তৃতীয় দফায় একাধিক চমক দিয়ে মন্ত্রিসভা গড়েছিলেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তরুণদের উপর ভরসা রেখে একাধিক দপ্তরের প্রতিমন্ত্রীর পদে বসানো হয় তাঁদের। এবার তাঁর মন্ত্রিসভা হাঁটছে বড়সড় রদবদলের পথে। ফের একাধিক নতুন মুখ আসতে চলেছে।
মুখ্যমন্ত্রী নিজের হাতে রাখতে পারেন অর্থদপ্তর। এই দপ্তরের প্রতিমন্ত্রী হওয়ার সম্ভাবনা চন্দ্রিমা ভট্টাচার্যর। প্রাক্তন অর্থমন্ত্রী অমিত মিত্র এই দপ্তরের উপদেষ্টা হতে চলেছেন। বিভিন্ন দপ্তরের দায়িত্বেও রদবদল ঘটছে।
দিনহাটা বিধানসভা কেন্দ্র থেকে উপনির্বাচনে রেকর্ড ভোটে জিতে আসা উদয়ন গুহ, শান্তিপুরের তরুণ বিধায়ক ব্রজকিশোর গোস্বামীর ঠাঁই হতে পারে নতুন মন্ত্রিসভায়। মুখ্যমন্ত্রিত্বের পাশাপাশি মমতা স্বয়ং অর্থমন্ত্রীর দায়িত্ব নিলে, তা নিঃসন্দেহে তাৎপর্যপূর্ণ ঘটনা।
গত মে মাসে রাজ্যে নতুন সরকার গঠনের পর একাধিক কারণে ৫ টি বিধানসভা কেন্দ্রে উপনির্বাচন হয়েছে। প্রতিটিতে বিপুল ভোটে জিতেছেন তৃণমূল প্রার্থীরা। তার মধ্যে রেকর্ড ভোটে দিনহাটা থেকে জিতে এসেছেন প্রাক্তন বিধায়ক উদয়ন গুহ। ১ লক্ষ ৬১ হাজারের বেশি ভোটে তিনি হারিয়েছেন বিজেপি প্রার্থীকে।
অথচ ৬ মাস আগে এই কেন্দ্রেই তিনি পরাজিত হয়েছিলেন বিজেপি সাংসদ নিশীথ প্রামাণিকের কাছে। নিশীথ বিধায়ক পদ গ্রহণ না করায় উপনির্বাচন হয় এখানে শান্তিপুরেও একই অবস্থা। বিজেপি সাংসদ জগন্নাথ সরকার বিধানসভা ভোটে জিতেও বিধায়ক পদে শপথ নেননি।
এই কেন্দ্রে তাই উপনির্বাচন হয় এবং তরুণ তৃণমূল প্রার্থী ব্রজকিশোর গোস্বামী জয়ী হন। দিনহাটা ও শান্তিপুর ২ কেন্দ্র বিজেপির হাত থেকে ছিনিয়ে নেওয়ার পুরস্কার হিসেবে দুই বিধায়ককেই মন্ত্রিসভায় আনতে পারেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
সূত্রের খবর, দিনহাটার উদয়ন ওহ পেতে পারেন উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন দপ্তর। এতদিন এই দপ্তর নিজের হাতেই রেখেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। মন্ত্রিসভায় ব্রজকিশোর গোস্বামীর অন্তর্ভুক্তি নিয়ে আলোচনা চলছে। সদ্যপ্রয়াত পঞ্চায়েতমন্ত্রী সুব্রত মুখোপাধ্যায়ের দপ্তরের অতিরিক্ত দায়িত্ব দেওয়া হতে পারে রাজ্যের কৃষিমন্ত্রী শোভনদেব চট্টোপাধ্যায়কে।
