নদীয়ার হাঁসখালিতে ভয়াবহ পথ দুর্ঘটনায় একই পরিবারের দশজন সহ মোট ১৮ জনের মৃত্যু হল। মৃতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে। পরিবারের মৃত বয়স্ক সদস্য শ্রীবানী মুহুরি (৮০) র শবযাত্রায় যেতে গিয়ে শেষ হয়ে গেল একটা গোটা পরিবার। মৃত ১৮ জনের মধ্যে সাতজন মহিলা ও এক শিশুও আছে এ গাড়িতে ছিলেন প্রায় ৩৫ জন আহতরা কৃষ্ণনগর ও কলকাতায় চিকিৎসাধীন।`
শনিবার মধ্যরাতে হাঁসখালির ফুলবাড়িতে এই মর্মান্তিক দুর্ঘটনায় শিউরে উঠছেন স্থানীয়রা। উত্তর চব্বিশ পরগনার বাগদা থানার পার মদনপুর এলাকার মৃত ব্যক্তিকে নিয়ে গভীর রাতে ৪০৭ গাড়িতে করে ওই পরিবারের দশজন সদস্যসহ এলাকার বেশ কয়েকজন নবদ্বীপ শ্মশানে শেষকৃত্যের উদ্দেশ্যে রওনা দেন হাঁসখালি থানার ফুলবাড়ি এলাকায় হাঁসখালি-কৃষ্ণনগর রাজ্যসড়কে উল্টোদিক থকে আসা একটি পাথর বোঝাই লরিতে সরাসরি ধাক্কা মাকে শ্মশানযাত্রীদের গাড়ি।
ঘটনাস্থলেই মৃত্যু হয় ১১ জনের। হাসপাতালে আরও ছয়জনকে মৃত ঘোষণা করেন চিকিৎসকরা। কয়েক ঘণ্টা পরে হাসপাতালে আরও একজন মারা যান। রবিবার সন্ধ্যেবেলায় এই রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত ১৮ জনের মৃত্যু হয়েছে, তাদের মধ্যে দশজন একই পরিবারের। মুহুরি পরিবারের যে দশজন সদস্য গাড়িতে করে শেষকৃত্যে যাচ্ছিলেন, প্রত্যেকেই মারা গিয়েছেন।
বাগদা থানার পারমদনপুর এলাকায় শোকের ছায়া। কৃষ্ণনগর শক্তিনগর হাসপাতালে আহতদের দেখতে আসেন মন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক। রাজ্য সরকারের তরফে মৃতদের পরিবারকে দুই লক্ষ টাকা আর্থিক সহায়তা ঘোষণা করা হয়েছে। কেন এই দুর্ঘটনা-তা নিয়ে পুলিশ তদন্ত শুরু করেছে।
স্থানীয় মানুষের বক্তব্য অনুযায়ী ঘন কুয়াশা, গাড়ির অত্যধিক গতি, চালকের মত্ত অবস্থা এগুলো দুর্ঘটনার কারণ হতে পারে রাত বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে শীত বাড়ছে। স্বচক্ষে দুর্ঘটনা কেউ না দেখলেও ঘটনা ঘটে যাওয়ার পর অনেকেই বাইরে বেরিয়ে আসেন। এবং দেখেন গাড়ির মধ্যে জড়াজড়ি করে পড়ে আছে মৃতদেহগুলি। একটি দেহ থেকে আরেকটি দেহ টেনে হিঁচড়ে আলাদা করতে হয়। প্রথমে পুলিশ এসে হতচকিত হয়ে পড়ে।
পরে ধীরে ধীরে উদ্ধার কার্য শুরু হয়। মর্মান্তিক পথ দুর্ঘটনার শোক প্রকাশ করেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ, রাজ্যপাল জগদীশ ধনকড়, মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। প্রধানমন্ত্রী ট্যুইট বার্তায় লেখেন, ‘নদিয়ায় পথদুর্ঘটনায় যারা প্রাণ হারালেন, তাদের জন্য অত্যন্ত ব্যথিত। সমবেদনা মৃতদের পরিবারের প্রতি। আহতদের দ্রুত সুস্থতা কামনা করি।
‘মুখ্যমন্ত্রী ট্যুইট করেন, ‘মৃতদের প্রতি গভীর সমবেদনা। আহতদের দ্রুত আরোগ্য কামনা করি। রাজ্য সরকার সকলের পাশে আছে। প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে প্রশাসনের তরফে।’ রাজ্যপাল সমবেদনা জানিয়ে লেখেন, পথ নিরাপত্তা নিয়ে ভাবা দরকার। রবিবার সন্ধ্যে গড়িয়ে রাত হয় ময়নাতদন্ত শেষ হতে।
নদিয়ার ফুলবাড়িতে পথদুর্ঘটনায় নিহতদের পরিজনদের সবরকম সাহায্যের আশ্বাস প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এবং মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের। শোকজ্ঞাপন করলেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। নিহতদের পরিবারের প্রতি শোকজ্ঞাপন করে এদিন টুইট করেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। আহতদের দ্রুত আরোগ্য কামনা করেন তিনি। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
তিনি লেখেন, নদিয়ার দুর্ঘটনায় প্রাণহানির ঘটনা হৃদয়বিদারক। নিহতদের পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানাই। এই কঠিন পরিস্থিতি সামলে ওঠার ক্ষমতা দিন ঈশ্বর। আহতদের দ্রুত সুস্থতা কামনা করি। রাজ্য সরকার নিহতদের পরিজন এবং আহতদের পাশে আছে। তাঁদের সবরকম সাহায্য করা হবে। দুর্ঘটনায় নিহতদের পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানিয়েছেন রাজ্যপাল জগদীপ ধনকড়। পাশাপাশি পথ নিরাপত্তা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন তিনি।
কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ ঘটনায় দুঃখপ্রকাশ করে তাঁর টুইট, পশ্চিমবঙ্গের নদিয়া জেলায় ঘটে যাওয়া পথ দুর্ঘটনা অত্যন্ত দুঃখজনক। এই দুর্ঘটনায় প্রাণ হারানো মানুষদের প্রতি আমার সমবেদনা রইল। ঈশ্বর ওনাদের এই কঠিন পরিস্থিতিতে সহায় হোন। আহতদের দ্রুত আরোগ্য কামনা করছি।