রবিবার ত্রিপুরার আগরতলায় তৃণমূলের সভায় সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় এর হাত ধরে প্রত্যাবর্তন ঘটলো ‘অনুতপ্ত’ রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়ের। এদিন মঞ্চে দলত্যাগ করতে অভিষেক আট ঘন্টা বুঝিয়ে ছিলেন তাও বলেন রাজীব।
এদিন তৃণমূলে যোগ দিয়ে প্রথম থেকেই নিজের কৃতকর্মের জন্য অনুতাপ করেন প্রাক্তন বনমন্ত্রী। বলেন, ‘মমতার উন্নয়নের মডেলেই নির্ভর করতে হয় বিজেপি শাসিত রাজ্যগুলিকে। বিজেপিকে তুলোধনা করেন তিনি। ত্রিপুরায় গণতন্ত্র বিপন্ন, বেল ইঞ্জিন কেন, সিঙ্গল ইঞ্জিনও চলছে না, ত্রিপুরায়’, বলেন রাজীব।
রাজীব এদিন আরও ফাঁস করেন, দু-তিন বছর আগেই ত্রিপুরায় সংগঠন দৃঢ় করার লক্ষ্য নিয়েছিলেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। আগরতলার জনগণের উদ্দেশে তিনি বলেন, যদি উন্নয়ন করতে হয়, মানুষের সরকার মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উপর ভরসা রাখুন। বিজেপিকে বিশ্বাস করবেন না। আমি যে ভুল করেছি তা কেউ করবেন না।
আগামী দিনে কেউ যেন বিজেপিকে বিশ্বাস না করে তাদের দলে না যায়। তৃণমূলে আবার সুযোগ পেয়ে ধন্যবাদ জানিয়েছেন রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়। আওয়াজ তুলেছেন, ‘অভিষেক আসছে, বিপ্লব কাঁপছে’। নয় মাস পর বিজেপি ছেড়ে ফের তৃণমূলে যোগ দিলেন রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়।
ডোমজুরের প্রাক্তন বিধায়ক একুশের বিধানসভা নির্বাচনের আগে দল ছেড়ে গেরুয়া শিবিরে গিয়েছিলেন। তারপর রবিবার ত্রিপুরায় অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের সভা মঞ্চ থেকে তৃণমূলে ফিরলেন তিনি। ৯ মাস পর তৃণমুলে ফিরেই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে প্রশংসায় ভরিয়ে দিলেন রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়।
তাঁকে গোটা ভারতের ‘মা’ বলে সম্বোধন করলেন প্রাক্তন বনমন্ত্রী। রবিবার ত্রিপুরার সভায় তৃণমূলে যোগদানের পরই বিজেপি যোগের জন্য বারবার ক্ষমা চেয়েছেন রাজীব। জানিয়েছেন, তিনি লজ্জিত। ক্ষোভ উগরে দিয়েছেন বিজেপির বিরুদ্ধে।
কটাক্ষ করে বলেছেন, বিজেপি কোনওদিনই মানুষের জন্য ভাবেনি। এরপরই তিনি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ভূয়সী প্রশংসা করেন। বলেন, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় মানুষের জন্যই কাজ করেন। ঠিক মায়ের মতো করে আগলে রাখেন রাজ্যবাসীকে।
রাজীবের কথায়, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় দেবী, গোটা ভারতের মা। এদিন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়কেও ‘যুব আইকন’ বলে সম্বোধন করেন রাজীব। বলেন, অভিষেকই একদিন নেতৃত্ব দেবে ভারতে যোগদানের পর এদিন রাজীব বলেছেন, অভিমানে ভুল করেছিলাম। রাগের বশে সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম। সেই সময় অভিষেক আমাকে বোঝানোর চেষ্টা করেছিলেন।
কিন্তু আমি শুনিনি। আমাকে ভুল বোঝানো হয়েছিল। যেদিন বুঝতে পেরেছি, তখন অনেকটা দেরি হয়ে গিয়েছে। আজকে আমি লজ্জিত, অনুতপ্ত।
উল্লেখ্য, বিধানসভা নির্বাচনের পর থেকেই রাজীব রাজনৈতিক অবস্থান নিয়ে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছিল। কারণ, একাধিকবার প্রকাশ্যে বিজেপির বিরোধিতা করতে দেখা গিয়েছিল তাকে। কখনও আবার সুর চড়িয়েছিলেন তৃণমূলের স্বপক্ষে। সব জল্পনা উড়িয়ে রবিবার ত্রিপুরার আগরতলায় রবীন্দ্রভবনের সভামঞ্চে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের হাত ধরে তৃণমুলে ফিরলেন প্রাক্তন মন্ত্রী।
অভিমানে, জেদে তৃণমূল ছেড়েভুল করেছিলেন, এ জন্য অনুতপ্তও। রবিবার ত্রিপুরায় তৃণমূলে যোগ দিয়ে এমন অনুতাপের কথা বললেন রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়। আগরতলায় তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের জনসভায় কুণাল ঘোষ ও সুস্মিতা দেবের উপস্থিতিতে যোগদান করেন তিনি।
তার সঙ্গে বিজেপি বিধায়ক আশিস দাসও তৃণমূলে যোগ দেন প্রাক্তন মন্ত্রী রাজীব তৃণমুলে যোগ দিয়েই ধন্যবাদ দেন মমতা ও অভিষেককে।
তিনি বলেন, “আমাকে ভুল বুঝিয়ে বিজেপি-তে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। আমি ভোটের সময় ওদের সভা থেকেই বলেছিলাম, ব্যক্তিগত আক্রমণ কখনওই মানুষ ভাল ভাবে মেনে নেবে না তাই হয়েছে, বাংলায় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যে ঠিক, তা বাংলার মানুষ তা প্রমাণ করে দিয়েছেন। আর আমি এবং আমরা যে ভুল ছিলাম, তাও প্রমাণ হয়ে গিয়েছে।”
রাজীব বলেন, “এক ভয় কিসের? ভয় কখন হয়, যখন গদি টলমল হয়। আজ গদি টলমল হয়ে গিয়েছে। তাই এত ভয় পাচ্ছেন। বাইরে কতলোক ঢুকতে দেয়নি। গাড়ি দিচ্ছে না। ভয় দেখিয়ে আটকে দিচ্ছে। ত্রিপুরায় যাঁরা পরিবর্তন নিয়ে আসবেন তাঁরা হলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়।
আমি অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়কে কৃতজ্ঞতা জানাই।’ রাজীব আরও বলেন, ‘বিজেপি-কে বিশ্বাস করে আমার যেমন বিশ্বাসভঙ্গ হয়েছে, তাই আপনাদেরও বলব বিজেপি-কে বিশ্বাস করবেন না। আর কংগ্রেস ও সিপিএম-কে ভোট দেওয়ার মানে বিজেপি-র হাত শক্ত করা। তাই ওদের আর ভোট দেবেন না।’ ত্রিপুরার আগামী পুরভোটে বিজেপি-কে ধরাশায়ী করে তৃণমূলের জয়ের রাস্তা প্রশস্ত করতে বলেন ডোমজুড়ের প্রাক্তন বিধায়ক।