ফিরহাদ হাকিম ও জ্যোতিপ্রিয় মল্লিককে আরও একটি বা দু’টি দপ্তরের বাড়তি দায়িত্ব দেওয়ার সম্ভাবনা। ফিরহাদ এই মুহূর্তে রাজ্যের পরিবহণ মন্ত্রী, বনদপ্তরের দায়িত্বে জ্যোতিপ্রিয়। বর্তমান পুর ও নগরোয়ন্নন মন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য হতে পারেন অর্থ প্রতিমন্ত্রী।
অর্থাৎ নিজের ডেপুটি হিসেবে চন্দ্রিমাকেই রাখতে চলেছেন মমতা। প্রাক্তন অর্থমন্ত্রী অমিত মিত্রকে এই দপ্তরের উপদেষ্টার দায়িত্ব দিতে চলেছেন তিনি। এটাই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সম্ভাব্য নয়া মন্ত্রিসভা। অর্থমন্ত্রী অমিত মিত্রর মেয়াদ শেষ আগামিকাল ৯ নভেম্বর।
কারণ তিনি মন্ত্রী পদে শপথ নিলেও বিধায়ক হননি। তাই তাঁকে এই পদ ছাড়তে হবে। মঙ্গলবারই তাঁর ছ’মাসের মেয়াদ শেষ হচ্ছে। তার উপর সদ্য প্রয়াত হয়েছেন পঞ্চায়েত সহ তিন দফতরের দায়িত্বে থাকা বর্ষীয়ান সুব্রত মুখোপাধ্যায়। তাই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় মন্ত্রিসভায় রদবদল হতে চলেছে।
কে কোন দফতরের দায়িত্ব পাবেন কোনও নতুন মুখকে মমতা ক্যাবিনেটে নেবেন কি না তা নিয়ে ইতিমধ্যেই জল্পনা তৈরি হয়েছে। মনে করা হচ্ছে, মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নিজের হাতেই রাখবেন অর্থমন্ত্রক। তবে অর্থ দফতরের প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব কাউকে দেবেন মুখ্যমন্ত্রী।
এ ব্যাপারে চন্দ্রিমা ভট্টাচার্যের নাম শোনা যাচ্ছে নবান্নের অলিন্দে। সেক্ষেত্রে চন্দ্রিমার হাতে থাকা পুর ও নগ্রোয়ন প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব অন্য কাউকে দিতে পারেন মুখ্যমন্ত্রী। মন্ত্রী হতে পারেন জাকির হোসেনও। সুব্রত মুখার্জীর হাতে ছিল পঞ্চায়েত দফতর।
সেইসসঙ্গে স্বনির্ভর গোষ্ঠীর দায়িত্বও সামলাচ্ছিলেন। সাধন পাণ্ডে অসুস্থ হওয়ার পর ক্রেতা সুরক্ষার ভারও সুব্রতবাবুর কাঁধে দিয়েছিলেন মমতা। এখন তাঁর এই দফতরগুলি মুখ্যমন্ত্রী কাদের মধ্যে বণ্টন করেন বা নতুন কাউকে দায়িত্ব দেন কি না সেটাই দেখার।
পঞ্চায়েত দফতরের দায়িত্ব দেওয়া হতে পারে সবংয়ের বিধায়ক মানস ভূঁইয়া বা শোভনদেব চট্টোপাধ্যায় কে। মন্ত্রিসভায় নতুন মুখ হিসেবে উদয়ন ওহর নাম চর্চায় রয়েছে। সদ্য সমাপ্ত উপনির্বাচনে দিনহাটা থেকে এক লক্ষ ৬৩ হাজার পাঁচ ভোটে জেতা উদয়ন গুহ জিতেছেন।
এর আগে উদয়ন কখনও মন্ত্রিত্ব করেননি। উদয়নকে মন্ত্রী হিসেবে নেওয়া হতে পারে এই জল্পনার পিছনে আরও একটি যুক্তি রয়েছে। তাঁদের বক্তব্য, উদয়নকে ক্যাবিনেটে নিলে উত্তরবঙ্গের প্রতিনিধিত্বও বাড়বে।