বিজেপিতে নেতার অভাব ক্রমশ প্রকট হয়ে উঠেছে। বিধানসভা নির্বাচনে তৃণমূল থেকে আসা অনেকেই বিজেপিতে টিকিট পেয়ে বিধানসভা নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিলেন। বিজেপি বিধানসভা নির্বাচনে আশানুরূপ ফল করতে পারেনি। গত বিধানসভা ভোটের চেয়ে এক লাফে এবার অনেক আসন বাড়লেও, হতাশ হতে হয়েছে বঙ্গ বিজেপিকে।
বার বার শুনতে হয়েছে বিজেপিতে নেতা নেই। অন্য দল থেকে আসা নেতাদেরকেই প্রার্থী করেছে বিজেপি। পুরভোটেও কি তেমন হতে চলেছে? সময়ই এর উত্তর দেবে। তবে, তৃণমুল থেকে আসা দীনেশ ত্রিবেদী ও রথীন চক্রবর্তীকে মাথায় রেখে পুরভোটে লড়ার প্রস্তুতি শুরু করে দিল পদ্মশিবির। কলকাতা ও হাওড়া পুরভোেট পরিচালনার কমিটি ঘোষণা করল বিজেপি।
বুধবার জানানো হয়েছে, কলকাতার কমিটির মাথায় থাকবেন প্রাক্তন তৃণমূল সাংসদ তথা প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী দীনেশ ত্রিবেদী। আর হাওড়ায় প্রধান দায়িত্বে তৃণমূলের প্রাক্তন মেয়র রথীন চক্রবর্তী। তৃণমূল থেকে যাঁরা বিজেপিতে এসেছেন, তাঁদের যাতে কমিটির মাথায় না বসানো হয়, তা নিয়ে দলের মধ্যে ক্ষোভ-বিক্ষোভ তৈরি হয়েছিল।
কিন্তু শেষ পর্যন্ত বিজেপি যে কমিটি ঘোষণা করেছে, তাতে এটা স্পষ্ট যে, ‘আদি’ গোষ্ঠীর নেতা-কর্মীদের আপত্তি খুব একটা কর্ণপাত করতে চাইছেন না গেরুয়া শিবিরের শীর্ষ নেতারা। গত ৯ নভেম্বর এই দুই পুর এলাকায় ভোটের প্রচার ও পরিচালনার দায়িত্বে কারা থাকবেন, তা নিয়ে বৈঠক হয় গেরুয়া শিবিরের।
সেই বৈঠকে হাজির ছিলেন রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার ও বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। পরের দিনই হাওড়ায় বিদ্রোহ ঘোষণা করেন দলের জেলা সভাপতি সুরজিৎ সাহা। তিনি বৈঠকের আলোচনা প্রকাশ্যে নিয়ে এসে সরাসরি শুভেন্দুকে আক্রমণ করেন।
প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই সুরজিৎকে বহিষ্কার করে বিজেপি। এরপরে আরও কোনও বিতর্ক যাতে না তৈরি হয়, তা এড়াতে হাওড়া ও কলকাতার কমিটি ঘোষণা স্থগিত রেখেছিল বিজেপি। বুধবার বিকেলে তা প্রকাশ্যে এল। কলকাতার কমিটিতে দীনেশের চারজন সহকারী থাকছেন। তারা হলেন তুষারকান্তি ঘোষ, রুদ্রনীল ঘোষ, বিজয় ওঝা এবং বৈশালী ডালমিয়া।
প্রসঙ্গত, এঁদের মধ্যে তুষারকান্তিই একমাত্র বিজেপির পুরনো নেতা। কলকাতায় পর্যবেক্ষকের দায়িত্বে থাকবেন বারাকপুরের সাংসদ অর্জুন সিংহ, রাজ্যের সাধারণ সম্পাদক তথা পুরুলিয়ার সাংসদ জ্যোতির্ময় মাহাত এবং রাজ্যের সহসভাপতি রাজু বন্দ্যোপাধ্যায়।
হাওড়ার কমিটিতে রথীনের সহকারী দু’জন। মনোজ পাণ্ডে এবং সুপ্রীতি চট্টোপাধ্যায়। দু’জনেই বিজেপিতে নতুন। মনোজ কংগ্রেস ছেড়ে এবং সুপ্রীতি তৃণমূল ছেড়ে বিজেপিতে আসেন। ওই কমিটিতে তৃণমূল ছেড়ে বিজেপিতে যোগ দেওয়া জটু লাহিড়ী, বাণী সিংহ রায়ও সদস্য হিসেবে জায়গা পেয়েছেন।
এই কমিটির সঙ্গে রাজ্য নেতাদের যোগাযোগের মাধ্যম হিসেবে রাখা হয়েছে সুরজিৎকে সরানোর পরে হাওড়া সদরের আহ্বায়কের দায়িত্ব পাওয়া মণিমোহন ভট্টাচার্যকে। আগামীর কথা ভেবে, বিজেপির এই কৌশল পুরভোটে কতটা কার্যকরী হয়, এখন সেটাই দেখার।