর বিরোধীদের মুণ্ডুপাত করেছেন।